রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎসগুলো কী কী? বিস্তারিত আলোচনা

আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎসগুলো কী কী? বিস্তারিত আলোচনা নিয়ে আলোচনা করব।

রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎসগুলো কী কী? বিস্তারিত আলোচনা

রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎস

আমরা সবাই জানি, একটি দেশ চালাতে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। রাস্তাঘাট তৈরি করা, স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল চালানো, সরকারি কর্মচারীদের বেতন দেওয়া, দেশের নিরাপত্তা রক্ষা করা – এই সব কিছুর জন্যই অর্থের দরকার। কিন্তু এই টাকাটা আসে কোথা থেকে? এই টাকার মূল যোগানকেই বলা হয় রাজস্ব আয়। সহজ কথায়, সরকার বিভিন্ন উপায়ে জনগণের কাছ থেকে বা বিভিন্ন উৎস থেকে যে অর্থ সংগ্রহ করে, সেটাই হলো রাজস্ব আয়।

রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎসগুলো কী কী

একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি এবং স্থিতিশীলতার জন্য রাজস্ব আয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের আয়ের উৎস যত বেশি এবং স্থিতিশীল হবে, দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো তত সহজে বাস্তবায়ন করা যাবে। এই পোস্টে আমরা সরকারের বা রাষ্ট্রের রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎস গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, যা ৭ম-৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে।

রাজস্ব আয় আসলে কী?

রাজস্ব আয় বলতে বোঝায় একটি নির্দিষ্ট সময়ে (সাধারণত এক বছরে) সরকার বা রাষ্ট্র যে সমস্ত উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করে। এই আয় ব্যবহার করেই সরকার তার যাবতীয় খরচ মেটায়। যেমন ধরুন, আপনার পরিবার চালানোর জন্য আপনার বাবা বা মা চাকরি বা ব্যবসা করে টাকা আয় করেন। সেই টাকা দিয়েই আপনাদের পড়াশোনা, খাওয়া-দাওয়া, পোশাক এবং অন্যান্য খরচ চলে। ঠিক তেমনি, একটি দেশ চালানোর জন্য সরকারেরও আয়ের প্রয়োজন হয়, আর সেই আয়কেই রাজস্ব আয় বলে।

রাজস্ব আয়কে প্রধানত দুটি বড় ভাগে ভাগ করা যায়:

  1. কর রাজস্ব (Tax Revenue): যা বিভিন্ন ধরনের কর বা ট্যাক্স থেকে আসে।
  2. কর বহির্ভূত রাজস্ব (Non-Tax Revenue): যা কর ছাড়া অন্যান্য উৎস থেকে আসে।

এখন আমরা এই দুটি ভাগের বিভিন্ন উৎস নিয়ে বিস্তারিত জানব।

কর রাজস্ব: আয়ের প্রধান ইঞ্জিন

সরকারের রাজস্ব আয়ের সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশ আসে কর বা ট্যাক্স থেকে। আমরা যখন কোনো জিনিস কিনি, বা যখন আমরা আয় করি, তখন তার একটি নির্দিষ্ট অংশ সরকারকে কর হিসেবে দিতে হয়। এই করগুলোই সরকারের আয়ের প্রধান চালিকাশক্তি। কর রাজস্বকে আবার দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়:

  • প্রত্যক্ষ কর (Direct Tax)
  • পরোক্ষ কর (Indirect Tax)

প্রত্যক্ষ কর: কারা সরাসরি পরিশোধ করে?

প্রত্যক্ষ কর হলো সেই কর যা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরাসরি সরকারকে প্রদান করে। এই করের বোঝা অন্য কারো উপর চাপানো যায় না। যিনি আয় করেন বা যার সম্পত্তি আছে, তাকেই এই কর দিতে হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রধান কয়েকটি প্রত্যক্ষ কর হলো:

আয়কর: ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক আয়ের উপর কর

এটি প্রত্যক্ষ করের সবচেয়ে পরিচিত উদাহরণ। ব্যক্তি যখন চাকরি, ব্যবসা বা অন্য কোনো উৎস থেকে আয় করেন, তখন সেই আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ সরকারকে কর হিসেবে দিতে হয়। একে ব্যক্তিগত আয়কর বলা হয়। একইভাবে, কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান যখন লাভ করে, তখন তাদের লাভের উপর যে কর দিতে হয়, তাকে কর্পোরেট আয়কর বলা হয়। যাদের আয় একটি নির্দিষ্ট সীমার বেশি, তাদেরকেই আয়কর দিতে হয়। সরকার প্রতি বছর বাজেটে এই সীমা নির্ধারণ করে দেয়। আয়কর সরকারের রাজস্ব সংগ্রহের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

সম্পত্তি কর ও অন্যান্য প্রত্যক্ষ কর

এছাড়াও কিছু অন্যান্য প্রত্যক্ষ কর রয়েছে, যেমন - ভূমি রাজস্ব (জমির খাজনা), উত্তরাধিকার কর (যদিও বাংলাদেশে এটি বর্তমানে তেমন প্রচলিত নয়), সম্পদ কর ইত্যাদি। তবে আয়করই হলো প্রত্যক্ষ করের মধ্যে প্রধান।

পরোক্ষ কর: যা আমরা কলাতেই দিই

পরোক্ষ কর হলো সেই কর যা সরাসরি সরকারকে দেওয়া হয় না, কিন্তু কোনো পণ্য বা সেবা কেনার সময় তার দামের সাথে যুক্ত থাকে। বিক্রেতা বা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এই কর ক্রেতার কাছ থেকে সংগ্রহ করে সরকারকে জমা দেয়। অর্থাৎ, এই করের বোঝা শেষ পর্যন্ত ভোগকারীর উপরই বর্তায়। আমরা প্রতিদিন কলাতেই অনেক পরোক্ষ কর দিয়ে থাকি। প্রধান কয়েকটি পরোক্ষ কর হলো:

মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট): কেনাকাটায় দৈনন্দিন কর

এটি পরোক্ষ করের সবচেয়ে বড় উদাহরণ এবং সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস। আমরা যখন দোকান থেকে কোনো পণ্য কিনি (যেমন: সাবান, বিস্কুট, পোশাক) বা কোনো সেবা গ্রহণ করি (যেমন: রেস্টুরেন্টে খাওয়া, মোবাইল ফোনে কথা বলা), তখন পণ্যের দামের সাথে একটি অতিরিক্ত অংশ যোগ করা থাকে, যা হলো ভ্যাট (VAT - Value Added Tax) বা মূসক (মূল্য সংযোজন কর)। এই ভ্যাট বিক্রেতা সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট সময় পর পর সরকারকে জমা দেন। প্রায় সব ধরনের পণ্য ও সেবার উপরই ভ্যাট প্রযোজ্য হয়, তাই এর মাধ্যমে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করে।

আমদানি শুল্ক: বিদেশি পণ্যের উপর কর

যখন কোনো পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়, তখন সেই পণ্যের উপর সরকার এক ধরনের কর আরোপ করে, যাকে আমদানি শুল্ক (Import Duty) বা কাস্টমস ডিউটি বলা হয়। এই শুল্ক আদায়ের প্রধান উদ্দেশ্য হলো দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া এবং বিদেশি পণ্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা। পাশাপাশি, এটি সরকারের রাজস্ব আয়েরও একটি বড় উৎস। যেমন: বিদেশি গাড়ি, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, প্রসাধনী ইত্যাদির উপর উচ্চ হারে আমদানি শুল্ক থাকে।

আবগারি শুল্ক: নির্দিষ্ট দেশি পণ্যের উপর কর

দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত এবং ব্যবহৃত কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের উপর যে কর আরোপ করা হয়, তাকে আবগারি শুল্ক (Excise Duty) বলে। সাধারণত তামাকজাত পণ্য (যেমন সিগারেট, বিড়ি), সিমেন্ট, সিরামিকস বা এ ধরনের কিছু পণ্যের উপর এই শুল্ক আরোপ করা হয়। এটিও সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব উৎস।

সম্পূরক শুল্ক: বিলাসবহুল বা অপ্রয়োজনীয় পণ্যের উপর অতিরিক্ত কর

কিছু পণ্য আছে যেগুলোকে বিলাসবহুল, সামাজিকভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত বা অত্যাবশ্যকীয় নয় বলে মনে করা হয় (যেমন: দামি গাড়ি, সিগারেট, কোমল পানীয়)। এইসব পণ্যের উপর সাধারণ ভ্যাট বা আমদানি শুল্কের পাশাপাশি অতিরিক্ত হারে আরও একটি কর আরোপ করা হয়, যাকে সম্পূরক শুল্ক (Supplementary Duty) বলে। এর উদ্দেশ্য হলো এসব পণ্যের ভোগ কমানো এবং একই সাথে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করা।

রাজস্ব আয়ের প্রতীকী ছবি

সরকারের রাজস্ব আয় দেশের উন্নয়নে ব্যবহৃত হয়

কর বহির্ভূত রাজস্ব: কর ছাড়াও সরকারের আয়

সরকারের আয়ের সবটাই কিন্তু কর থেকে আসে না। করের বাইরেও সরকারের আয়ের বেশ কিছু উৎস রয়েছে, যেগুলোকে কর বহির্ভূত রাজস্ব (Non-Tax Revenue) বলা হয়। যদিও এটি কর রাজস্বের তুলনায় সাধারণত কম, তবুও এটি সরকারের মোট আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর প্রধান উৎসগুলো হলো:

ফি এবং সেবামূল্য: সরকারি সেবার জন্য প্রদান

সরকার বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করে এবং তার জন্য জনগণের কাছ থেকে ফি বা চার্জ আদায় করে। যেমন:

  • পাসপোর্ট তৈরি বা নবায়নের ফি।
  • গাড়ির রেজিস্ট্রেশন বা ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি।
  • জমির নামজারি বা দলিলের নিবন্ধন ফি।
  • সরকারি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি।
  • সরকারি হাসপাতালের টিকিট বা পরীক্ষার ফি।
  • ট্রেড লাইসেন্স ফি।
  • বিভিন্ন পরীক্ষার আবেদন ফি।

এইসব ফি এবং সেবামূল্য সরকারের কর বহির্ভূত আয়ের একটি অংশ।

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের মুনাফা: সরকারি ব্যবসার লাভ

সরকারের মালিকানায় বেশ কিছু বাণিজ্যিক ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান রয়েছে (যেমন: বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি, গ্যাস কোম্পানি, ব্যাংক, বীমা, টেলিফোন সংস্থা ইত্যাদি)। এই প্রতিষ্ঠানগুলো যখন লাভ করে, তখন সেই লাভের একটি অংশ বা পুরোটাই সরকারি কোষাগারে জমা হয়। এটিও কর বহির্ভূত রাজস্বের একটি উৎস। যেমন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি), বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বা সোনালী ব্যাংকের মুনাফা সরকারের আয়ের অংশ হতে পারে।

সুদ, লভ্যাংশ ও জরিমানা: অন্যান্য উৎস

সরকার বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা দেশকে ঋণ দিয়ে থাকে। সেই ঋণের বিপরীতে যে সুদ (Interest) পায়, তা সরকারের আয়। আবার, সরকার বিভিন্ন কোম্পানিতে শেয়ার বিনিয়োগ করতে পারে, সেখান থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ (Dividend)ও সরকারের আয়।

এছাড়াও, কেউ যদি দেশের আইন ভঙ্গ করে, যেমন - ট্রাফিক আইন অমান্য করা, দেরিতে কর প্রদান করা বা অন্য কোনো অপরাধ করা, তখন সরকার তার উপর জরিমানা (Fines/Penalties) আরোপ করে। এই জরিমানার অর্থও সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্তর্ভুক্ত।

অনুদান ও অন্যান্য আয়

কখনো কখনো বিদেশি রাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য অনুদান (Grants) পায়। যদিও এটি নিয়মিত আয় নয়, তবে এটিও সরকারের মোট প্রাপ্তির একটি অংশ। এছাড়া, সরকারি সম্পত্তি ভাড়া দেওয়া বা বিক্রি করা থেকেও কিছু আয় হতে পারে।

রাজস্ব আয় কেন গুরুত্বপূর্ণ?

রাজস্ব আয় একটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর কারণগুলো হলো:

  • সরকারি ব্যয় নির্বাহ: দেশের প্রশাসনিক কাজ চালানো, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, বিচার ব্যবস্থা পরিচালনা ইত্যাদি যাবতীয় খরচ মেটানো হয় এই রাজস্ব আয় থেকে।
  • উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন: রাস্তাঘাট, সেতু, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ সহ দেশের সকল উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য অর্থের যোগান দেয় রাজস্ব আয়।
  • জনকল্যাণমূলক কাজ: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা (যেমন: বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা), দারিদ্র্য বিমোচন ইত্যাদি জনকল্যাণমূলক কর্মসূচীগুলো পরিচালনা করার জন্য রাজস্ব আয় অপরিহার্য।
  • অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা: একটি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও সরকারের রাজস্ব নীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • বৈদেশিক ঋণের উপর নির্ভরতা হ্রাস: পর্যাপ্ত রাজস্ব আয় থাকলে সরকারকে বৈদেশিক ঋণ বা সাহায্যের উপর কম নির্ভর করতে হয়, যা দেশের আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি করে।

সরকার এই অর্থ কোথায় ব্যয় করে?

সরকার যে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করে, তা বিভিন্ন খাতে ব্যয় করা হয়। বাজেটের মাধ্যমে সরকার এই ব্যয়ের পরিকল্পনা করে। প্রধান ব্যয়ের খাতগুলো হলো:

  • সরকারি সেবা: জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, পুলিশ, সামরিক বাহিনী পরিচালনা।
  • শিক্ষা: স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা, শিক্ষকদের বেতন, বিনামূল্যে বই বিতরণ, উপবৃত্তি প্রদান।
  • স্বাস্থ্য: হাসপাতাল পরিচালনা, ডাক্তার-নার্সদের বেতন, ঔষধপত্র ক্রয়, টিকাদান কর্মসূচী।
  • অবকাঠামো: রাস্তা, সেতু, রেলপথ, বন্দর, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ও মেরামত।
  • সামাজিক নিরাপত্তা: বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, খাদ্য সহায়তা ইত্যাদি।
  • কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন: সার, বীজ ইত্যাদিতে ভর্তুকি, সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন।
  • ঋণ পরিশোধ: দেশি-বিদেশি ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধ।

রাজস্ব সংগ্রহকারী সংস্থা: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)

বাংলাদেশে রাজস্ব সংগ্রহের প্রধান দায়িত্ব পালন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (National Board of Revenue - NBR)। এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সংস্থা। এনবিআর মূলত আয়কর, ভ্যাট, আমদানি ও আবগারি শুল্ক আদায়ের কাজ করে থাকে। কর বহির্ভূত রাজস্বগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা দপ্তর সংগ্রহ করে। এনবিআর দেশের কর নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

উপসংহার: দেশের উন্নয়নে রাজস্ব আয়ের ভূমিকা

একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন এবং অগ্রগতির জন্য রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎস গুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। কর রাজস্ব (আয়কর, ভ্যাট, শুল্ক) এবং কর বহির্ভূত রাজস্ব (ফি, মুনাফা, সুদ) উভয়ই দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে সচল রাখতে সাহায্য করে। নাগরিক হিসেবে আমাদেরও উচিত সময়মতো কর প্রদান করে দেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণ করা। কারণ, আমাদের দেওয়া করের টাকাতেই গড়ে ওঠে দেশের ভবিষ্যৎ। সরকারের উচিত রাজস্ব সংগ্রহের প্রক্রিয়াকে আরও সহজ, স্বচ্ছ এবং হয়রানিমুক্ত করা, যাতে মানুষ কর দিতে উৎসাহিত হয় এবং দেশের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পায়।

রাজস্ব আয়ের প্রধান সাধারণ জিজ্ঞাস্য (FAQs)

১. সরকারের রাজস্ব আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস কোনটি?

সাধারণত, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পরোক্ষ কর, বিশেষ করে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং আমদানি শুল্ক রাজস্ব আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস হয়ে থাকে। তবে আয়করও (ব্যক্তিগত ও কর্পোরেট) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্রমবর্ধমান উৎস। নির্দিষ্ট বছরে কোনটি সবচেয়ে বড় উৎস, তা বাজেটের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।

২. প্রত্যক্ষ কর ও পরোক্ষ করের মধ্যে মূল পার্থক্য কী?

প্রত্যক্ষ কর: যে কর ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরাসরি সরকারকে প্রদান করে এবং এর বোঝা অন্যের উপর চাপানো যায় না। যেমন: আয়কর।
পরোক্ষ কর: যে কর পণ্যের দাম বা সেবার মূল্যের সাথে যুক্ত থাকে এবং最终 ব্যবহারকারী বা ভোক্তা বহন করে, যদিও বিক্রেতা বা সেবাদাতা এটি সংগ্রহ করে সরকারকে জমা দেয়। যেমন: ভ্যাট, আমদানি শুল্ক।

৩. কর বহির্ভূত রাজস্ব কী?

কর বহির্ভূত রাজস্ব হলো সরকারের সেইসব আয় যা বিভিন্ন ধরনের কর (যেমন আয়কর, ভ্যাট, শুল্ক) ছাড়া অন্যান্য উৎস থেকে আসে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সরকারি সেবা প্রদানের জন্য নেওয়া ফি, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের মুনাফা, সরকার প্রদত্ত ঋণের সুদ, জরিমানা ইত্যাদি।

৪. নাগরিকদের কেন কর দেওয়া উচিত?

নাগরিকদের কর দেওয়া উচিত কারণ এই করের অর্থ দিয়েই সরকার দেশের উন্নয়নমূলক কাজ (রাস্তা, সেতু, হাসপাতাল নির্মাণ), শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা প্রদান, দেশের নিরাপত্তা রক্ষা এবং অন্যান্য জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। সময়মতো কর প্রদান করা একজন সুনাগরিকের দায়িত্ব এবং এটি দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে।

৫. বাংলাদেশে রাজস্ব সংগ্রহের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান সংস্থা কোনটি?

বাংলাদেশে রাজস্ব সংগ্রহের প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা হলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (National Board of Revenue - NBR)। এটি আয়কর, ভ্যাট, আমদানি ও আবগারি শুল্ক ইত্যাদি প্রধান করগুলো সংগ্রহের দায়িত্বে নিয়োজিত।

আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎসগুলো কী কী? বিস্তারিত আলোচনা এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

পরবর্তী পোস্ট পূর্ববর্তী পোস্ট
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url