রবিমার্গ কাকে বলে? সূর্যের আপাত বার্ষিক গতি
আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে রবিমার্গ কাকে বলে? সূর্যের আপাত বার্ষিক গতি নিয়ে আলোচনা করব।
বন্ধুরা, তোমরা কি কখনো খেয়াল করেছ যে সূর্য প্রতিদিন ঠিক একই জায়গা থেকে ওঠে না? কখনো একটু উত্তর দিক ঘেঁষে, আবার কখনো একটু দক্ষিণ দিক ঘেঁষে ওঠে। আবার শীতকালে দিন ছোট আর রাত বড় হয়, গরমকালে ঠিক তার উল্টো। কেন এমন হয়? এর পেছনে রয়েছে এক মজার কারণ, আর সেই কারণের সাথেই জড়িয়ে আছে রবিমার্গ কথাটি। চলো, আজ আমরা সহজ করে জেনে নিই রবিমার্গ কাকে বলে এবং কেন এমনটা ঘটে।
সূর্য কি সত্যিই চলে?
প্রথমেই একটা ভুল ধারণা ভেঙে নেওয়া যাক। আমরা প্রতিদিন সূর্যকে পূর্ব দিকে উঠতে আর পশ্চিমে অস্ত যেতে দেখি। আবার বছরের বিভিন্ন সময়ে আকাশে সূর্যের চলার পথটাও যেন একটু বদলে যায়। এই দেখে মনে হতে পারে সূর্য বুঝি পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে বা নিজে নিজেই নিজের চলার পথ বদলাচ্ছে। কিন্তু আসল ঘটনা হলো, সূর্য মোটামুটি স্থিরই থাকে (অবশ্যই গ্যালাক্সির কেন্দ্রে ঘুরছে, কিন্তু আমাদের আলোচনায় তাকে স্থির ধরা হয়)। আসলে আমাদের পৃথিবীই সূর্যের চারপাশে বনবন করে ঘুরছে, যাকে বলে পরিক্রমণ গতি। আর এই ঘোরার কারণেই আমরা সূর্যকে চলতে দেখি। এটাকে বলা হয় সূর্যের আপাত গতি, অর্থাৎ যা দেখে মনে হচ্ছে ঘটছে, কিন্তু আসলে ঘটছে না।
পৃথিবীর ঘোরাঘুরি: আবর্তন ও পরিক্রমণ
পৃথিবীর দুই ধরনের গতি আছে:
- আবর্তন গতি: পৃথিবী তার নিজের অক্ষ বা মেরুদণ্ডের উপর লাটিমের মতো বনবন করে ঘোরে। এই ঘোরার জন্য সময় লাগে প্রায় ২৪ ঘন্টা, আর এর ফলেই দিন আর রাত হয়।
- পরিক্রমণ গতি: পৃথিবী নিজের অক্ষের উপর ঘুরতে ঘুরতে একটা নির্দিষ্ট পথে (কক্ষপথে) সূর্যের চারদিকেও ঘোরে। পুরো একবার ঘুরে আসতে সময় লাগে প্রায় ৩৬৫ দিন ৬ ঘন্টা। এর ফলেই বছর হয় আর ঋতু পরিবর্তন ঘটে।
আমাদের আজকের আলোচনার মূল বিষয়টা এই পরিক্রমণ গতির সাথেই যুক্ত।
পৃথিবীর হেলে থাকা অক্ষ: আসল কারণ
লাটিম ঘোরার সময় যেমন অনেক সময় একটু কাত হয়ে ঘোরে, ঠিক তেমনি পৃথিবীও সূর্যের চারপাশে ঘোরার সময় একদম সোজা হয়ে ঘোরে না। সে তার অক্ষের উপর কিছুটা হেলে বা কাত হয়ে থাকে। কতটা হেলে থাকে? পৃথিবী তার কক্ষপথের (যে পথে সে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে) সমতলের সাথে প্রায় ৬৬.৫ ডিগ্রি (বা ৬৬ ১/২°) কোণে হেলে থাকে। অন্যভাবে বললে, কক্ষপথের লম্বের সাথে এই কোণটি হয় ২৩.৫ ডিগ্রি (বা ২৩ ১/২°)।
এই সামান্য হেলে থাকাটাই কিন্তু অনেক বড় একটা ব্যাপার! কারণ এই হেলে থাকার ফলেই বছরের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ সূর্যের দিকে একটু বেশি ঝুঁকে পড়ে।

ছবি: পৃথিবীর অক্ষ তার কক্ষপথের সাথে ৬৬.৫° কোণে হেলে আছে।
হেলে থাকার ফলে কী হয়?
পৃথিবী যখন সূর্যের চারপাশে ঘুরছে, তখন তার এই হেলে থাকা অক্ষটা সবসময় একই দিকে নির্দেশ করে থাকে (উত্তর আকাশে ধ্রুবতারার দিকে)। এর ফলে:
- বছরের একটা সময় (গ্রীষ্মকাল): পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ (যে অংশে আমরা থাকি) সূর্যের দিকে বেশি হেলে থাকে। তখন উত্তর গোলার্ধে সূর্যরশ্মি বেশ লম্বভাবে বা সরাসরি পড়ে, দিন বড় হয়, রাত ছোট হয় এবং গরম বেশি অনুভূত হয়। একই সময়ে দক্ষিণ গোলার্ধে ঠিক উল্টো অবস্থা – সেখানে তখন শীতকাল।
- বছরের অন্য একটা সময় (শীতকাল): পৃথিবী ঘুরতে ঘুরতে এমন অবস্থানে আসে যখন উত্তর গোলার্ধ সূর্য থেকে দূরে সরে যায় এবং দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের দিকে বেশি হেলে থাকে। তখন উত্তর গোলার্ধে সূর্যরশ্মি বেশ বাঁকা বা তির্যকভাবে পড়ে, দিন ছোট হয়, রাত বড় হয় এবং ঠান্ডা বেশি লাগে। এটাই আমাদের শীতকাল। একই সময়ে দক্ষিণ গোলার্ধে তখন গ্রীষ্মকাল।
এই ঘটনা থেকেই বোঝা যায়, ঋতু পরিবর্তনের মূল কারণ হলো পৃথিবীর অক্ষের এই হেলে থাকা অবস্থা।
আমাদের ওয়েবসাইটে ঋতু পরিবর্তন নিয়ে আরও জানতে চাইলে এই বিষয়ে সম্পর্কিত পোস্ট খুঁজে দেখতে পারেন। (যদি সম্পর্কিত পোস্ট থাকে, তবে এখানে লিঙ্ক যুক্ত করুন)
সূর্যরশ্মি কোথায় লম্বভাবে পড়ে?
যেহেতু পৃথিবী হেলে আছে, তাই সূর্যরশ্মি সব জায়গায় সমানভাবে পড়ে না।
- কর্কটক্রান্তি রেখা (Tropic of Cancer): এটা উত্তর গোলার্ধের একটা বিশেষ কাল্পনিক রেখা (২৩.৫° উত্তর অক্ষাংশ)। বছরে একবার, প্রায় ২১শে জুন, সূর্যরশ্মি এই রেখার উপর একদম লম্বভাবে বা ৯০° কোণে পড়ে। একে বলে কর্কটসংক্রান্তি বা উত্তরায়নান্ত দিবস। এই দিন উত্তর গোলার্ধে সবচেয়ে বড় দিন ও ছোট রাত হয়।
- মকরক্রান্তি রেখা (Tropic of Capricorn): এটা দক্ষিণ গোলার্ধের একটা বিশেষ কাল্পনিক রেখা (২৩.৫° দক্ষিণ অক্ষাংশ)। বছরে একবার, প্রায় ২২শে ডিসেম্বর, সূর্যরশ্মি এই রেখার উপর একদম লম্বভাবে পড়ে। একে বলে মকরসংক্রান্তি বা দক্ষিণায়নান্ত দিবস। এই দিন দক্ষিণ গোলার্ধে সবচেয়ে বড় দিন ও ছোট রাত হয় (এবং উত্তর গোলার্ধে সবচেয়ে ছোট দিন ও বড় রাত)।
- বিষুবরেখা বা নিরক্ষরেখা (Equator): এটা পৃথিবীর ঠিক মাঝ বরাবর পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত একটি কাল্পনিক রেখা (০° অক্ষাংশ)। বছরে দু'বার, প্রায় ২১শে মার্চ এবং ২৩শে সেপ্টেম্বর, সূর্যরশ্মি এই রেখার উপর লম্বভাবে পড়ে। এই দিনগুলোকে বলে বিষুব (Equinox)। এই দুই দিন পৃথিবীর সর্বত্র দিন ও রাত প্রায় সমান (১২ ঘন্টা করে) হয়। ২১শে মার্চকে বলে মহাবিষুব এবং ২৩শে সেপ্টেম্বরকে বলে জলবিষুব।
তাহলে রবিমার্গ কাকে বলে?
এতক্ষণে আমরা মূল বিষয়টির কাছাকাছি চলে এসেছি। যেহেতু পৃথিবী হেলে থাকার কারণে বছরের বিভিন্ন সময়ে সূর্যরশ্মি কখনো কর্কটক্রান্তি রেখার উপর, কখনো বিষুবরেখার উপর, আবার কখনো মকরক্রান্তি রেখার উপর লম্বভাবে পড়ছে, তাই পৃথিবী থেকে আমাদের কাছে মনে হয় যেন সূর্য নিজেই আকাশে তার অবস্থান বদলাচ্ছে।
মনে হয় যেন, সূর্য বছরের অর্ধেক সময় ধরে বিষুবরেখা থেকে উত্তর দিকে যেতে যেতে কর্কটক্রান্তি রেখা পর্যন্ত যায় (এটাকে বলে উত্তরায়ণ), আবার বছরের বাকি অর্ধেক সময় ধরে দক্ষিণ দিকে যেতে যেতে মকরক্রান্তি রেখা পর্যন্ত যায় (এটাকে বলে দক্ষিণায়ন)।
আকাশে সূর্যের এই যে আপাত বার্ষিক চলাচল – বিষুবরেখা থেকে উত্তরে কর্কটক্রান্তি রেখা (২৩.৫° উত্তর) পর্যন্ত এবং দক্ষিণে মকরক্রান্তি রেখা (২৩.৫° দক্ষিণ) পর্যন্ত – এই পুরো কাল্পনিক পথটাকেই বলা হয় রবিমার্গ (Ecliptic Path)।
সহজ কথায়, রবিমার্গ কাকে বলে?
উত্তর: পৃথিবীর পরিক্রমণ গতি এবং অক্ষের হেলে থাকার কারণে, আকাশে বছরে সূর্যকে যে কাল্পনিক পথে উত্তরে কর্কটক্রান্তি রেখা থেকে দক্ষিণে মকরক্রান্তি রেখার মধ্যে চলাচল করতে দেখা যায়, সেই পথটিকেই রবিমার্গ বলে। আর সূর্যের এই চলাচলকে বলা হয় সূর্যের আপাত বার্ষিক গতি।
ছবি: পৃথিবীর পরিক্রমণের সাথে সাথে সূর্যের আপাত অবস্থান কীভাবে বদলায় (ঋতু পরিবর্তন)।
সূর্যের উত্তরায়ন ও দক্ষিণায়ন
- উত্তরায়ণ (Uttarayan): প্রায় ২২শে ডিসেম্বরের পর থেকে সূর্য ধীরে ধীরে উত্তর দিকে সরতে শুরু করে বলে মনে হয়। অর্থাৎ, মকরক্রান্তি রেখা থেকে বিষুবরেখা পার হয়ে কর্কটক্রান্তি রেখার দিকে সূর্যের আপাত যাত্রা শুরু হয়। এই সময় উত্তর গোলার্ধে দিনের দৈর্ঘ্য বাড়তে থাকে আর রাতের দৈর্ঘ্য কমতে থাকে। প্রায় ২১শে জুন সূর্য কর্কটক্রান্তি রেখায় পৌঁছায়, এটাই উত্তরায়ণের শেষ।
- দক্ষিণায়ন (Dakshinayan): প্রায় ২১শে জুনের পর থেকে সূর্য ধীরে ধীরে দক্ষিণ দিকে সরতে শুরু করে বলে মনে হয়। অর্থাৎ, কর্কটক্রান্তি রেখা থেকে বিষুবরেখা পার হয়ে মকরক্রান্তি রেখার দিকে সূর্যের আপাত যাত্রা শুরু হয়। এই সময় উত্তর গোলার্ধে দিনের দৈর্ঘ্য কমতে থাকে আর রাতের দৈর্ঘ্য বাড়তে থাকে। প্রায় ২২শে ডিসেম্বর সূর্য মকরক্রান্তি রেখায় পৌঁছায়, এটাই দক্ষিণায়নের শেষ।
এই উত্তরায়ন ও দক্ষিণায়ন মিলেই তৈরি হয় সূর্যের পূর্ণ আপাত বার্ষিক গতি বা রবিমার্গ বরাবর চলাচল।
রবিমার্গ ও রাশিচক্র
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রাচীনকাল থেকেই আকাশের তারা ও নক্ষত্রদের পর্যবেক্ষণ করে আসছেন। তারা খেয়াল করেন যে, সূর্য তার এই আপাত বার্ষিক গতির পথে আকাশের কিছু নির্দিষ্ট নক্ষত্রমণ্ডলীর (Constellations) মধ্যে দিয়ে যায় বলে মনে হয়। এই নক্ষত্রমণ্ডলীগুলোকেই আমরা রাশিচক্র (Zodiac) হিসেবে চিনি। রবিমার্গ এই ১২টি রাশিচক্রের মধ্যে দিয়েই অতিক্রম করে। তাই জ্যোতিষশাস্ত্রেও রবিমার্গের ধারণাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
রবিমার্গ জানার গুরুত্ব কী?
রবিমার্গ বা সূর্যের আপাত বার্ষিক গতি বোঝার বেশ কিছু গুরুত্ব রয়েছে:
- ঋতু পরিবর্তন বোঝা: রবিমার্গের ধারণা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে কেন ঋতু পরিবর্তন হয় এবং কেন বছরের বিভিন্ন সময়ে দিন ও রাতের দৈর্ঘ্যে পার্থক্য দেখা যায়।
- কৃষিকাজ: প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ সূর্যের এই আপাত গতি লক্ষ করে ফসলের বীজ বোনা বা কাটার সময় নির্ধারণ করত। আজও কৃষিকাজে এর গুরুত্ব রয়েছে।
- সময় গণনা: বছর, মাস এবং বিভিন্ন সংক্রান্তি ও বিষুবের সময় নির্ধারণে রবিমার্গের জ্ঞান কাজে লাগে।
- ভৌগোলিক অবস্থান নির্ণয়: কর্কটক্রান্তি, মকরক্রান্তি ও বিষুবরেখার মতো গুরুত্বপূর্ণ অক্ষাংশগুলো রবিমার্গের সাথেই সম্পর্কিত।
- জলবায়ু ও আবহাওয়া: সূর্যের আপাত অবস্থানের পরিবর্তনের সাথে কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত এবং সামগ্রিক জলবায়ুর সম্পর্ক রয়েছে।
যদি রবিমার্গ না থাকত?
একটু ভেবে দেখো তো, যদি পৃথিবী তার অক্ষের উপর হেলে না থাকতো, তাহলে কী হতো? তাহলে সূর্যরশ্মি সারা বছর ধরে কেবল নিরক্ষরেখার উপরেই লম্বভাবে পড়ত। এর ফলে:
- কোনো ঋতু পরিবর্তন হতো না। সারা বছর একই রকম আবহাওয়া থাকত।
- দিন ও রাতের দৈর্ঘ্য সারা বছর প্রায় সমান থাকত (১২ ঘন্টা করে)।
- কর্কটক্রান্তি বা মকরক্রান্তি রেখার কোনো বিশেষ তাৎপর্য থাকত না।
- সূর্যের কোনো উত্তরায়ন বা দক্ষিণায়ন হতো না, অর্থাৎ রবিমার্গ তৈরিই হতো না।
তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, পৃথিবীর এই হেলে থাকা এবং তার ফলে সৃষ্ট রবিমার্গ আমাদের এই বৈচিত্র্যময় গ্রহের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ!
শেষ কথা
আশা করি, রবিমার্গ কাকে বলে এবং সূর্যের আপাত বার্ষিক গতির রহস্য তোমরা বুঝতে পেরেছ। এটা মনে রাখা জরুরি যে, সূর্য নিজে চলছে না, বরং পৃথিবীর ঘূর্ণন এবং হেলে থাকার কারণেই আমরা সূর্যকে বছরের বিভিন্ন সময়ে আকাশে বিভিন্ন পথে চলতে দেখি। এই আপাত পথটিই হলো রবিমার্গ, যা কর্কটক্রান্তি রেখা থেকে মকরক্রান্তি রেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই ধারণাটি আমাদের ঋতু পরিবর্তন, দিন-রাতের হ্রাসবৃদ্ধি এবং পৃথিবীর জলবায়ু বুঝতে সাহায্য করে।
কিছু সাধারণ প্রশ্ন (FAQs)
রবিমার্গ কাকে বলে?
পৃথিবী তার কক্ষপথে সূর্যের চারদিকে ঘোরার সময় নিজের অক্ষের উপর ৬৬.৫° কোণে হেলে থাকে। এই হেলে থাকার কারণে সূর্যরশ্মি বছরের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে লম্বভাবে পড়ে। এর ফলে আমাদের কাছে মনে হয় যেন সূর্য বিষুবরেখা থেকে উত্তরে কর্কটক্রান্তি রেখা (২৩.৫° উত্তর) পর্যন্ত এবং দক্ষিণে মকরক্রান্তি রেখা (২৩.৫° দক্ষিণ) পর্যন্ত চলাচল করছে। আকাশে সূর্যের এই আপাত চলাচল পথকেই রবিমার্গ বলে।
সূর্যের আপাত বার্ষিক গতি কী?
সূর্য আসলে স্থির, পৃথিবীই সূর্যের চারপাশে ঘোরে। কিন্তু পৃথিবী তার অক্ষের উপর হেলে থাকায়, আমাদের মনে হয় সূর্য নিজেই পৃথিবীর বিষুবরেখা থেকে উত্তরে কর্কটক্রান্তি রেখা এবং দক্ষিণে মকরক্রান্তি রেখার মধ্যে চলাচল করছে। এই আপাত বা বাহ্যিক চলাচলকেই সূর্যের আপাত বার্ষিক গতি বলা হয়, যা রবিমার্গের পথ অনুসরণ করে।
পৃথিবীর অক্ষ হেলে থাকার ফলাফল কী?
পৃথিবীর অক্ষ তার কক্ষপথের সাথে ৬৬.৫° কোণে হেলে থাকার কারণে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। এর প্রধান ফলাফল হলো ঋতু পরিবর্তন। এছাড়া দিন ও রাতের দৈর্ঘ্যের পরিবর্তন এবং রবিমার্গের সৃষ্টিও এর ফলেই হয়। এই হেলে থাকা অবস্থার কারণেই সূর্যরশ্মি পৃথিবীর সর্বত্র সমানভাবে পড়ে না, যা তাপমাত্রার পার্থক্য এবং ঋতুচক্র তৈরি করে।
কর্কটক্রান্তি রেখা ও মকরক্রান্তি রেখার গুরুত্ব কী?
কর্কটক্রান্তি রেখা (২৩.৫° উত্তর অক্ষাংশ) হলো উত্তর গোলার্ধের সেই সীমা যেখানে বছরে একবার (সাধারণত ২১ জুন) সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে। মকরক্রান্তি রেখা (২৩.৫° দক্ষিণ অক্ষাংশ) হলো দক্ষিণ গোলার্ধের সেই সীমা যেখানে বছরে একবার (সাধারণত ২২ ডিসেম্বর) সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে। রবিমার্গের মাধ্যমে সূর্যের আপাত চলাচল এই দুটি রেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।
রবিমার্গ না থাকলে কী হতো?
যদি পৃথিবীর অক্ষ হেলে না থাকতো, তাহলে রবিমার্গ তৈরি হতো না। সূর্যরশ্মি সারা বছর ধরে নিরক্ষরেখার উপরেই লম্বভাবে পড়তো। এর ফলে পৃথিবীতে কোনো ঋতু পরিবর্তন হতো না। সব জায়গায় প্রায় একই রকম আবহাওয়া থাকতো এবং দিন-রাতের দৈর্ঘ্যও সারা বছর প্রায় সমান থাকতো।
আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। রবিমার্গ কাকে বলে? সূর্যের আপাত বার্ষিক গতি এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url