বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভূমিরূপ কেমন
আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভূমিরূপ কেমন নিয়ে আলোচনা করব।
বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। এর বেশিরভাগ এলাকাই সমতল হলেও, এখানে পাহাড়, টিলা আর পুরোনো দিনের উঁচু ভূমিও দেখতে পাওয়া যায়। প্রকৃতির এই ভিন্ন ভিন্ন রূপকেই আমরা বলি ভূমিরূপ। তুমি কি জানো, তোমার এলাকা বা তুমি যেখানে বেড়াতে যাও, সেখানকার মাটির গঠন বা ভূমিরূপ অন্য এলাকা থেকে আলাদা হতে পারে? হ্যাঁ, এটাই সত্যি! বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভূমিরূপ কেমন, তা জানলে আমাদের দেশের ভূগোল সম্পর্কে ধারণা আরও স্পষ্ট হবে।
এই লেখায় আমরা খুব সহজভাবে জানার চেষ্টা করব বাংলাদেশের কোথায় কেমন ভূমিরূপ রয়েছে, কেন এই ভিন্নতা এবং এই ভূমিরূপ সেখানকার মানুষজনের জীবনযাত্রা ও চাষাবাদের উপর কেমন প্রভাব ফেলে। চলো, শুরু করা যাক আমাদের দেশের মাটির গঠনের বৈচিত্র্যময় জগতের探索 (অন্বেষণ)!
ভূমিরূপ কী?
খুব সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ভূমিরূপ হলো পৃথিবীর উপরিভাগের প্রাকৃতিক চেহারা বা গঠন। যেমন – কোথাও উঁচু পাহাড়, কোথাও ঢেউ খেলানো টিলা, কোথাও সমান বা নিচু জমি, আবার কোথাও নদীর পাশে বিস্তীর্ণ চর। এই সবকিছুই ভূমিরূপের অংশ। সময়ের সাথে সাথে, বিশেষ করে নদী, বৃষ্টি, বাতাস এবং পৃথিবীর ভেতরের নানা প্রাকৃতিক শক্তির কারণে মাটির এই চেহারা বদলায় এবং বিভিন্ন ধরণের ভূমিরূপ তৈরি হয়।
বাংলাদেশের ভূমিরূপের প্রধান প্রকারভেদ
বিজ্ঞানীরা বাংলাদেশের সমস্ত অঞ্চলের মাটির গঠন ও উচ্চতা বিচার করে এখানকার ভূমিরূপকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন:
১. টারশিয়ারি যুগের পাহাড় সমূহ: এগুলো হলো আমাদের দেশের সবচেয়ে উঁচু ভূমি, যা অনেক অনেক বছর আগে তৈরি হয়েছে। ২. প্লাইস্টোসিন কালের সোপান অঞ্চল: এগুলো টারশিয়ারি পাহাড়ের চেয়ে নিচু, কিন্তু আশেপাশের সমতল জমির চেয়ে কিছুটা উঁচু, সোপান বা ধাপের মতো দেখতে পুরোনো ভূমি। ৩. সাম্প্রতিক কালের প্লাবন সমভূমি: এটি হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এলাকা, যা মূলত নদী বাহিত পলি জমে তৈরি হয়েছে।
এখন আমরা এই তিনটি ভাগ নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করব।
১. টারশিয়ারি যুগের পাহাড় সমূহ: বাংলাদেশের ছাদ
'টারশিয়ারি যুগ' কথাটা শুনে কঠিন মনে হচ্ছে? এটা আসলে ಭೂగోళ বিজ্ঞানের একটা সময়কাল, যখন হিমালয় পর্বত তৈরি হচ্ছিল। ধারণা করা হয়, সেই সময়েই বাংলাদেশের এই পাহাড়ী অঞ্চলগুলোও তৈরি হয়েছে। এগুলো আমাদের দেশের সবচেয়ে প্রাচীন এবং উঁচু ভূমি।
-
কোথায় দেখা যায় এই পাহাড়গুলো? বাংলাদেশের দুটি প্রধান অঞ্চলে এই পাহাড়গুলো অবস্থিত:
- দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ী এলাকা: এর মধ্যে পড়ে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার এবং চট্টগ্রামের পূর্বাংশের জেলাগুলো। এখানকার পাহাড়গুলো বেশ উঁচু এবং এদের গড় উচ্চতা প্রায় ৬১০ মিটার (প্রায় ২০০০ ফুট)। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ 'তাজিংডং' (বিজয়) এবং 'কেওক্রাডং' এই অঞ্চলেই অবস্থিত। পাহাড়গুলো সাধারণত বেলেপাথর, শেল ও কর্দম শিলা দিয়ে গঠিত। এখানকার পাহাড়ের মাঝে মাঝে গভীর উপত্যকা দেখা যায়।
- উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ী এলাকা: এর মধ্যে পড়ে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার কিছু অংশ এবং ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলার উত্তরাংশের টিলাগুলো। এই এলাকার পাহাড় বা টিলাগুলো দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ের মতো অত উঁচু নয়। এদের গড় উচ্চতা সাধারণত ৩০ থেকে ৯০ মিটার (প্রায় ১০০-৩০০ ফুট), তবে কিছু কিছু পাহাড় ২৪৪ মিটারের (প্রায় ৮০০ ফুট) বেশি উঁচুও হতে পারে। এগুলোকে স্থানীয়ভাবে টিলা বলা হয়, যেমন - চিকনাগুল, খাসিয়া ও জয়ন্তিয়া টিলা।
-
পাহাড়ী অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য:
- এগুলো ভাঁজ পর্বত বা ভঙ্গিল পর্বতের অংশ।
- মাটি সাধারণত বেলে ও কাঁকরময়।
- ঘন বনজঙ্গলে ঢাকা থাকে।
- ঝর্ণা ও ছোট পাহাড়ি নদী দেখা যায়।
- কৃষিকাজ, বিশেষ করে জুম চাষ (পাহাড়ের ঢালে বিশেষ পদ্ধতিতে চাষ) এবং ফলের বাগান (যেমন - আনারস, কমলা, কাঁঠাল) এখানকার প্রধান জীবিকা।
- যোগাযোগ ব্যবস্থা সমতল ভূমির মতো সহজ নয়।
- মাঝে মাঝে ভূমিধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে।
২. প্লাইস্টোসিন কালের সোপান অঞ্চল: পুরোনো উঁচু ভূমি
'প্লাইস্টোসিন কাল' হলো ভূতাত্ত্বিক সময়ের আরেকটি ভাগ, যা টারশিয়ারি যুগের পরে কিন্তু বর্তমান সময়ের আগে ছিল (প্রায় ২৫ লক্ষ থেকে ১১,৭০০ বছর পূর্ব পর্যন্ত)। এই সময়ে গঠিত কিছুটা উঁচু ভূমিগুলোকেই প্লাইস্টোসিন কালের সোপান অঞ্চল বলা হয়। এগুলো মূলত পুরোনো পলি জমে তৈরি হয়েছে এবং বন্যার পানি সাধারণত এগুলোতে উঠতে পারে না।
-
এই সোপান অঞ্চল কোথায় অবস্থিত? বাংলাদেশে প্রধানত দুটি বড় এলাকায় এই ধরণের ভূমি দেখা যায়:
- বরেন্দ্র ভূমি: এটি বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত সবচেয়ে বড় সোপান ভূমি। রাজশাহী বিভাগের বগুড়া, রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার অংশবিশেষ নিয়ে এই অঞ্চল গঠিত। এর মোট আয়তন প্রায় ৯,৩২০ বর্গ কিলোমিটার। মাটি সাধারণত লালচে ও কাঁকরময় এবং সমতল ভূমি থেকে এর উচ্চতা ৬ থেকে ১২ মিটার (প্রায় ২০-৪০ ফুট) বেশি। এখানকার মাটি অপেক্ষাকৃত কম উর্বর এবং শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাব দেখা দেয়। ধান এখানকার প্রধান ফসল।
- মধুপুর ও ভাওয়ালের গড়: এটি দেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত। টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলায় এটি 'মধুপুর গড়' নামে এবং গাজীপুর জেলায় 'ভাওয়ালের গড়' নামে পরিচিত। এর মোট আয়তন প্রায় ৪,১০৩ বর্গ কিলোমিটার। মাটি এখানেও লালচে ও কিছুটা শক্ত। এর গড় উচ্চতা সমভূমি থেকে প্রায় ৬ থেকে ৩০ মিটার (প্রায় ২০-১০০ ফুট) বেশি। এখানে শাল গাছের বন দেখা যায় এবং কাঁঠাল ও অন্যান্য ফল ভালো জন্মে।
-
সোপান অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য:
- আশেপাশের প্লাবন সমভূমির চেয়ে উঁচু।
- মাটির রঙ লালচে বা ধূসর এবং এঁটেল ভাব বেশি।
- মাটি অপেক্ষাকৃত কম উর্বর।
- বন্যার পানি সাধারণত প্রবেশ করে না।
- ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কিছুটা নিচে থাকতে পারে।
- শালবন বা গজারি বন দেখা যায় (বিশেষ করে মধুপুর ও ভাওয়াল গড়ে)।
- জনবসতি প্লাবন সমভূমির চেয়ে কম ঘন।
-
সোপান অঞ্চলের গুরুত্ব: যদিও মাটি কম উর্বর, তবুও এই অঞ্চলগুলো বন্যা থেকে নিরাপদ হওয়ায় এখানে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও বসতি গড়ে উঠেছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে ধান চাষ এবং মধুপুর গড়ে ফল চাষ অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখে।
৩. সাম্প্রতিক কালের প্লাবন সমভূমি: বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র
বাংলাদেশের প্রায় ৮০% এলাকাই হলো এই সাম্প্রতিক কালের প্লাবন সমভূমি। 'সাম্প্রতিক কাল' বলতে ভূতাত্ত্বিক সময় অনুসারে হলোসিন যুগকে (প্রায় ১১,৭০০ বছর পূর্ব থেকে বর্তমান) বোঝানো হয়। এই বিশাল সমতল ভূমি মূলত পদ্মা, মেঘনা, যমুনা এবং এদের অসংখ্য শাখা-প্রশাখা ও উপনদী বাহিত পলি হাজার হাজার বছর ধরে জমা হয়ে তৈরি হয়েছে। এখনো বর্ষাকালে বন্যার সময় নদীর পানি ও পলি এসে এই সমভূমিকে আরও উর্বর করে তোলে।
-
প্লাবন সমভূমির গঠন ও বৈশিষ্ট্য:
- এটি অত্যন্ত উর্বর পলিমাটি দিয়ে গঠিত।
- ভূমির ঢাল খুবই কম, প্রায় পুরোটাই সমতল।
- সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর গড় উচ্চতা ৯ মিটারেরও কম।
- অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড় জালের মতো ছড়িয়ে আছে।
- বর্ষাকালে এর বেশিরভাগ এলাকা পানিতে ডুবে যায় বা প্লাবিত হয়।
- কৃষিকাজের জন্য অত্যন্ত উপযোগী, বিশেষ করে ধান ও পাট চাষের জন্য।
- বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ এই অঞ্চলেই বাস করে।
-
প্লাবন সমভূমির বিভিন্ন অংশ: এই বিশাল সমভূমিকেও এর অবস্থান ও গঠনের ভিত্তিতে কয়েকটি উপ-অঞ্চলে ভাগ করা যায়:
- পাদদেশীয় পলল সমভূমি (Piedmont Alluvial Plains): হিমালয় পর্বতের পাদদেশে, অর্থাৎ রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চলের তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, করতোয়া ইত্যাদি নদীর বাহিত নুড়ি, বালি ও পলি জমে এই সমভূমি গঠিত হয়েছে। মাটি তুলনামূলকভাবে কিছুটা মোটা দানার।
- বন্যা প্লাবন সমভূমি (Floodplains): দেশের মধ্যাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের বিশাল এলাকা জুড়ে এটি বিস্তৃত। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদ বাহিত সূক্ষ্ম পলি দিয়ে এটি গঠিত। বর্ষায় নিয়মিত প্লাবিত হয় এবং খুবই উর্বর।
- বদ্বীপ অঞ্চল (Delta Region): বাংলাদেশের দক্ষিণাংশ মূলত একটি বিশাল বদ্বীপ। পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার মিলিত স্রোতধারা বঙ্গোপসাগরে পড়ার মুখে প্রচুর পলি জমা করে এই বদ্বীপ তৈরি করেছে। এটিকে পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ বলা হয়। এর মধ্যে আবার সক্রিয় বদ্বীপ, মৃতপ্রায় বদ্বীপ ও স্রোতজ বদ্বীপ (Tidal Delta) - এইরকম ভাগ আছে।
- এসব অঞ্চলের নদী সম্পর্কে আরও জানতে আমাদের ['বাংলাদেশের নদ-নদী' সম্পর্কিত পোস্টটি] পড়তে পারেন। (যদি এমন পোস্ট থাকে)
- উপকূলীয় সমভূমি (Coastal Plains): বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে ফেনী নদী থেকে শুরু করে প্রায় সুন্দরবনের পশ্চিম সীমানা পর্যন্ত এই সমভূমি বিস্তৃত। এর মাটি কিছুটা লবণাক্ত এবং জোয়ার-ভাটার প্রভাব এখানে স্পষ্ট। কক্সবাজারের দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতও এই অঞ্চলের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য।
- চট্টগ্রাম উপকূলীয় সমভূমি: এটি কর্ণফুলী নদী ও বঙ্গোপসাগরের মাঝে অবস্থিত একটি সরু উপকূলীয় সমভূমি।
- জলাভূমি ও বিল অঞ্চল (Wetlands and Beel Areas): সিলেট অঞ্চলের হাওরসমূহ (যেমন - হাকালুকি, টাঙ্গুয়া) এবং ফরিদপুর, পাবনা, রাজশাহী অঞ্চলের চলনবিল ও অন্যান্য বিলগুলোও প্লাবন সমভূমির বিশেষ রূপ। বর্ষাকালে এগুলো বিশাল জলাশয়ে পরিণত হয়।
-
প্লাবন সমভূমির জীবনযাত্রা ও কৃষি: এই অঞ্চলের উর্বর মাটি এবং পানির সহজলভ্যতা কৃষিকাজকে সহজ করেছে। ধান, পাট, গম, আখ, ডাল, তৈলবীজ, বিভিন্ন ধরণের সবজি – সবই এখানে প্রচুর পরিমাণে জন্মে। মাছ চাষও এখানকার মানুষের একটি প্রধান জীবিকা। যেহেতু জমি সমতল, তাই যোগাযোগ ব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে ভালো (যদিও বর্ষায় নৌকাই প্রধান বাহন হয়ে ওঠে অনেক জায়গায়)। তবে বন্যা, নদী ভাঙন, ঘূর্ণিঝড় (উপকূলীয় অঞ্চলে) এখানকার মানুষের জীবনের নিত্যনৈমিত্তিক চ্যালেঞ্জ।
উপকূলীয় অঞ্চলের বিশেষত্ব
বাংলাদেশের দক্ষিণ অংশ জুড়ে রয়েছে বিশাল উপকূল রেখা। এখানকার ভূমিরূপ কিছুটা ভিন্ন ধরণের:
- জোয়ার-ভাটার প্রভাব: সমুদ্রের কাছাকাছি হওয়ায় প্রতিদিন জোয়ারের সময় পানি ভেতরের দিকে ঢুকে আসে এবং ভাটার সময় নেমে যায়। এর ফলে এখানকার মাটি ও পানিতে লবণের মাত্রা বেশি থাকে।
- সুন্দরবন: এটি পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, যা এই উপকূলীয় অঞ্চলের একটি বিশেষ সম্পদ। এখানকার গাছপালা লবণাক্ত পানিতে টিকে থাকার জন্য বিশেষভাবে অভিযোজিত (যেমন - শ্বাসমূল)। এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড়ের বিরুদ্ধে একটি বিশাল ঢাল হিসেবে কাজ করে।
- সৈকত ও দ্বীপ: কক্সবাজারের দীর্ঘ বালুকাময় সৈকত এবং সেন্ট মার্টিন, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, হাতিয়া, সন্দ্বীপের মতো বিভিন্ন দ্বীপ এখানকার ভূমিরূপের অংশ।
ভূমিরূপের প্রভাব: কৃষি, বসতি ও যোগাযোগ
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভূমিরূপ সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রার উপর নানাভাবে প্রভাব ফেলে:
- কৃষি: প্লাবন সমভূমির উর্বর মাটিতে সহজেই নানা ফসল ফলে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। পাহাড়ি অঞ্চলে জুম চাষ বা ফলের বাগান হয়। বরেন্দ্র বা মধুপুরের মতো উঁচু ভূমিতে ভিন্ন ধরণের ফসল বা বন দেখা যায়। উপকূলীয় লবণাক্ত মাটিতে নির্দিষ্ট কিছু ফসল (যেমন - তরমুজ, কিছু ধানের জাত) ভালো হয়।
- বসতি: স্বাভাবিকভাবেই সমতল, উর্বর এবং বন্যা তুলনামূলক কম হয় এমন এলাকায় জনবসতি ঘন হয়। প্লাবন সমভূমিতে তাই সবচেয়ে বেশি মানুষ বাস করে। পাহাড়ী বা দুর্গম এলাকায় বসতি অনেক কম ঘন।
- যোগাযোগ: সমতল ভূমিতে সড়ক, রেল ও নৌপথে যোগাযোগ সহজ। কিন্তু পাহাড়ী অঞ্চলে রাস্তাঘাট তৈরি করা কঠিন ও ব্যয়বহুল। আবার বর্ষাকালে প্লাবন সমভূমির অনেক এলাকা পানিতে ডুবে গেলে নৌকাই যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হয়ে ওঠে।
- প্রাকৃতিক দুর্যোগ: ভূমিরূপ অনুযায়ী প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধরণও ভিন্ন হয়। পাহাড়ী অঞ্চলে ভূমিধস, প্লাবন সমভূমিতে বন্যা ও নদী ভাঙন এবং উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকি বেশি থাকে।
উপসংহার
তাহলে আমরা দেখলাম যে, বাংলাদেশ ছোট একটি দেশ হলেও এর ভূমিরূপ বেশ বৈচিত্র্যময়। উঁচু পাহাড় থেকে শুরু করে বিস্তীর্ণ সমভূমি, পুরোনো সোপান এলাকা থেকে শুরু করে বিশাল বদ্বীপ আর দীর্ঘ উপকূল – সবই রয়েছে এখানে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভূমিরূপ কেমন তা জানার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি কেন বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরণের ফসল হয়, কেন এক জায়গায় মানুষ বেশি বাস করে আর অন্য জায়গায় কম, কিংবা কেন এক এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা অন্য এলাকা থেকে আলাদা। প্রকৃতির এই বৈচিত্র্যই বাংলাদেশকে করেছে অনন্য সুন্দর ও সম্পদে পরিপূর্ণ। আমাদের উচিত এই প্রাকৃতিক গঠনকে জানা, বোঝা এবং এর সুরক্ষায় সচেতন হওয়া।
আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভূমিরূপ কেমন এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url