আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে বাংলাদেশের ভূমিরূপ কয়টি ও কী কী? বিস্তারিত আলোচনা নিয়ে আলোচনা করব।
বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। এর বেশিরভাগ এলাকাই সমতল ভূমি। কিন্তু ভালোভাবে দেখলে বোঝা যায়, এই দেশের সব জায়গা একরকম নয়। কোথাও উঁচু পাহাড়, কোথাও ঢেউ খেলানো লাল মাটির এলাকা, আবার কোথাও বিশাল সমভূমি। তাই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, বাংলাদেশের ভূমিরূপ কয়টি ভাগে বিভক্ত? এই লেখায় আমরা সহজ ভাষায় বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ, তাদের গঠন, বৈশিষ্ট্য এবং আমাদের জীবনে এদের প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত জানব।
বাংলাদেশের ভূমিরূপ প্রধানত কয় প্রকার?
ভূগোলবিদরা বাংলাদেশের সমস্ত ভূমি বা জমিকে এর গঠন ও উচ্চতার উপর ভিত্তি করে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। এই ভাগগুলো হলো:
1. টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ (Tertiary Hills)
2. প্লাইস্টোসিন কালের সোপান অঞ্চল বা চত্বরভূমি (Pleistocene Terraces)
3. সাম্প্রতিক কালের প্লাবন সমভূমি (Recent Floodplains)
মজার ব্যাপার হলো, এই তিনটি ভাগের মধ্যে সাম্প্রতিক কালের প্লাবন সমভূমির পরিমাণই সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৮০%। বাকি ২০% এলাকার মধ্যে প্রায় ১২% হলো টারশিয়ারি যুগের পাহাড় আর প্রায় ৮% হলো প্লাইস্টোসিন কালের সোপান অঞ্চল।
চলুন, এবার এই তিনটি ভাগ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
১. টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ (Tertiary Hills)
'টারশিয়ারি যুগ' মানে হলো আজ থেকে অনেক অনেক বছর আগের একটা সময় (প্রায় ২ থেকে ৬.৫ কোটি বছর আগে)। এই সময়ে হিমালয় পর্বত তৈরি হওয়ার সময় আমাদের দেশের কিছু অংশেও পাহাড় সৃষ্টি হয়েছিল। এগুলোই হলো টারশিয়ারি যুগের পাহাড়।
এই পাহাড়গুলো কোথায় দেখা যায়?
বাংলাদেশের মোট এলাকার প্রায় ১২% জুড়ে এই পাহাড়গুলো রয়েছে। এগুলো মূলত দেশের দুটি অঞ্চলে দেখা যায়:
- দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে (রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার এবং চট্টগ্রামের কিছু অংশ)
- উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে (সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনার কিছু অংশ)
দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহ
এই অঞ্চলের পাহাড়গুলো বেশ উঁচু। এদের গড় উচ্চতা প্রায় ৬১০ মিটার বা ২০০০ ফুট। এই এলাকার পাহাড়গুলো বেলেপাথর, শেল পাথর ও কর্দম (এক ধরনের কাদা) দিয়ে তৈরি। বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের চূড়াগুলো এখানেই অবস্থিত। যেমন:
- তাজিংডং (বিজয়): উচ্চতা প্রায় ১২৩১ মিটার (বান্দরবান)।
- কেওক্রাডং: উচ্চতা প্রায় ৯৮৬ মিটার (বান্দরবান)।
- অন্যান্য উঁচু চূড়া যেমন মোদক মুয়াল, পিরামিড, লুলাইং ইত্যাদিও এখানেই রয়েছে।
এই পাহাড়গুলো উত্তর থেকে দক্ষিণে লম্বাভাবে বিস্তৃত। এখানকার নদীগুলোও বেশ খরস্রোতা, যেমন - কর্ণফুলী, সাঙ্গু, মাতামুহুরী।
উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহ
এই অঞ্চলের পাহাড়গুলো দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ের চেয়ে কম উঁচু। এদের গড় উচ্চতা সাধারণত ২৪৪ মিটারের বেশি হয় না, তবে কিছু কিছু চূড়া আরও বেশি উঁচু হতে পারে। এগুলোকে স্থানীয়ভাবে 'টিলা' বলা হয়। যেমন:
- চিকনাগুল টিলা
- খাসিয়া ও জয়ন্তিয়া টিলা
এই টিলাগুলোর উচ্চতা সাধারণত ৩০ থেকে ৯০ মিটারের মধ্যে থাকে। এগুলো সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ জেলায় বেশি দেখা যায়। এছাড়া ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী অঞ্চলেও কিছু টিলা দেখা যায়। এখানকার মাটি ও পাথর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ের মতই।
পাহাড়ি অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য
- তুলনামূলকভাবে বেশি উঁচু ভূমি।
- মাটি ও পাথর অপেক্ষাকৃত পুরোনো।
- ঢালু ভূমি, তাই বৃষ্টির পানি দ্রুত নেমে যায়।
- নদীগুলো খরস্রোতা।
- ঘন বনভূমি (যদিও বর্তমানে অনেক কমে গেছে)।
- ভূমিধসের ঝুঁকি থাকে।
পাহাড়ি অঞ্চলের গুরুত্ব
- বনজ সম্পদ: এখানকার বন থেকে মূল্যবান কাঠ ও অন্যান্য সম্পদ পাওয়া যায়।
- কৃষি: পাহাড়ের ঢালে জুম চাষ এবং চা, রাবার, আনারস ইত্যাদি ফলের চাষ হয়।
- পর্যটন: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন এলাকা।
- প্রাণিবৈচিত্র্য: বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল।
- নদীর উৎস: অনেক ছোট নদীর উৎস এই পাহাড়ি এলাকা।
২. প্লাইস্টোসিন কালের সোপান অঞ্চল বা চত্বরভূমি (Pleistocene Terraces)
'প্লাইস্টোসিন কাল' হলো টারশিয়ারি যুগের পরের একটি সময় (প্রায় ২৫ লক্ষ থেকে ১২ হাজার বছর আগে)। এই সময়ে পৃথিবীর তাপমাত্রা অনেক কমে গিয়েছিল এবং অনেক বরফ জমেছিল। তখন নদীর পানি কমে যাওয়ায় কিছু উঁচু ভূমির সৃষ্টি হয়, যেগুলো বন্যার পানিতে সচরাচর ডোবে না। এই উঁচু ভূমিগুলোকেই সোপান অঞ্চল বা চত্বরভূমি বলা হয়। 'সোপান' শব্দের অর্থ হলো সিঁড়ির ধাপ। নদীর পাশের প্লাবন সমভূমি থেকে এই এলাকাগুলো কিছুটা ধাপের মতো উঁচু, তাই এই নাম।
এই সোপান অঞ্চল কোথায় দেখা যায়?
বাংলাদেশের মোট এলাকার প্রায় ৮% জুড়ে এই সোপান অঞ্চল রয়েছে। এগুলো মূলত তিনটি বড় এলাকায় বিভক্ত:
- বরেন্দ্রভূমি: দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে (রাজশাহী, নওগাঁ, বগুড়া, জয়পুরহাট, রংপুর ও দিনাজপুরের অংশবিশেষ)।
- মধুপুর ও ভাওয়াল গড়: দেশের মধ্যাঞ্চলে (ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও ঢাকার অংশবিশেষ)।
- লালমাই পাহাড়: কুমিল্লা শহরের কাছে অবস্থিত।
বরেন্দ্রভূমি
এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সোপান অঞ্চল। এর আয়তন প্রায় ৯,৩২০ বর্গ কিলোমিটার। এখানকার মাটি কিছুটা লালচে এবং ধূসর রঙের হয়। মাটি তুলনামূলকভাবে কম উর্বর এবং পানি ধারণ ক্ষমতা কম। এই এলাকাটি আশেপাশের প্লাবন সমভূমি থেকে প্রায় ৬ থেকে ১২ মিটার উঁচু। এখানকার প্রধান ফসল ধান, তবে আম ও লিচুর জন্যও এই এলাকা বিখ্যাত।
মধুপুর ও ভাওয়াল গড়
এই দুটি এলাকা আসলে একটাই বড় সোপান অঞ্চলের দুটি অংশ। টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলার অংশকে মধুপুর গড় এবং গাজীপুর ও ঢাকা জেলার অংশকে ভাওয়াল গড় বলা হয়। এর মোট আয়তন প্রায় ৪,১০৩ বর্গ কিলোমিটার। এখানকার মাটিও লালচে ও কাঁকরময়। এই এলাকাটি প্লাবন সমভূমি থেকে প্রায় ৬ থেকে ৩০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। এখানে শাল গাছের বন দেখা যায়, যা 'গজারি বন' নামেও পরিচিত। আনারস ও কাঁঠালের জন্যও এই এলাকা বিখ্যাত।
লালমাই পাহাড়
এটি একটি ছোট সোপান এলাকা, যা কুমিল্লা শহরের কাছে অবস্থিত। এর আয়তন মাত্র ৩৪ বর্গ কিলোমিটার। এটি আসলে ঠিক পাহাড় নয়, বরং একটি উঁচু চত্বরভূমি যা লম্বায় প্রায় ৮ কিলোমিটার এবং চওড়ায় প্রায় ৪.৮ কিলোমিটার। এর গড় উচ্চতা প্রায় ২১ মিটার। এখানকার মাটিও লালচে এবং নুড়ি, বালি ও কাদা মিশ্রিত। এখানে কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনও পাওয়া গেছে।
সোপান অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য
- আশেপাশের প্লাবন সমভূমি থেকে কিছুটা উঁচু (৬-৩০ মিটার)।
- মাটি লালচে বা ধূসর রঙের এবং কাঁকরময়।
- তুলনামূলকভাবে কম উর্বর (তবে সেচ দিলে ভালো ফসল হয়)।
- সাধারণত বন্যার পানি ওঠে না।
- অনেক জায়গায় প্রাকৃতিক বনভূমি (যেমন শালবন) দেখা যায়।
সোপান অঞ্চলের গুরুত্ব
- কৃষি: সেচের মাধ্যমে ধান এবং অন্যান্য ফসল (যেমন আম, কাঁঠাল, আনারস) চাষ করা হয়।
- বনজ সম্পদ: মধুপুর ও ভাওয়াল গড়ের শালবন গুরুত্বপূর্ণ।
- যোগাযোগ: উঁচু হওয়ায় রাস্তাঘাট তৈরি ও বসতি স্থাপনের জন্য সুবিধাজনক।
- প্রত্নতত্ত্ব: লালমাই পাহাড়ের মতো কিছু এলাকায় ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে।
৩. সাম্প্রতিক কালের প্লাবন সমভূমি (Recent Floodplains)
'সাম্প্রতিক কাল' বলতে প্লাইস্টোসিন কালের পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বোঝায় (শেষ ১২ হাজার বছর)। এই সময়ে নদীগুলো হিমালয় এবং অন্যান্য উঁচু এলাকা থেকে প্রচুর পলিমাটি বয়ে এনেছে। এই পলি জমা হয়েই বাংলাদেশের বিশাল সমভূমি তৈরি হয়েছে। প্রতি বছর বর্ষাকালে বা বন্যায় নদীর পানি যখন দুই কূল ছাপিয়ে যায়, তখন পানির সাথে বয়ে আনা পলি আশেপাশের জমিতে জমা হয়। এভাবেই ধীরে ধীরে এই প্লাবন সমভূমি গঠিত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অংশ কোনটি?
এই প্লাবন সমভূমিই হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অংশ। দেশের মোট আয়তনের প্রায় ৮০% এলাকাই এই সমভূমির অন্তর্গত। এর আয়তন প্রায় ১,২৪,২৬৬ বর্গ কিলোমিটার।
প্লাবন সমভূমির গঠন ও বৈশিষ্ট্য
- গঠন: নদীর বয়ে আনা পলি (বালি, পলি ও কাদা) জমে এই সমভূমি তৈরি হয়েছে।
- উচ্চতা: এই এলাকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে খুব বেশি উঁচু নয়, বেশিরভাগ জায়গার উচ্চতা ৯ মিটারের কম। তবে উত্তর দিকের কিছু এলাকার উচ্চতা কিছুটা বেশি (প্রায় ৩০ মিটার পর্যন্ত)।
- মাটি: এখানকার মাটি খুব উর্বর, যা কৃষিকাজের জন্য খুবই উপযোগী।
- বন্যা: বর্ষাকালে বা বন্যায় এই এলাকার বেশিরভাগ অংশই পানিতে ডুবে যায়।
- নদীনালা: পুরো এলাকা জুড়ে অসংখ্য নদী, খাল, বিল ছড়িয়ে আছে।
- ভূমিকম্প: কিছু কিছু এলাকা সামান্য ভূমিকম্প প্রবণ।
প্লাবন সমভূমির প্রকারভেদ
এই বিশাল সমভূমিকে আবার এর অবস্থান ও গঠন অনুযায়ী কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়:
1. পাদদেশীয় সমভূমি (Piedmont Plain): পাহাড়ের পায়ের কাছে বা পাদদেশে যে সমভূমি দেখা যায়। যেমন - রংপুর ও দিনাজপুরের কিছু অংশ যা হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত।
2. নদী বিধৌত সমভূমি (River Floodplains): প্রধান প্রধান নদী (পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ইত্যাদি) এবং তাদের শাখা-প্রশাখার মাধ্যমে গঠিত সমভূমি। এটাই সবচেয়ে বড় অংশ।
3. বদ্বীপ অঞ্চল (Deltaic Plain): নদীর মোহনার কাছে ব-দ্বীপ আকারে গঠিত সমভূমি। একে আবার সক্রিয়, পরিণত ও মৃত বদ্বীপ অঞ্চলে ভাগ করা যায়। সুন্দরবন এই অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
4. উপকূলীয় বা জোয়ার-ভাটার সমভূমি (Coastal Tidal Plain): দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সমুদ্র উপকূল বরাবর যে সমভূমি, যেখানে জোয়ার-ভাটার প্রভাব দেখা যায়।
5. হাওর অঞ্চল (Haor Basin): উত্তর-পূর্ব দিকে সিলেট অঞ্চলের নিচু এলাকা, যা বর্ষাকালে বিশাল জলাভূমিতে পরিণত হয়।
প্লাবন সমভূমির গুরুত্ব
- কৃষি: উর্বর মাটির কারণে এটি বাংলাদেশের প্রধান কৃষি এলাকা। ধান, পাট, গম, ডাল, তৈলবীজসহ প্রায় সব ধরনের ফসল এখানে উৎপন্ন হয়। একে 'বাংলাদেশের শস্যভাণ্ডার' বলা হয়।
- জনবসতি: সমতল ও উর্বর হওয়ায় দেশের বেশিরভাগ মানুষ এখানেই বাস করে।
- যোগাযোগ: নদীগুলো প্রাকৃতিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এছাড়া সড়ক ও রেলপথেরও বিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে।
- মৎস্য সম্পদ: অসংখ্য নদী, খাল, বিল, হাওর থাকায় এখানে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়।
- অর্থনীতি: কৃষি, মৎস্য, শিল্প ও ব্যবসার মূল কেন্দ্র এই সমভূমি অঞ্চল।
ভূমিরূপের প্রভাব: আমাদের জীবনে ভূমিরূপ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বাংলাদেশের এই বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ আমাদের জীবনযাত্রা, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির উপর নানাভাবে প্রভাব ফেলে।
* কৃষিকাজ: কোথায় কোন ফসল ভালো হবে তা অনেকাংশে নির্ভর করে ভূমিরূপ ও মাটির ধরনের উপর। যেমন - সমভূমিতে ধান, পাট; পাহাড়ে চা, ফল; সোপান অঞ্চলে আনারস, কাঁঠাল ইত্যাদি।
* বসতি স্থাপন: মানুষ সাধারণত বসবাসের জন্য সমতল ও বন্যা থেকে নিরাপদ উঁচু জায়গা বেছে নেয়। তাই প্লাবন সমভূমির উঁচু অংশে এবং সোপান অঞ্চলে জনবসতি বেশি ঘন।
* যোগাযোগ ব্যবস্থা: সমতল এলাকায় সড়ক ও রেলপথ তৈরি করা সহজ। কিন্তু পাহাড়ি এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা কঠিন ও ব্যয়বহুল। আবার নদীভিত্তিক সমভূমিতে নৌপথ খুব গুরুত্বপূর্ণ।
* অর্থনীতি: ভূমিরূপ অনুযায়ী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ভিন্ন হয়। পাহাড়ে বনজ সম্পদ ও পর্যটন, সমভূমিতে কৃষি ও শিল্প, উপকূলে মৎস্য ও লবণ চাষ প্রধান।
* প্রাকৃতিক দুর্যোগ: পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধস, সমতল ও উপকূলীয় এলাকায় বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি বেশি থাকে। ভূমিরূপ এই দুর্যোগগুলোর কারণ ও প্রভাবকে প্রভাবিত করে।
* সংস্কৃতি: বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-পরিচ্ছদ এমনকি উৎসবও সেখানকার ভূমিরূপ ও প্রকৃতির দ্বারা কিছুটা প্রভাবিত হয়।
উপসংহার (শেষ কথা)
তাহলে আমরা জানতে পারলাম যে, বাংলাদেশের ভূমিরূপ কয়টি? উত্তর হলো প্রধানত তিনটি: টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ, প্লাইস্টোসিন কালের সোপান অঞ্চল এবং সাম্প্রতিক কালের প্লাবন সমভূমি। যদিও প্লাবন সমভূমিই দেশের বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে রয়েছে, অন্য দুটি অঞ্চলও তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব নিয়ে বিদ্যমান। এই বৈচিত্র্যময় ভূমিরূপই বাংলাদেশকে তার অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সম্পদে সমৃদ্ধ করেছে। আমাদের দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য এই ভূমিরূপ সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি।
সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQs)
প্রশ্ন ১: বাংলাদেশের ভূমিরূপ প্রধানত কত প্রকার?
উত্তর: বাংলাদেশের ভূমিরূপকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়: (১) টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ, (২) প্লাইস্টোসিন কালের সোপান অঞ্চল, এবং (৩) সাম্প্রতিক কালের প্লাবন সমভূমি।
প্রশ্ন ২: বাংলাদেশের কোন অঞ্চলের ভূমিরূপ সবচেয়ে উঁচু?
উত্তর: বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ সবচেয়ে উঁচু। এখানকার গড় উচ্চতা প্রায় ৬১০ মিটার এবং এখানেই দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গগুলো অবস্থিত।
প্রশ্ন ৩: প্লাবন সমভূমি কীভাবে গঠিত হয়েছে?
উত্তর: নদীগুলো হিমালয় ও অন্যান্য উঁচু অঞ্চল থেকে পলিমাটি (বালি, পলি ও কাদা) বয়ে আনে। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এই পলি জমা হয়েই বাংলাদেশের বিশাল প্লাবন সমভূমি গঠিত হয়েছে। প্রতি বছর বন্যার সময় নতুন পলি জমা হয়ে এই প্রক্রিয়া এখনও চলছে।
প্রশ্ন ৪: বরেন্দ্রভূমি কোন ধরনের ভূমিরূপের অংশ?
উত্তর: বরেন্দ্রভূমি প্লাইস্টোসিন কালের সোপান অঞ্চলের একটি অংশ। এটি দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত একটি উঁচু, লালচে মাটির এলাকা।
প্রশ্ন ৫: বাংলাদেশের মোট কত শতাংশ এলাকা প্লাবন সমভূমি?
উত্তর: বাংলাদেশের মোট আয়তনের প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকাই হলো সাম্প্রতিক কালের প্লাবন সমভূমি। এটিই দেশের সবচেয়ে বিস্তৃত ভূমিরূপ।
আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক।
বাংলাদেশের ভূমিরূপ কয়টি ও কী কী? বিস্তারিত আলোচনা এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url