ইতালিয়ান রুপার ভরি কত? বাংলাদেশে আজকের রুপার দাম ২০২৫

আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে ইতালিয়ান রুপার ভরি কত? বাংলাদেশে আজকের রুপার দাম ২০২৫ নিয়ে আলোচনা করব।

ইতালিয়ান রুপার ভরি কত? বাংলাদেশে আজকের রুপার দাম ২০২৫

ইতালিয়ান রুপার ভরি কত?

সোনা যেমন সবার কাছে প্রিয়, রুপাও কিন্তু কম আকর্ষণীয় নয়। গহনা থেকে শুরু করে নানা শৌখিন জিনিস তৈরিতে রুপার ব্যবহার অনেক পুরনো। বিশেষ করে ইতালিয়ান রুপার ডিজাইন ও চকচকে ভাব অনেকেরই পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকে। কিন্তু এই ইতালিয়ান রুপা কিনতে গেলে দাম নিয়ে একটা প্রশ্ন মনে আসেই – ইতালিয়ান রুপার ভরি কত?

ইতালিয়ান রুপার ভরি কত

এই পোস্টে আমরা আলোচনা করবো বাংলাদেশে ইতালিয়ান রুপার দাম কেমন, কারা এই দাম ঠিক করে, রুপা কেনার সময় কী কী বিষয় খেয়াল রাখতে হবে এবং রুপার যত্ন নেওয়ার কিছু সহজ উপায় নিয়ে। আপনি যদি রুপা কিনতে আগ্রহী হন বা শুধু দাম সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য।

ইতালিয়ান রুপা আসলে কী?

অনেকেই মনে করেন 'ইতালিয়ান রুপা' মানে হলো ইতালি থেকে আনা রুপা। আসলে বিষয়টি ঠিক তা নয়। জুয়েলারি বা গহনার বাজারে 'ইতালিয়ান' শব্দটি প্রায়শই রুপার একটি নির্দিষ্ট ডিজাইন, উন্নত ফিনিশিং (মসৃণ ও চকচকে ভাব) বা আধুনিক কারিগরি শৈলী বোঝাতে ব্যবহার করা হয়।

এই ধরনের রুপা সাধারণত খুব ভালো মানের হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি ৯২৫ স্টার্লিং সিলভার হয়ে থাকে, যার মানে হলো এতে ৯২.৫% খাঁটি রুপা এবং বাকি ৭.৫% অন্য ধাতু (যেমন তামা) মেশানো থাকে। এই মিশ্রণ রুপাকে টেকসই ও মজবুত করে, যা গহনা তৈরির জন্য খুব দরকারি।

তবে, বাংলাদেশে অনেক সময় ২২ ক্যারেট বা ২১ ক্যারেট রুপাকেও সুন্দর ডিজাইন ও ফিনিশিংয়ের কারণে 'ইতালিয়ান রুপা' বলে বিক্রি করা হয়। তাই কেনার আগে বিক্রেতার কাছ থেকে রুপার আসল ক্যারেট বা বিশুদ্ধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া ভালো। মনে রাখবেন, 'ইতালিয়ান' ট্যাগটি মানের চেয়ে বেশি ডিজাইন বা স্টাইলকে নির্দেশ করতে পারে।

বাংলাদেশে রুপার দাম নির্ধারণ করে কারা?

বাংলাদেশে সোনা ও রুপার দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি নির্দিষ্ট সংস্থা আছে। এর নাম হলো বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। বাজুস আন্তর্জাতিক বাজারে সোনা-রুপার দামের ওঠানামা, দেশের ভেতরে চাহিদা ও যোগান, ডলারের দাম এবং অন্যান্য খরচ হিসাব করে স্বর্ণ ও রুপার দাম নির্ধারণ করে।

বাজুস বিভিন্ন ক্যারেটের (যেমন ২২, ২১, ১৮ ক্যারেট) এবং সনাতন পদ্ধতির রুপার জন্য আলাদা আলাদা দাম ঘোষণা করে। এই দাম সাধারণত প্রতি ভরি (প্রায় ১১.৬৬ গ্রাম) হিসাবে বলা হয়। জুয়েলারি দোকানগুলো বাজুস নির্ধারিত দাম অনুসরণ করেই রুপা বিক্রি করে থাকে, যদিও এর সাথে মজুরি বা মেকিং চার্জ এবং ভ্যাট যুক্ত হয়।

আজকের বাজারে ইতালিয়ান রুপার দাম (ভরি প্রতি) - এপ্রিল ২০২৫

যেহেতু 'ইতালিয়ান রুপা' সাধারণত উচ্চ ক্যারেটের (২২ বা ২১) অথবা ৯২৫ স্টার্লিং সিলভার হয়ে থাকে, এর দাম মূলত বাজুস নির্ধারিত সংশ্লিষ্ট ক্যারেটের রুপার দামের উপর নির্ভর করে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: রুপার বাজার দর প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। এখানে দেওয়া দামগুলো সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে (এপ্রিল ১২, ২০২৫ অনুযায়ী) একটি ধারণা দেওয়ার জন্য। কেনার আগে অবশ্যই বর্তমান বাজারদর বাজুসের ওয়েবসাইট বা সরাসরি দোকান থেকে যাচাই করে নিন।

বাজুস কর্তৃক নির্ধারিত সর্বশেষ (এপ্রিল ২০২৫ এর তথ্যানুযায়ী) বিভিন্ন ক্যারেটের রুপার দাম নিচে দেওয়া হলো (প্রতি ভরি):

  • ২২ ক্যারেট রুপার ভরি: প্রায় ২১০০ টাকা
  • ২১ ক্যারেট রুপার ভরি: প্রায় ২০০০ টাকা
  • ১৮ ক্যারেট রুপার ভরি: প্রায় ১৭০০ টাকা
  • সনাতন পদ্ধতির রুপার ভরি: প্রায় ১৩৫০ টাকা

যেহেতু 'ইতালিয়ান রুপা' বলে যা বিক্রি হয় তা প্রায়শই ২২ বা ২১ ক্যারেটের হয়ে থাকে, তাই এর দাম সাধারণত ভরি প্রতি ২০০০ থেকে ২১০০ টাকার কাছাকাছি থাকে। তবে, মনে রাখতে হবে এটি শুধু রুপার দাম। এর সাথে ডিজাইন অনুযায়ী মেকিং চার্জ (মজুরি) এবং সরকারের নিয়ম অনুযায়ী ভ্যাট যুক্ত হবে। তাই চূড়ান্ত দাম এর চেয়ে বেশি হবে।

যদি রুপাটি ৯২৫ স্টার্লিং সিলভার হয় (যা ২২ ক্যারেটের চেয়ে সামান্য বেশি খাঁটি), তবে এর দাম ২২ ক্যারেটের দামের আশেপাশেই থাকার কথা, কারণ বাংলাদেশে স্টার্লিং সিলভারের জন্য বাজুসের আলাদা কোনো ক্যাটাগরি নেই। দাম মূলত ওজন, ডিজাইন ও মজুরির উপর নির্ভর করবে।

রুপার বিভিন্ন প্রকারভেদ (ক্যারেট অনুযায়ী)

রুপার বিশুদ্ধতা বোঝানোর জন্য ক্যারেট ব্যবহার করা হয়, যদিও সোনার ক্ষেত্রে এর ব্যবহার বেশি প্রচলিত। রুপার ক্ষেত্রে সাধারণত হাজারকরা অংশ দিয়ে বিশুদ্ধতা মাপা হয় (যেমন ৯২৫ মানে ১০০০ ভাগের ৯২৫ ভাগ খাঁটি রুপা)। তবে বাংলাদেশে ক্যারেট হিসাবও প্রচলিত:

  • ২২ ক্যারেট রুপা: এতে প্রায় ৯১.৬% খাঁটি রুপা থাকে। গহনা তৈরির জন্য এটি বেশ জনপ্রিয়।
  • ২১ ক্যারেট রুপা: এতে প্রায় ৮৭.৫% খাঁটি রুপা থাকে। এটিও গহনার জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • ১৮ ক্যারেট রুপা: এতে ৭৫% খাঁটি রুপা থাকে। এটি তুলনামূলক কম দামি এবং কিছু গহনায় ব্যবহৃত হয়।
  • সনাতন পদ্ধতির রুপা: এটি সাধারণত কম বিশুদ্ধ রুপা, যা পুরোনো গহনা গলিয়ে বা অন্য উৎস থেকে তৈরি হতে পারে। এর বিশুদ্ধতার কোনো নির্দিষ্ট মানদণ্ড অনেক সময় থাকে না।
  • ৯২৫ স্টার্লিং সিলভার: এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মান, যাতে ৯২.৫% খাঁটি রুপা থাকে। 'ইতালিয়ান' ডিজাইনের অনেক গহনা এই মানের হয়ে থাকে।
ইতালিয়ান ডিজাইনের রুপার গহনা

ছবি: ইতালিয়ান ডিজাইনের রুপার গহনা দেখতে এমনই আকর্ষণীয় হয়।

রুপার দাম কেন পরিবর্তন হয়?

রুপার দাম স্থির থাকে না, বেশ কিছু কারণে এর দাম ওঠানামা করে:

  1. আন্তর্জাতিক বাজার: বিশ্ববাজারে রুপার দাম বাড়লে বা কমলে তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ে।
  2. ডলারের বিনিময় হার: যেহেতু রুপা আন্তর্জাতিক পণ্য, ডলারের দাম বাড়লে রুপার দামও বেড়ে যায়।
  3. চাহিদা ও যোগান: দেশে রুপার চাহিদা বাড়লে (যেমন বিয়ের মৌসুমে) দাম বাড়তে পারে। আবার যোগান বেশি হলে দাম কমতে পারে।
  4. সরকারি নীতি ও কর: সরকার আমদানি শুল্ক বা ভ্যাট পরিবর্তন করলে তার প্রভাব রুপার দামে পড়ে।
  5. শিল্পখাতে ব্যবহার: রুপা শুধু গহনাতেই নয়, ইলেকট্রনিক্স, সোলার প্যানেল ইত্যাদি শিল্পেও ব্যবহৃত হয়। এসব খাতে চাহিদা বাড়লে দাম প্রভাবিত হতে পারে।

ইতালিয়ান রুপা কেনার আগে কী কী দেখবেন?

সুন্দর ডিজাইন দেখে হুট করে ইতালিয়ান রুপা কিনে ফেলার আগে কয়েকটি জরুরি বিষয় যাচাই করে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ:

  • বিশুদ্ধতা (ক্যারেট): রুপাটি কত ক্যারেটের (২২, ২১, ১৮ বা ৯২৫ স্টার্লিং) তা নিশ্চিত হয়ে নিন। বিক্রেতার কথায় বিশ্বাস না করে পারলে হলমার্ক চিহ্ন দেখে কিনুন।
  • হলমার্ক চিহ্ন: আসল রুপা চেনার অন্যতম উপায় হলো হলমার্ক। বাজুস অনুমোদিত হলমার্ক থাকলে বিশুদ্ধতা নিয়ে চিন্তা কমে যায়।
  • ওজন: সঠিক ওজনে রুপা পাচ্ছেন কিনা তা নিশ্চিত করুন। সম্ভব হলে ডিজিটাল মেশিনে ওজন করিয়ে নিন।
  • মেকিং চার্জ (মজুরি): রুপার দামের সাথে মজুরি যোগ হয়। প্রতি গ্রামে বা ভরিতে কত মজুরি নেওয়া হচ্ছে তা আগে থেকেই জেনে নিন। ডিজাইনের ওপর ভিত্তি করে মজুরি কমবেশি হতে পারে।
  • ভ্যাট: রুপার গহনার উপর সরকার নির্ধারিত ভ্যাট প্রযোজ্য হতে পারে। মোট দামের সাথে ভ্যাট যোগ হবে কিনা এবং হলে কত শতাংশ, তা জিজ্ঞেস করুন।
  • ক্যাশমেমো/রশিদ: অবশ্যই বিক্রেতার কাছ থেকে ক্যাশমেমো বা রশিদ সংগ্রহ করুন। এতে রুপার বিবরণ, ওজন, ক্যারেট, দাম, মজুরি, ভ্যাটের পরিমাণ এবং বিক্রেতার তথ্য লেখা থাকবে। এটি ভবিষ্যতের জন্য প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।
  • বিক্রেতার সুনাম: পরিচিত ও বিশ্বস্ত দোকান থেকে রুপা কেনা ভালো। তাদের বিক্রয়োত্তর সেবা (যেমন পালিশ করা, মেরামত) ভালো হতে পারে।
  • পুনঃবিক্রয় বা বদলের নীতি: কেনার আগেই জেনে নিন যে ভবিষ্যতে এই রুপা বিক্রি করতে চাইলে বা বদলে অন্য গহনা নিতে চাইলে তারা কেমন দাম দেবে বা কতটুকু বাদ দেবে।
আমাদের সাইটে সোনার দাম নিয়ে লেখা একটি পোস্ট রয়েছে। আপনি চাইলে সেটিও দেখতে পারেন: বাংলাদেশে আজকের সোনার দাম.

হলমার্কযুক্ত রুপা কেন কিনবেন?

হলমার্ক হলো রুপার গায়ে লাগানো একটি ছোট চিহ্ন বা সিল যা তার বিশুদ্ধতার প্রমাণ দেয়। বাংলাদেশে বাজুস অনুমোদিত হলমার্কিং পদ্ধতি রয়েছে। হলমার্কযুক্ত রুপা কেনার সুবিধাগুলো হলো:

  • বিশুদ্ধতার নিশ্চয়তা: আপনি যে ক্যারেটের জন্য দাম দিচ্ছেন, সেই পরিমাণ খাঁটি রুপা পাচ্ছেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়।
  • প্রতারণার ঝুঁকি কম: অসাধু ব্যবসায়ীরা কম মানের রুপাকে বেশি ক্যারেট বলে বিক্রি করতে পারে। হলমার্ক থাকলে এই ঝুঁকি থাকে না।
  • সঠিক মূল্যায়ন: ভবিষ্যতে যখন আপনি রুপাটি বিক্রি করতে বা বদলাতে যাবেন, তখন হলমার্ক থাকলে সঠিক দাম পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • আন্তর্জাতিক মান: অনেক হলমার্ক আন্তর্জাতিক মানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ থাকে, যা রুপার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়।

তাই, একটু বেশি দাম হলেও চেষ্টা করুন হলমার্ক দেখেই রুপা কিনতে।

মজুরি (Making Charge) কীভাবে হিসাব করা হয়?

রুপার গহনা তৈরির জন্য কারিগরদের যে পারিশ্রমিক দিতে হয়, সেটাই হলো মজুরি বা মেকিং চার্জ। এটি রুপার মূল দামের সাথে অতিরিক্ত যোগ হয়। মজুরি হিসাব করার কয়েকটি পদ্ধতি আছে:

  • প্রতি গ্রাম/ভরি হিসাবে: কিছু গহনার ক্ষেত্রে প্রতি গ্রাম বা প্রতি ভরির উপর একটি নির্দিষ্ট হারে মজুরি নেওয়া হয়। যেমন, প্রতি ভরিতে ২০০ টাকা মজুরি।
  • শতাংশ হিসাবে: অনেক সময় রুপার মোট দামের উপর একটি নির্দিষ্ট শতাংশ (যেমন ১০% বা ১৫%) মজুরি হিসাবে যোগ করা হয়।
  • ডিজাইন অনুযায়ী ফিক্সড মজুরি: খুব জটিল বা এক্সক্লুসিভ ডিজাইনের ক্ষেত্রে অনেক সময় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মজুরি ধার্য করা থাকে।

দোকানভেদে এবং ডিজাইনের জটিলতা অনুযায়ী মজুরি ভিন্ন হতে পারে। তাই কেনার আগে মজুরি কত এবং কীভাবে হিসাব করা হচ্ছে, তা পরিষ্কারভাবে জেনে নেওয়া জরুরি। প্রয়োজনে কিছুটা দর কষাকষি করারও সুযোগ থাকতে পারে।

ভ্যাট (VAT) কি রুপার দামের সাথে যুক্ত হয়?

হ্যাঁ, বাংলাদেশে জুয়েলারি বা রুপার গহনা কেনার সময় সরকারের নিয়ম অনুযায়ী মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট (VAT) প্রযোজ্য হতে পারে। সাধারণত, রুপার মোট মূল্য (রুপার দাম + মজুরি) এর উপর একটি নির্দিষ্ট শতাংশ হারে ভ্যাট যোগ করা হয়।

ভ্যাটের হার সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হয় এবং সময়ে সময়ে পরিবর্তন হতে পারে। তাই কেনার সময় বিক্রেতার কাছে ভ্যাট সম্পর্কে জেনে নিন এবং ক্যাশমেমোতে ভ্যাটের পরিমাণ আলাদাভাবে উল্লেখ আছে কিনা তা দেখে নিন। বর্তমানে (২০২৫ সাল অনুযায়ী) সাধারণত ৫% ভ্যাট প্রযোজ্য হয় জুয়েলারির ক্ষেত্রে, তবে এটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য কেনার সময় জিজ্ঞাসা করে নেওয়াই ভালো।

পুরনো রুপা বিক্রি বা বদলানোর নিয়ম

আপনার কাছে যদি পুরনো রুপার গহনা থাকে এবং আপনি তা বিক্রি করতে চান বা বদলে নতুন কিছু নিতে চান, তবে কিছু বিষয় জেনে রাখা ভালো:

  • দাম কম পাওয়া: পুরনো রুপা বিক্রি করার সময় সাধারণত আপনি কেনার দামের চেয়ে কম দাম পাবেন। কারণ, বিক্রেতারা মজুরি এবং কিছুটা খাদ বাদ দিয়ে হিসাব করে।
  • ক্যারেট পরীক্ষা: দোকানদার আপনার পুরনো রুপার ক্যারেট বা বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করে নেবে।
  • ওজন বাদ দেওয়া: অনেক সময় পাথর বা ময়লা থাকলে সেগুলোর ওজন বাদ দেওয়া হয়।
  • কাটতির হার: দোকানগুলো পুরনো রুপা কেনার সময় একটি নির্দিষ্ট শতাংশ (যেমন ২০% বা ৩০%) বাদ দিয়ে বাকি ওজনের দাম দেয়। এই হার দোকানভেদে ভিন্ন হতে পারে।
  • বদলের ক্ষেত্রে সুবিধা: বিক্রি করার চেয়ে একই দোকান থেকে পুরনো রুপা বদলে নতুন গহনা নিলে অনেক সময় কিছুটা ভালো দাম পাওয়া যায় বা কাটতির হার কম হতে পারে।

তাই, পুরনো রুপা বিক্রি বা বদলের আগে কয়েকটি দোকানে খোঁজ নিয়ে দেখা ভালো যে কারা সবচেয়ে ভালো দাম বা শর্ত দিচ্ছে।

ইতালিয়ান রুপার যত্ন কীভাবে নেবেন?

শখের রুপার গহনা দীর্ঘদিন সুন্দর ও চকচকে রাখতে চাইলে এর সঠিক যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। কিছু সহজ টিপস:

  • ব্যবহারের পর মুছে রাখুন: গহনা ব্যবহারের পর নরম, পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে রাখুন। এতে ঘাম বা ময়লা লেগে রুপা কালো হবে না।
  • আলাদা রাখুন: প্রতিটি রুপার গহনা আলাদা নরম কাপড় বা টিস্যুতে মুড়ে অথবা বাতাস ঢোকে না এমন জিপলক ব্যাগে রাখুন। এতে একটির সাথে আরেকটির ঘষা লেগে দাগ পড়বে না এবং বাতাসের সংস্পর্শে কালো হওয়া কমবে।
  • পানি ও কেমিক্যাল থেকে দূরে রাখুন: গোসল করার সময়, থালাবাসন মাজার সময় বা সুইমিং পুলে নামার আগে রুপার গহনা খুলে রাখুন। পারফিউম, লোশন, হেয়ার স্প্রে ইত্যাদি লাগানোর পরে গহনা পরুন।
  • পরিষ্কার করার নিয়ম: রুপা কালো হয়ে গেলে হালকা গরম পানিতে সামান্য ডিশ ওয়াশিং লিকুইড মিশিয়ে নরম ব্রাশ দিয়ে আলতো করে ঘষে পরিষ্কার করতে পারেন। এরপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নরম কাপড় দিয়ে মুছে শুকিয়ে নিন। এছাড়া রুপা পরিষ্কার করার জন্য ειδικά পোলিশিং ক্লথ বা সলিউশন পাওয়া যায়।
  • নিয়মিত ব্যবহার: রুপা ফেলে না রেখে মাঝে মাঝে ব্যবহার করলে এর উজ্জ্বলতা বজায় থাকে।

রুপার গহনা নাকি রুপার বার – বিনিয়োগের জন্য কোনটি ভালো?

অনেকে রুপাকে শুধু পরার জন্য নয়, বিনিয়োগের জন্যও কেনেন। এক্ষেত্রে প্রশ্ন আসে – গহনা কেনা ভালো নাকি রুপার বার বা কয়েন কেনা?

  • গহনা:
    • সুবিধা: পরার আনন্দ পাওয়া যায়, দেখতে সুন্দর।
    • অসুবিধা: কেনার সময় মজুরি ও ভ্যাট দিতে হয়, যা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে লোকসান। বিক্রি করার সময় মজুরির টাকা ফেরত পাওয়া যায় না এবং দামও কিছুটা কম পাওয়া যায়।
  • রুপার বার/কয়েন:
    • সুবিধা: এতে মজুরি থাকে না বা খুব কম থাকে। বিশুদ্ধতা সাধারণত ৯৯৯ (৯৯.৯% খাঁটি) হয়। বিনিয়োগের জন্য এটি বেশি উপযোগী কারণ বিক্রি করার সময় দাম কম কাটার সম্ভাবনা কম থাকে।
    • অসুবিধা: এটি পরা যায় না, শুধু জমিয়ে রাখতে হয়।

সুতরাং, যদি আপনার উদ্দেশ্য শুধু বিনিয়োগ হয়, তবে রুপার গহনার চেয়ে বার বা কয়েন কেনা বেশি লাভজনক হতে পারে। আর যদি পরার ইচ্ছা থাকে এবং পাশাপাশি কিছুটা সঞ্চয়ও করতে চান, তবে গহনা কিনতে পারেন।

উপসংহার

ইতালিয়ান রুপা তার ডিজাইন ও মানের জন্য অনেকের কাছেই প্রিয়। বাংলাদেশে এর দাম মূলত ২২ বা ২১ ক্যারেট রুপার দামের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়, যার সাথে মজুরি ও ভ্যাট যুক্ত হয়। সর্বশেষ বাজারদর অনুযায়ী (এপ্রিল ২০২৫), ২২ ক্যারেট রুপার ভরি প্রায় ২১০০ টাকা এবং ২১ ক্যারেট রুপার ভরি প্রায় ২০০০ টাকা (শুধুমাত্র রুপার দাম)।

রুপা কেনার সময় অবশ্যই এর বিশুদ্ধতা, হলমার্ক, ওজন, মজুরি এবং ভ্যাটের পরিমাণ যাচাই করে নিন। বিশ্বস্ত দোকান থেকে কিনুন এবং ক্যাশমেমো সংগ্রহ করুন। মনে রাখবেন, রুপার দাম পরিবর্তনশীল, তাই কেনার আগে বর্তমান বাজারদর জেনে নেওয়া আবশ্যক। সঠিক যত্ন নিলে আপনার শখের রুপার গহনা দীর্ঘদিন উজ্জ্বল থাকবে।

ইতালিয়ান রুপার ভরি কত প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)

১. ইতালিয়ান রুপার ভরি কত?

বাংলাদেশে 'ইতালিয়ান রুপা' নামে যা বিক্রি হয়, তা মূলত ২২ ক্যারেট বা ২১ ক্যারেট মানের হয়ে থাকে। এর দাম বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) কর্তৃক নির্ধারিত ২২ বা ২১ ক্যারেট রুপার দামের সমান বা কাছাকাছি হয়। তবে ডিজাইন ও মেকিং চার্জের কারণে চূড়ান্ত দাম ভিন্ন হতে পারে। সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী (এপ্রিল ২০২৫), ২২ ক্যারেট রুপার ভরি প্রায় ২১০০ টাকা, ২১ ক্যারেট রুপার ভরি প্রায় ২০০০ টাকা, ১৮ ক্যারেট রুপার ভরি প্রায় ১৭০০ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপার ভরি প্রায় ১৩৫০ টাকা (বাজুস নির্ধারিত)। কেনার আগে বর্তমান বাজারদর যাচাই করে নেওয়া জরুরি।

২. ইতালিয়ান রুপা বলতে কী বোঝায়?

সাধারণত 'ইতালিয়ান রুপা' বলতে বোঝায় উন্নত ডিজাইন ও ফিনিশিংয়ের রুপার গহনা। এটি প্রায়শই ৯২৫ স্টার্লিং সিলভার (৯২.৫% খাঁটি রুপা) বা বাংলাদেশে প্রচলিত ২২/২১ ক্যারেট মানের হয়ে থাকে। 'ইতালিয়ান' শব্দটি এখানে রুপার উৎসস্থলের চেয়ে ডিজাইন বা কারিগরি উৎকর্ষতাকে বেশি নির্দেশ করে।

৩. রুপা কেনার সময় কী কী বিষয় খেয়াল রাখা উচিত?

রুপা কেনার সময় কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি: ১. রুপার ধরণ ও ক্যারেট (বিশুদ্ধতা)। ২. হলমার্ক চিহ্ন আছে কিনা (বিশুদ্ধতার গ্যারান্টি)। ৩. সঠিক ওজন। ৪. মেকিং চার্জ বা মজুরি কত। ৫. ভ্যাট প্রযোজ্য হলে তার পরিমাণ। ৬. ক্যাশমেমো বা রশিদ সংগ্রহ করা। ৭. বিক্রেতার সুনাম ও নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করা।

৪. বাংলাদেশে রুপার দাম কে নির্ধারণ করে?

বাংলাদেশে স্বর্ণ ও রুপার দাম নির্ধারণ করে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। তারা আন্তর্জাতিক বাজারদর, স্থানীয় চাহিদা-সরবরাহ, ডলারের বিনিময় হার এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ বিবেচনা করে নিয়মিতভাবে দাম সমন্বয় করে থাকে।

৫. হলমার্ক চিহ্ন থাকা কেন জরুরি?

হলমার্ক চিহ্ন রুপার বিশুদ্ধতার গ্যারান্টি দেয়। এটি নিশ্চিত করে যে আপনি যে ক্যারেটের রুপা কিনছেন, তাতে সেই পরিমাণ খাঁটি রুপা আসলেই আছে। হলমার্কযুক্ত রুপা কেনা মানে প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকা এবং ভবিষ্যতে বিক্রি বা বদলানোর সময় সঠিক দাম পাওয়া।

আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। ইতালিয়ান রুপার ভরি কত? বাংলাদেশে আজকের রুপার দাম ২০২৫ এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

পরবর্তী পোস্ট পূর্ববর্তী পোস্ট
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url