দেশি মুরগি দিয়ে টার্কির ডিম ফোটানোর সহজ উপায়
আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে দেশি মুরগি দিয়ে টার্কির ডিম ফোটানোর সহজ উপায় নিয়ে আলোচনা করব।
দেশি মুরগি দিয়ে টার্কির ডিম ফোটানোর সম্পূর্ণ গাইডলাইন
আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভালো আছেন। হাঁস-মুরগি পালন আমাদের দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে অনেক বড় ভূমিকা রাখে। অনেকে শখের বশে বা বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ধরণের পাখি পালন করেন। টার্কি বর্তমানে একটি লাভজনক এবং জনপ্রিয় পাখি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
এর মাংস এবং ডিম উভয়েরই ভালো চাহিদা রয়েছে। কিন্তু টার্কির ডিম ফোটানোর জন্য অনেকেই ইনকিউবেটরের উপর নির্ভর করেন, যা বেশ ব্যয়বহুল হতে পারে, বিশেষ করে যারা ছোট পরিসরে শুরু করতে চান তাদের জন্য। কিন্তু আপনি কি জানেন, আপনার বাড়ির সাধারণ দেশি মুরগি ব্যবহার করেই সফলভাবে টার্কির ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তৈরি করা সম্ভব? হ্যাঁ, এটা একদম সত্যি!
আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা আলোচনা করব কিভাবে দেশি মুরগি দিয়ে টার্কির ডিম ফোটানো যায়, এর সুবিধা-অসুবিধা এবং পুরো প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে তুলে ধরব। এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে ইনকিউবেটরের খরচ ছাড়াই আপনি টার্কির বাচ্চা উৎপাদন করতে পারবেন।

কেন দেশি মুরগি দিয়ে টার্কির ডিম ফোটাবেন?
ইনকিউবেটর একটি আধুনিক এবং নির্ভরযোগ্য যন্ত্র হলেও এর কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। প্রথমত, এটি কিনতে বা ভাড়া করতে বেশ টাকা লাগে। দ্বিতীয়ত, এটি চালানোর জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রয়োজন, যা আমাদের দেশের অনেক জায়গায় সবসময় পাওয়া যায় না। এছাড়া, এটি পরিচালনার জন্য কিছু কারিগরি জ্ঞানও দরকার হয়।
অন্যদিকে, দেশি মুরগি ব্যবহার করে ডিম ফোটানো একটি প্রাকৃতিক এবং সাশ্রয়ী পদ্ধতি। এর কিছু সুবিধা নিচে দেওয়া হলো:
- কম খরচ: এর জন্য আলাদা কোনো যন্ত্র কিনতে হয় না। আপনার বাড়িতে যদি এমনিতেই মুরগি থাকে, তাহলে শুধু একটি ভালো 'উম দেওয়া' বা 'কুঁচে' (Broody) মুরগি খুঁজে বের করতে হবে।
- প্রাকৃতিক পরিবেশ: মুরগি তার নিজের শরীরের উষ্ণতা দিয়ে ডিমে তা দেয়, যা ডিম ফোটার জন্য খুবই স্বাভাবিক একটি পরিবেশ তৈরি করে।
- বিদ্যুৎ নির্ভরতা নেই: বিদ্যুৎ চলে গেলেও ডিম ফোটানোর প্রক্রিয়া বন্ধ হয় না।
- কম পরিচর্যা: মুরগি নিজেই ডিমে তা দেওয়া, ডিম উল্টে দেওয়া এবং আর্দ্রতা বজায় রাখার মতো কাজগুলো করে থাকে।
- মাতৃত্বের শিক্ষা: অনেক সময় দেখা যায়, যে মুরগি ডিম ফুটিয়েছে, সে বাচ্চাগুলোর প্রাথমিক যত্নও নেয় (যদিও টার্কির বাচ্চার ক্ষেত্রে সবসময় এটা হয় না)।
সঠিক উম দেওয়া (ব্রুডি) দেশি মুরগি নির্বাচন
সব মুরগি ডিমে তা দেয় না বা বাচ্চা ফোটানোর জন্য উপযুক্ত নয়। টার্কির ডিম ফোটানোর জন্য আপনাকে একটি ভালো 'উম দেওয়া' বা 'ব্রুডি' (Broody) মুরগি খুঁজে বের করতে হবে। ব্রুডি হেন চেনার কিছু লক্ষণ আছে:
- মুরগি বেশিরভাগ সময় বাসায় বসে থাকবে এবং সহজে বাসা ছাড়তে চাইবে না।
- তাকে ধরতে গেলে বা বিরক্ত করলে সে পাখা ফুলিয়ে হিসহিস শব্দ করবে বা ঠোকর দিতে আসবে।
- তার পেটের নিচের পালকগুলো কিছুটা ঝরে যেতে পারে যাতে সে সরাসরি চামড়া দিয়ে ডিম স্পর্শ করে উষ্ণতা দিতে পারে।
- সে দিনে মাত্র একবার বা দুবার খাবার ও পানির জন্য বাসা থেকে বের হবে এবং দ্রুত ফিরে আসবে।
- সে অন্য মুরগিদের তার বাসার কাছে আসতে দেবে না।
- দেখতে কিছুটা মনমরা বা অসুস্থ মনে হতে পারে, কিন্তু এটা ব্রুডি হওয়ার স্বাভাবিক লক্ষণ।
টার্কির ডিম মুরগির ডিমের চেয়ে আকারে বড় হয়। তাই মাঝারি বা একটু বড় আকারের দেশি মুরগি নির্বাচন করা ভালো, যাতে সে কয়েকটি টার্কির ডিম ভালোভাবে নিজের শরীরের নিচে ঢেকে রাখতে পারে। খুব ছোট মুরগি হলে সে অল্প কয়েকটি ডিমেই তা দিতে পারবে। শান্ত স্বভাবের এবং নির্ভরযোগ্যভাবে ডিমে তা দেওয়ার ইতিহাস আছে এমন মুরগি নির্বাচন করা সবচেয়ে ভালো।
ডিম বসানোর জন্য উপযুক্ত স্থান তৈরি
ব্রুডি মুরগি এবং তার ডিমগুলোর জন্য একটি নিরাপদ, শান্ত এবং আরামদায়ক জায়গা তৈরি করা খুব জরুরি। জায়গাটি এমন হতে হবে যেখানে অন্য মুরগি, হাঁস বা অন্য কোনো প্রাণী সহজে বিরক্ত করতে পারবে না।
- স্থান নির্বাচন: মুরগির ঘর বা অন্য কোনো ঘরের একটি কোণা বেছে নিন যা তুলনামূলকভাবে অন্ধকার, শান্ত এবং নিরাপদ। সরাসরি রোদ বা বৃষ্টি যেন সেখানে না লাগে।
- বাসা তৈরি: একটি ঝুড়ি, কাঠের বাক্স বা মাটির পাত্র ব্যবহার করতে পারেন। এর ভেতরে শুকনো পরিষ্কার খড়, ধানের কুঁড়া বা কাঠের গুঁড়ো দিয়ে একটি নরম বিছানা তৈরি করুন। বিছানাটি এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন ডিমগুলো গড়িয়ে একদিকে চলে না যায়, বরং মাঝখানে একসাথে থাকে।
- পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা: বাসা এবং এর আশেপাশের জায়গা পরিষ্কার রাখতে হবে যাতে পরজীবী বা জীবাণুর আক্রমণ না হয়। প্রয়োজনে জায়গাটিতে আগে থেকে জীবাণুনাশক স্প্রে করে শুকিয়ে নিতে পারেন।
- আলাদা রাখা: সম্ভব হলে ব্রুডি মুরগি এবং তার বাসাটিকে অন্য মুরগিদের থেকে একটু আলাদা রাখার ব্যবস্থা করুন। এতে সে নিশ্চিন্তে ডিমে তা দিতে পারবে।

টার্কির ডিম সংগ্রহ ও নির্বাচন
সফলভাবে বাচ্চা ফোটানোর জন্য ভালো মানের ডিম নির্বাচন করা অত্যন্ত জরুরি। খারাপ বা নষ্ট ডিম দিলে আপনার সব পরিশ্রম বৃথা যাবে।
- ডিমের উৎস: নির্ভরযোগ্য এবং সুস্থ টার্কির খামার থেকে ডিম সংগ্রহ করুন। নিশ্চিত হয়ে নিন যে পুরুষ (Tom) এবং মাদি (Hen) টার্কির অনুপাত ঠিক ছিল, যাতে ডিমগুলো উর্বর (Fertile) হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- ডিমের বয়স: möglichst frische Eier (idealerweise nicht älter als 7-10 Tage) verwenden. Je älter die Eier, desto geringer die Schlupfrate.
- ডিমের আকার ও আকৃতি: খুব বেশি বড়, খুব ছোট বা অস্বাভাবিক আকৃতির ডিম বাদ দিন। মাঝারি আকারের, স্বাভাবিক আকৃতির ডিম ফোটানোর জন্য ভালো।
- ডিমের খোসা: ডিমের খোসা মসৃণ, পরিষ্কার এবং ফাটা বা চিড়মুক্ত হতে হবে। ময়লা লেগে থাকা ডিম ফোটানোর আগে শুকনো কাপড় দিয়ে আলতো করে মুছে নেওয়া যেতে পারে, তবে ডিম ধোয়া উচিত নয় কারণ এতে খোসার উপরের প্রাকৃতিক সুরক্ষা স্তর নষ্ট হয়ে যায়।
- সংরক্ষণ (যদি প্রয়োজন হয়): যদি ডিম সংগ্রহ করে জমিয়ে রাখতে হয়, তবে সেগুলো ঠান্ডা (প্রায় ১৩-১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস), আর্দ্র জায়গায় রাখতে হবে। ডিমের মোটা দিকটা উপরে রেখে বা প্রতিদিন একবার করে উল্টে দিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে।
মুরগির নিচে টার্কির ডিম বসানো
যখন আপনার ব্রুডি মুরগি এবং তার বাসা পুরোপুরি প্রস্তুত, এবং আপনার কাছে ভালো মানের টার্কির ডিমও আছে, তখন আপনি ডিমগুলো মুরগির নিচে বসাতে পারেন।
- সঠিক সময়: মুরগি যখন বাসায় স্থির হয়ে বসে থাকবে, বিশেষ করে সন্ধ্যার পর বা রাতের বেলা ডিমগুলো বসানো ভালো। এসময় মুরগি শান্ত থাকে এবং নতুন ডিমগুলো সহজে গ্রহণ করে।
- ডিমের সংখ্যা: একটি মাঝারি আকারের দেশি মুরগি সাধারণত ৫ থেকে ১০টি টার্কির ডিম ভালোভাবে তা দিতে পারে। ডিমের সংখ্যা নির্ভর করে মুরগির আকার এবং ডিমের আকারের উপর। এমনভাবে ডিম দিন যেন মুরগি তার শরীরের নিচে সব ডিম ভালোভাবে ঢেকে রাখতে পারে। বেশি ডিম দিলে সবগুলো সমানভাবে তাপ পাবে না এবং কিছু ডিম নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- ডিম পরীক্ষা: ডিম বসানোর আগে নিশ্চিত হয়ে নিন মুরগিটি আসলেই নির্ভরযোগ্যভাবে ব্রুডি হয়েছে কিনা। প্রয়োজনে প্রথমে কয়েকটি সাধারণ মুরগির ডিম দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন সে ঠিকমতো তা দিচ্ছে কিনা।
- ডিম চিহ্নিত করা (ঐচ্ছিক): আপনি চাইলে পেন্সিল দিয়ে ডিমগুলোর উপর হালকা করে চিহ্ন দিয়ে রাখতে পারেন। এতে বুঝতে সুবিধা হবে মুরগি ডিমগুলো উল্টে দিচ্ছে কিনা বা কোনো ডিম হারিয়ে গেলে সেটা বোঝা যাবে।
তা দেওয়ার সময় ব্রুডি মুরগির যত্ন
মুরগি যখন ডিমে তা দিতে বসে, তখন তার বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। কারণ এই সময় সে নিজের খাওয়া-দাওয়ার কথাও প্রায় ভুলে যায়।
- খাবার ও পানি: মুরগির বাসার কাছাকাছি প্রতিদিন পরিষ্কার পানি এবং খাবার (গম, চাল, ভুট্টা ভাঙ্গা ইত্যাদি) রেখে দিন। এতে সে বাসা থেকে অল্প সময়ের জন্য উঠে এসে খেয়ে আবার তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে যেতে পারবে।
- বিরক্ত না করা: মুরগিকে যতটা সম্ভব শান্তিতে থাকতে দিন। খুব বেশি বিরক্ত করলে সে ভয় পেয়ে বাসা ছেড়ে উঠে যেতে পারে।
- নিয়মিত পর্যবেক্ষণ: দিনে অন্তত একবার দূর থেকে লক্ষ্য করুন মুরগি ঠিকমতো তা দিচ্ছে কিনা, তার খাবার-পানি ঠিক আছে কিনা।
- ভাঙা ডিম সরানো: যদি কোনো ডিম ঘটনাক্রমে ভেঙে যায়, তাহলে সেটি সাবধানে সরিয়ে ফেলুন এবং বাসাটি পরিষ্কার করে দিন। ভাঙা ডিমের অংশ অন্য ভালো ডিমের গায়ে লেগে গেলে সেগুলোও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- পরজীবী পরীক্ষা: মাঝে মাঝে মুরগির শরীর এবং বাসা পরীক্ষা করে দেখুন উকুন বা মাইটস (Mites) হয়েছে কিনা। যদি হয়, তাহলে সাবধানে পরজীবীনাশক ব্যবহার করতে হবে যাতে ডিমের কোনো ক্ষতি না হয়। অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ নেওয়া এক্ষেত্রে ভালো।
টার্কির ডিম ফোটার সময়কাল
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা মনে রাখতে হবে। মুরগির ডিম ফুটতে সাধারণত ২১ দিন সময় লাগে, কিন্তু টার্কির ডিম ফুটতে প্রায় ২৮ দিন সময় লাগে। তাই আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে। দেশি মুরগি সাধারণত ২১ দিনের বেশিও তা দিতে পারে যদি সে ভালোভাবে ব্রুডি থাকে। তবে কিছু মুরগি ২১ দিন পর উঠে যেতে চাইতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনাকে পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। যদি মুরগি ২৮ দিন পর্যন্ত তা দেয়, তাহলে খুব ভালো।

ডিম ক্যান্ডলিং (Candling) - পরীক্ষা করা (ঐচ্ছিক)
ক্যান্ডলিং হলো একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে ডিমের ভেতরে বাচ্চার বৃদ্ধি হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়। এটি সাধারণত ডিম বসানোর ৭-১০ দিন পর এবং আবার ১৮-২০ দিন পর করা যেতে পারে। এর জন্য একটি অন্ধকার ঘরে একটি টর্চলাইট বা ক্যান্ডলিং লাইট ডিমের মোটা প্রান্তের দিকে ধরে দেখতে হয়।
- উর্বর ডিম: যদি ডিম উর্বর হয় এবং বাচ্চা বাড়তে থাকে, তাহলে আপনি ডিমের ভেতরে রক্তনালী এবং একটি কালো বিন্দু (ভ্রূণ) দেখতে পাবেন।
- অনুর্বর ডিম: যদি ডিম অনুর্বর হয়, তাহলে ভেতরের কুসুম ছাড়া আর কিছুই দেখা যাবে না, পুরোটা স্বচ্ছ লাগবে।
- নষ্ট ডিম: যদি ভ্রূণ তৈরি হওয়ার পর মারা যায়, তাহলে ডিমের ভেতরে একটি রক্তের রিং বা ছোপ দেখা যেতে পারে।
ক্যান্ডলিং করার সুবিধা হলো, আপনি অনুর্বর বা নষ্ট ডিমগুলো আগে থেকেই সরিয়ে ফেলতে পারবেন। এতে ভালো ডিমগুলো ঠিকমতো জায়গা ও তাপ পাবে। তবে ক্যান্ডলিং খুব সাবধানে করতে হবে যাতে ডিম ঠান্ডা না হয়ে যায় বা ঝাঁকি না লাগে। যদি আপনি এই বিষয়ে অভিজ্ঞ না হন, তাহলে ক্যান্ডলিং না করাই ভালো। মুরগিকে তার মতো কাজ করতে দিন।
ডিম ফোটার প্রস্তুতি
প্রায় ২৫-২৬ দিনের দিকে ডিম ফোটার লক্ষণ দেখা যেতে পারে। এই সময় কিছু প্রস্তুতির প্রয়োজন হতে পারে।
- পিপিং (Pipping): বাচ্চা যখন ডিমের ভেতর থেকে ঠোকর দিয়ে খোসায় প্রথম ফাটল ধরায়, তাকে 'পিপিং' বলে। এটি ডিম ফোটার প্রাথমিক লক্ষণ। আপনি হয়তো ডিমের ভেতর থেকে বাচ্চার হালকা চিকচিক শব্দও শুনতে পেতে পারেন।
- আর্দ্রতা: সাধারণত মুরগি নিজেই তার শরীর এবং বাসা থেকে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা সরবরাহ করে। তবে পরিবেশ খুব শুষ্ক হলে বাসার আশেপাশে সামান্য পানি ছিটিয়ে দিতে পারেন, কিন্তু ডিমে সরাসরি পানি দেওয়া উচিত নয়।
- শান্ত পরিবেশ: ডিম ফোটার সময় মুরগিকে একেবারেই বিরক্ত করা উচিত নয়। এই সময় সে খুব সংবেদনশীল থাকে।
ডিম ফোটার প্রক্রিয়া এবং করণীয়
টার্কির বাচ্চা (যাদেরকে 'পোল্ট' বা Poult বলা হয়) ডিম ফুটে বের হতে ১২ থেকে ৪৮ ঘন্টা সময় লাগতে পারে।
- ধৈর্য ধরুন: বাচ্চা একবার ডিম ভাঙা শুরু করলে তাকে নিজে থেকেই বের হতে দিন। তাড়াহুড়ো করে ডিম ভেঙে বাচ্চাকে বের করার চেষ্টা করবেন না, এতে তার ক্ষতি হতে পারে। সে ডিমের কুসুমের বাকি অংশ পেটের সাথে শোষণ করে নেয় যা তাকে প্রথম কয়েক ঘন্টা শক্তি যোগায়।
- মুরগিকে দায়িত্ব পালন করতে দিন: মা মুরগি সাধারণত নতুন ফোটা বাচ্চাদের যত্ন নেয়, তাদের নিজের পরে নিচে উষ্ণতা দেয়।
- খালি খোসা সরানো: বাচ্চা পুরোপুরি বের হয়ে গেলে এবং কিছুটা শুকিয়ে উঠলে ডিমের খালি খোসাগুলো বাসা থেকে সরিয়ে ফেলুন।
- দুর্বল বাচ্চা: যদি কোনো বাচ্চা খুব দুর্বল হয় বা বের হতে সমস্যা হয়, অভিজ্ঞ কারো সাহায্য নিতে পারেন।

নতুন ফোটা টার্কির বাচ্চার যত্ন
দেশি মুরগি টার্কির ডিম ফুটিয়ে দিলেও, বাচ্চাগুলোর যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ আসতে পারে। টার্কির বাচ্চা মুরগির বাচ্চার চেয়ে আকারে বড় হয় এবং তাদের কিছু আলাদা যত্নের প্রয়োজন হয়।
- প্রথম ২৪-৪৮ ঘন্টা: বাচ্চা ফোটার পর প্রথম ২৪-৪৮ ঘন্টা মা মুরগির সাথেই বাসায় থাকতে দিন। এসময় তারা মায়ের কাছ থেকে উষ্ণতা পাবে এবং শরীরের ভেজা ভাব শুকিয়ে ঝরঝরে হবে।
- ব্রুডারে স্থানান্তর: দেশি মুরগি সবসময় টার্কির বাচ্চাকে নিজের বাচ্চা হিসেবে গ্রহণ নাও করতে পারে বা তাদের সঠিকভাবে যত্ন নিতে নাও পারে। বিশেষ করে টার্কির বাচ্চার খাবার ও পানির পাত্র একটু ভিন্ন ধরনের হলে ভালো হয়। তাই অনেকেই বাচ্চা ফোটার ১-২ দিন পর সেগুলোকে আলাদা করে একটি 'ব্রুডার' (Brooder) ঘরে নিয়ে যান।
- ব্রুডার তৈরি: একটি বড় কার্টন বা ঘেরা জায়গায় বাল্ব বা হিটার দিয়ে উষ্ণ রাখার ব্যবস্থা (প্রথম সপ্তাহে প্রায় ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট), নিচে লিটার (তুষ বা কাঠের গুঁড়ো), খাবার ও পানির পাত্র দিয়ে ব্রুডার তৈরি করা হয়।
- খাবার ও পানি: টার্কির বাচ্চার জন্য বিশেষ ধরনের স্টার্টার ফিড (Starter Feed) পাওয়া যায়, যাতে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকে। পরিষ্কার পানি সব সময় ছোট পাত্রে দিতে হবে যাতে বাচ্চা ভিজে না যায় বা ডুবে না যায়।
- মা মুরগির সাথে রাখা: যদি মা মুরগি বাচ্চাদের ভালোভাবে গ্রহণ করে এবং যত্ন নেয়, তাহলে আপনি তার সাথেই রাখতে পারেন। তবে আপনাকে খাবার, পানি এবং পরিবেশের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
সম্ভাব্য সমস্যা ও সমাধান
দেশি মুরগি দিয়ে টার্কির ডিম ফোটানোর সময় কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে:
- মুরগি বাসা ছেড়ে দেওয়া: যদি মুরগি ২৮ দিন হওয়ার আগেই বাসা ছেড়ে দেয়, তাহলে ডিমগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এমনটা হলে দ্রুত ডিমগুলোকে অন্য কোনো ব্রুডি মুরগির নিচে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে বা ইনকিউবেটরের ব্যবস্থা করতে হবে।
- ডিম ভেঙে ফেলা: মুরগি যদি অনভিজ্ঞ বা অস্থির প্রকৃতির হয়, তাহলে সে নড়াচড়া করার সময় ডিম ভেঙে ফেলতে পারে। এজন্য শান্ত স্বভাবের মুরগি নির্বাচন করা জরুরি।
- বাচ্চা গ্রহণ না করা: মুরগি টার্কির বাচ্চা দেখে ভয় পেতে পারে বা তাদের ঠোকরাতে পারে। এমন হলে বাচ্চাগুলোকে দ্রুত সরিয়ে নিতে হবে।
- রোগ বা পরজীবী: মুরগি বা বাসায় পরজীবী থাকলে তা বাচ্চাগুলোর জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা দেওয়া জরুরি।
দেশি মুরগি দিয়ে টার্কির ডিম ফোটানোর শেষ কথা
দেশি মুরগি দিয়ে টার্কির ডিম ফোটানো একটি কার্যকর এবং সাশ্রয়ী পদ্ধতি, বিশেষ করে যারা ছোট আকারে টার্কি পালন শুরু করতে চান তাদের জন্য। এর জন্য প্রয়োজন শুধু একটি ভালো ব্রুডি মুরগি, কিছু ভালো মানের টার্কির ডিম এবং ২৮ দিনের ধৈর্য ও যত্ন। যদিও কিছু চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে, সঠিক পরিকল্পনা এবং যত্ন নিলে এই পদ্ধতিতে সফলভাবে টার্কির বাচ্চা উৎপাদন করা সম্ভব। এই পদ্ধতিটি কেবল খরচই বাঁচায় না, বরং প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে পশুপালন করার একটি সুন্দর অভিজ্ঞতাও দেয়। আশা করি, এই বিস্তারিত আলোচনা আপনাদের কাজে আসবে এবং আপনারা সফলভাবে দেশি মুরগি দিয়ে টার্কির ডিম ফোটাতে পারবেন।
দেশি মুরগি দিয়ে টার্কির ডিম ফোটানোর সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQs)
১. দেশি মুরগি দিয়ে টার্কির ডিম ফুটতে কতদিন সময় লাগে?
উত্তর: টার্কির ডিম ফুটতে সাধারণত ২৮ দিন সময় লাগে, যা মুরগির ডিম (২১ দিন) থেকে বেশি।
২. একটি দেশি মুরগি কয়টি টার্কির ডিম তা দিতে পারে?
উত্তর: এটি মুরগির আকারের উপর নির্ভর করে। একটি মাঝারি আকারের দেশি মুরগি সাধারণত ৫ থেকে ১০টি টার্কির ডিম ভালোভাবে তা দিতে পারে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন মুরগি সব ডিম তার শরীরের নিচে ঢেকে রাখতে পারে।
৩. সব দেশি মুরগি কি টার্কির ডিমে তা দেবে?
উত্তর: না, সব মুরগি ডিমে তা দেয় না। শুধুমাত্র 'উম দেওয়া' বা 'ব্রুডি' মুরগিই ডিমে তা দেয়। টার্কির ডিম ফোটানোর জন্য একটি নির্ভরযোগ্য ও শান্ত স্বভাবের ব্রুডি মুরগি নির্বাচন করতে হবে।
৪. যদি মুরগি ২৮ দিনের আগে বাসা ছেড়ে দেয় তাহলে কি করণীয়?
উত্তর: এটা একটা সমস্যা। যদি এমন হয়, তাহলে ডিমগুলোকে দ্রুত অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য ব্রুডি মুরগির নিচে স্থানান্তর করতে হবে অথবা কৃত্রিম ইনকিউবেটরের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে ডিমগুলো ঠান্ডা হয়ে নষ্ট হয়ে যাবে।
৫. দেশি মুরগি কি টার্কির বাচ্চাদের যত্ন নিতে পারে?
উত্তর: কিছু মুরগি টার্কির বাচ্চাদের যত্ন নেয়, কিন্তু সবসময় তা হয় না। টার্কির বাচ্চা দেখতে ও আকারে ভিন্ন হওয়ায় মুরগি ভয় পেতে পারে বা তাদের ঠোকরাতে পারে। এছাড়া টার্কির বাচ্চার খাবার ও উষ্ণতার চাহিদা ভিন্ন হতে পারে। তাই বাচ্চা ফোটার পর সেগুলোকে আলাদা করে ব্রুডারে যত্ন নেওয়া অনেক সময় বেশি নিরাপদ।
আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। দেশি মুরগি দিয়ে টার্কির ডিম ফোটানোর সহজ উপায় এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url