বাংলাদেশে আজকের সোনার দাম - বিস্তারিত জানুন
আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে বাংলাদেশে আজকের সোনার দাম - বিস্তারিত জানুন নিয়ে আলোচনা করব।
বাংলাদেশে আজকের সোনার দাম
বাংলাদেশে সোনা শুধু একটি মূল্যবান ধাতুই নয়, এটি ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতীক। বিয়েশাদী থেকে শুরু করে যেকোনো শুভ অনুষ্ঠান, এমনকি নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবেও সোনার কদর অনেক। দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বড় ব্যবসায়ীরাও সোনার দামের প্রতি তীক্ষ্ণ নজর রাখেন। প্রতিদিনের সোনার দাম জানার আগ্রহ প্রায় সবার মধ্যেই দেখা যায়।
বিশেষ করে যারা সোনা কেনা বা বিক্রি করার পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য আজকের সঠিক দাম জানাটা অত্যন্ত জরুরি। এই ব্লগে আমরা বাংলাদেশে আজকের, অর্থাৎ ১২ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখের সোনার সর্বশেষ দাম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আজকের সোনার দাম (১২ এপ্রিল, ২০২৫) - বাজুস নির্ধারিত
বাংলাদেশে সোনার দাম নির্ধারণের কাজটি করে থাকে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। তারা আন্তর্জাতিক বাজারের দাম, দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা, ডলারের বিনিময় হার এবং অন্যান্য কিছু বিষয় বিবেচনা করে সোনার দাম নির্ধারণ ও ঘোষণা করে। আসুন, বাজুসের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী আজকের বিভিন্ন ক্যারেটের সোনার দাম জেনে নিই (দাম প্রতি ভরি হিসেবে দেওয়া হলো):
সোনার ক্যারেট | প্রতি ভরি দাম (প্রায়) | প্রতি গ্রাম দাম (প্রায়) |
---|---|---|
২২ ক্যারেট (৯১.৬% খাঁটি) | ৳ ১,২৫,০০০ | ৳ ১০,৭১৭ |
২১ ক্যারেট (৮৭.৫% খাঁটি) | ৳ ১,১৯,৫০০ | ৳ ১০,২৫৪ |
১৮ ক্যারেট (৭৫.০% খাঁটি) | ৳ ১,০২,৫০০ | ৳ ৮,৭৮৮ |
সনাতন পদ্ধতির সোনা | ৳ ৮৫,০০০ | ৳ ৭,২৮৮ |
সোনার ক্যারেট কী? বিভিন্ন ক্যারেটের মধ্যে পার্থক্য বুঝুন
আমরা প্রায়ই ২২ ক্যারেট, ২১ ক্যারেট বা ১৮ ক্যারেট সোনার কথা শুনে থাকি। কিন্তু এই 'ক্যারেট' আসলে কী? ক্যারেট হলো সোনার বিশুদ্ধতা বা খাঁটিত্ব পরিমাপের একক। ২৪ ক্যারেট সোনাকে সবচেয়ে খাঁটি সোনা হিসেবে ধরা হয়, যাতে ৯৯.৯৯% সোনা থাকে। তবে ২৪ ক্যারেট সোনা খুব নরম হওয়ায় এটি দিয়ে গহনা তৈরি করা কঠিন এবং টেকসই হয় না। তাই গহনা তৈরির জন্য সোনার সাথে অন্যান্য ধাতু যেমন তামা, রুপা, দস্তা ইত্যাদি মেশানো হয়। এই মিশ্রণের অনুপাতের ওপর ভিত্তি করেই ক্যারেট নির্ধারিত হয়।
২২ ক্যারেট সোনা
এতে ৯১.৬৭% খাঁটি সোনা এবং বাকি ৮.৩৩% অন্যান্য ধাতু থাকে। এই সোনা গহনা তৈরির জন্য বাংলাদেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে খুবই জনপ্রিয়। এটি যথেষ্ট টেকসই এবং দেখতে উজ্জ্বল হয়। সাধারণত দামী এবং ঐতিহ্যবাহী গহনা ২২ ক্যারেট সোনা দিয়েই তৈরি করা হয়।
২১ ক্যারেট সোনা
এতে ৮৭.৫% খাঁটি সোনা এবং ১২.৫% অন্যান্য ধাতু মেশানো থাকে। ২২ ক্যারেটের চেয়ে এটি কিছুটা কম খাঁটি এবং দামেও কিছুটা কম। এটিও গহনা তৈরির জন্য বেশ ব্যবহৃত হয় এবং যথেষ্ট টেকসই। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ২১ ক্যারেট সোনার গহনা বেশ জনপ্রিয়।
১৮ ক্যারেট সোনা
এতে ৭৫% খাঁটি সোনা এবং ২৫% অন্যান্য ধাতু থাকে। এটি ২১ ও ২২ ক্যারেটের চেয়ে বেশি টেকসই এবং শক্ত, কিন্তু এতে সোনার পরিমাণ কম থাকে। সাধারণত পাথর বসানো বা জটিল ডিজাইনের গহনার জন্য ১৮ ক্যারেট সোনা ব্যবহার করা হয়, কারণ এটি পাথরকে ভালোভাবে ধরে রাখতে পারে। দাম কম হওয়ায় এটি অনেকের কাছে পছন্দের।
সনাতন পদ্ধতির সোনা
এই ধরনের সোনার কোনো নির্দিষ্ট ক্যারেট মান থাকে না। সাধারণত পুরোনো গহনা গলিয়ে বা স্থানীয় কারি গরদের দ্বারা তৈরি করা হয়। এর বিশুদ্ধতা ১৮ ক্যারেটের কম হতে পারে এবং মানের নিশ্চয়তা কম থাকে। তাই সনাতন পদ্ধতির সোনা কেনার সময় এর বিশুদ্ধতা যাচাই করে নেওয়া জরুরি। এর দাম অন্যান্য ক্যারেটের সোনার চেয়ে কম থাকে।
বাজুস (BAJUS) কী এবং সোনার দাম নির্ধারণে তাদের ভূমিকা
বাজুস (BAJUS) এর পুরো নাম হলো বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি। এটি বাংলাদেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ী এবং স্বর্ণশিল্পীদের একটি জাতীয় সংগঠন। বাজুসের অন্যতম প্রধান কাজ হলো দেশের বাজারে সোনার দাম নির্ধারণ এবং তা নিয়ন্ত্রণ করা। তারা আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দামের পরিবর্তন, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার, স্থানীয় চাহিদা ও সরবরাহ, সরকারের নীতিমালা (যেমন: আমদানি শুল্ক) ইত্যাদি বিষয় বিশ্লেষণ করে একটি যৌক্তিক দাম নির্ধারণের চেষ্টা করে। বাজুস নিয়মিতভাবে সোনার দাম হালনাগাদ করে এবং তা সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করে। তাই বাংলাদেশে সোনা কেনা বা বেচার ক্ষেত্রে বাজুস নির্ধারিত দামকেই ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়।
কেন সোনার দাম প্রতিদিন উঠা-নামা করে?
অনেকেই অবাক হন যে সোনার দাম কেন এত ঘন ঘন পরিবর্তন হয়। এর পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। সোনার দাম কেবল স্থানীয় বাজারের ওপর নির্ভর করে না, বরং এটি একটি বৈশ্বিক পণ্য। আসুন, দাম পরিবর্তনের মূল কারণগুলো সংক্ষেপে জেনে নিই:
- আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব: বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতির দেশের সোনার বাজার (যেমন: লন্ডন, নিউইয়র্ক, সাংহাই) এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারে সোনার দামের পরিবর্তন সরাসরি বাংলাদেশের বাজারে প্রভাব ফেলে।
- ডলারের দাম: আন্তর্জাতিক বাজারে সোনা সাধারণত মার্কিন ডলারে কেনাবেচা হয়। তাই ডলারের দাম বাড়লে বা কমলে সোনার আমদানি খরচ বাড়ে বা কমে, যা স্থানীয় বাজারে সোনার দামকে প্রভাবিত করে।
- দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা: দেশের মুদ্রাস্ফীতি, সুদের হার, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ইত্যাদি সোনার দামকে প্রভাবিত করতে পারে। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়লে মানুষ প্রায়ই সোনাকে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বেছে নেয়, ফলে চাহিদা বাড়ে এবং দামও বাড়ে।
- সরকারি নীতি ও কর: সরকার সোনা আমদানির ওপর কী পরিমাণ শুল্ক বা কর আরোপ করছে, তার ওপরও দাম নির্ভর করে। শুল্ক বাড়লে সোনার দাম বেড়ে যায়।
- চাহিদা ও যোগান: যেকোনো পণ্যের মতো সোনার দামও এর চাহিদা ও যোগানের ওপর নির্ভরশীল। বিয়ের মৌসুম বা উৎসবের সময় সাধারণত সোনার চাহিদা বাড়ে, যা দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। আবার, বাজারে যোগান কম থাকলে দাম বাড়তে পারে।
- ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি: যুদ্ধ, রাজনৈতিক অস্থিরতা বা বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিলে বিশ্বব্যাপী সোনার চাহিদা বেড়ে যায়, কারণ এটি 'নিরাপদ আশ্রয়' (safe haven) হিসেবে পরিচিত। এর ফলে দাম বৃদ্ধি পায়।
সোনা কেনার সময় কী কী বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন?
সোনা একটি মূল্যবান সম্পদ। তাই এটি কেনার সময় কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি যাতে আপনি ঠকে না যান এবং সঠিক জিনিসটি পান। নিচে কিছু জরুরি টিপস দেওয়া হলো:
- হলমার্ক দেখে কিনুন: আসল সোনা চেনার অন্যতম নির্ভরযোগ্য উপায় হলো হলমার্ক চিহ্ন। বাংলাদেশে সাধারণত সরকারি অনুমোদিত হলমার্কিং ল্যাবরেটরি থেকে এই চিহ্ন দেওয়া হয়, যা সোনার ক্যারেট বা বিশুদ্ধতার গ্যারান্টি দেয়। গহনার গায়ে খোদাই করা হলমার্ক চিহ্ন (যেমন বাজুসের লোগো, ক্যারেট নম্বর, হলমার্কিং সেন্টারের চিহ্ন) দেখে কিনুন।
- ক্যারেট নিশ্চিত হোন: আপনি কত ক্যারেটের সোনা কিনছেন (২২, ২১, বা ১৮ ক্যারেট) তা জেনে নিন এবং মেমোতে তা উল্লেখ আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।
- ওজন সঠিকভাবে মাপুন: ডিজিটাল ওজনের মেশিনে সোনার ওজন সঠিকভাবে মেপে নিন। ওজন গ্রামে নেওয়া হয় এবং মেমোতে তা উল্লেখ করা থাকে।
- বাজার দর যাচাই করুন: কেনার আগে বাজুস নির্ধারিত সর্বশেষ দাম জেনে নিন। প্রয়োজনে কয়েকটি দোকান ঘুরে দাম এবং মজুরি সম্পর্কে ধারণা নিন।
- মেমো বা রশিদ সংগ্রহ করুন: সোনার গহনা কেনার পর অবশ্যই বিক্রেতার কাছ থেকে একটি পাকা রশিদ বা মেমো নিন। মেমোতে সোনার ওজন, ক্যারেট, দাম, মজুরি, ভ্যাট এবং বিক্রেতার নাম-ঠিকানা ও স্বাক্ষর স্পষ্ট করে লেখা থাকতে হবে। এই মেমোটি যত্ন করে রাখুন, কারণ এটি পরবর্তীতে বিক্রি বা বদলানোর সময় প্রয়োজন হবে।
- বিশ্বস্ত ও পরিচিত দোকান থেকে কিনুন: সম্ভব হলে পরিচিত বা সুনাম আছে এমন জুয়েলারি দোকান থেকে সোনা কিনুন। এতে ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
- মজুরি সম্পর্কে জানুন: সোনার দামের সাথে গহনার মজুরি (তৈরির খরচ) যোগ হয়। ডিজাইনের ওপর ভিত্তি করে মজুরি ভিন্ন হতে পারে। কেনার আগেই মজুরির হার জেনে নিন এবং তা মেমোতে উল্লেখ আছে কিনা দেখুন।
হলমার্ক চিহ্ন কেন এত জরুরি?
আগেই বলেছি, হলমার্ক চিহ্ন সোনার বিশুদ্ধতার প্রমাণ দেয়। যখন আপনি হলমার্ক করা সোনা কিনছেন, তখন আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে আপনি যে ক্যারেটের জন্য দাম দিচ্ছেন, সেই পরিমাণ খাঁটি সোনা পাচ্ছেন। এতে বিক্রেতার প্রতারণা করার সুযোগ কমে যায়। হলমার্ক ছাড়া সোনা কিনলে তার বিশুদ্ধতা নিয়ে সন্দেহ থাকতে পারে এবং ভবিষ্যতে বিক্রি করার সময় ভালো দাম নাও পেতে পারেন। তাই, একটু বেশি দাম হলেও হলমার্কযুক্ত সোনা কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ। এটি আপনার বিনিয়োগকে সুরক্ষিত রাখে।
বাংলাদেশে সোনার বাজারে বিনিয়োগ: লাভজনক নাকি ঝুঁকিপূর্ণ?
সোনাকে অনেকেই একটি নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে মনে করেন। বিশেষ করে যখন শেয়ার বাজার বা অন্যান্য ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেড়ে যায়, তখন সোনার চাহিদা বাড়ে। এর কারণ হলো, ঐতিহাসিকভাবে দেখা গেছে যে দীর্ঘমেয়াদে সোনার দাম সাধারণত বৃদ্ধি পায় এবং এটি মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে একটি ভালো সুরক্ষা দেয়।
লাভের দিকগুলো:
- নিরাপদ আশ্রয়: অর্থনৈতিক মন্দা বা অনিশ্চয়তার সময় এটি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকে।
- তারল্য: সোনা খুব সহজেই নগদ টাকায় রূপান্তর করা যায়, যা অন্য অনেক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না।
- মুদ্রাস্ফীতির রক্ষা: টাকার মান কমে গেলেও সোনার দাম সাধারণত সেই অনুযায়ী বাড়ে, ফলে আপনার অর্থের ক্রয়ক্ষমতা বজায় থাকে।
- দীর্ঘমেয়াদী রিটার্ন: ঐতিহাসিকভাবে দীর্ঘমেয়াদে সোনা ভালো রিটার্ন দিয়েছে।
ঝুঁকির দিকগুলো:
- দাম পরিবর্তনশীল: স্বল্পমেয়াদে সোনার দাম বেশ উঠা-নামা করতে পারে।
- কোনো আয় হয় না: শেয়ার বা বন্ডের মতো সোনা থেকে নিয়মিত কোনো আয় (যেমন: ডিভিডেন্ড বা সুদ) আসে না। লাভ হয় কেবল দাম বাড়লে বিক্রি করার মাধ্যমে।
- নিরাপত্তা ও সংরক্ষণের খরচ: ভৌত সোনা (গহনা বা বার) রাখলে তার নিরাপত্তা এবং সংরক্ষণের চিন্তা থাকে, যা ব্যয়বহুল হতে পারে।
- মজুরি ও ভ্যাট: গহনা হিসেবে কিনলে মজুরি ও ভ্যাট দিতে হয়, যা বিনিয়োগের খরচ বাড়িয়ে দেয়। বিক্রি করার সময় সাধারণত মজুরি ফেরত পাওয়া যায় না।
বিনিয়োগের জন্য সোনার বার বা কয়েন কেনা গহনা কেনার চেয়ে বেশি লাভজনক হতে পারে, কারণ এতে মজুরি কম থাকে বা থাকে না। তবে যেকোনো বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভালোভাবে জেনেবুঝে এবং নিজের ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
নতুন সোনা বনাম পুরোনো সোনা কেনার সুবিধা-অসুবিধা
অনেকে পুরোনো বা সেকেন্ড-হ্যান্ড সোনা কেনার কথা ভাবেন। এর কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা দুটোই আছে:
পুরোনো সোনা কেনার সুবিধা:
- কম দাম: পুরোনো সোনা সাধারণত নতুন সোনার চেয়ে দামে কিছুটা কম হয়, কারণ এতে মজুরি বাদ দেওয়া হয় বা খুব কম ধরা হয়।
- বাজেটবান্ধব: যাদের বাজেট কম, তারা পুরোনো গহনা কিনে শখ পূরণ করতে পারেন।
পুরোনো সোনা কেনার অসুবিধা:
- বিশুদ্ধতার অনিশ্চয়তা: পুরোনো সোনা যদি হলমার্ক করা না থাকে, তবে এর ক্যারেট বা বিশুদ্ধতা নিয়ে সন্দেহ থাকতে পারে।
- ডিজাইন পুরোনো হতে পারে: পুরোনো গহনার ডিজাইন বর্তমান সময়ের সাথে নাও মিলতে পারে।
- ক্ষয়ক্ষতি থাকতে পারে: পুরোনো গহনায় দাগ বা কিছুটা ক্ষয় হয়ে থাকতে পারে।
- মেমো না থাকা: অনেক সময় পুরোনো সোনার ক্ষেত্রে আসল মেমো পাওয়া যায় না, যা পরবর্তীতে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
অন্যদিকে, নতুন সোনা কিনলে আপনি লেটেস্ট ডিজাইন, হলমার্কের নিশ্চয়তা এবং পাকা মেমো পান, যা মানসিক শান্তি দেয়। তবে এর জন্য আপনাকে বেশি দাম এবং মজুরি দিতে হবে। আপনার প্রয়োজন ও বাজেট অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোনটা আপনার জন্য ভালো।
সোনার গহনার যত্ন নেবেন কীভাবে?
সখের সোনার গহনা দীর্ঘদিন সুন্দর ও উজ্জ্বল রাখতে এর সঠিক যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। কিছু সহজ টিপস:
- আলাদা রাখুন: প্রতিটি গহনা আলাদা নরম কাপড়ে মুড়ে বা জুয়েলারি বক্সে রাখুন যাতে একটির সাথে আরেকটির ঘষা লেগে দাগ না পড়ে।
- রাসায়নিক থেকে দূরে রাখুন: পারফিউম, লোশন, হেয়ার স্প্রে বা পরিষ্কার করার কেমিক্যাল যেন সোনার গহনায় না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখুন। মেকআপ বা সাজগোজ শেষ করে তারপর গহনা পরুন।
- সাবধানে ব্যবহার করুন: ভারী কাজ করার সময়, গোসল করার সময় বা ঘুমানোর সময় গহনা খুলে রাখুন।
- নিয়মিত পরিষ্কার করুন: হালকা গরম পানিতে সামান্য সাবান মিশিয়ে নরম ব্রাশ দিয়ে আলতো করে ঘষে গহনা পরিষ্কার করতে পারেন। এরপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নরম কাপড় দিয়ে মুছে নিন। তবে পাথর বসানো গহনা পরিষ্কারের ক্ষেত্রে বেশি সতর্ক থাকুন বা পেশাদার কারো সাহায্য নিন।
- মাঝে মাঝে পেশাদার পরিষ্কার: বছরে একবার ভালো জুয়েলারি দোকান থেকে গহনা পলিশ বা পরিষ্কার করিয়ে নিতে পারেন।
ভবিষ্যতে সোনার দাম কেমন হতে পারে? (সম্ভাব্য বিশ্লেষণ)
সোনার ভবিষ্যৎ দাম নিয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা কঠিন, কারণ এটি অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। তবে কিছু বিষয় বিবেচনা করে একটি ধারণা পাওয়া যেতে পারে:
- বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি: যদি বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা বা অনিশ্চয়তা বাড়ে, তবে সোনার দাম বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।
- মুদ্রাস্ফীতি: উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির সময় সাধারণত সোনার দাম বাড়ে।
- ডলারের অবস্থান: ডলার শক্তিশালী হলে সোনার দাম কমতে পারে, আর ডলার দুর্বল হলে দাম বাড়তে পারে।
- কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি: বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো যখন সোনা কেনে, তখন দাম বাড়ে।
- প্রযুক্তিখাতে ব্যবহার: ইলেকট্রনিক্স এবং অন্যান্য শিল্পে সোনার চাহিদা বাড়লে তা দামকে প্রভাবিত করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদে সোনার চাহিদা এবং দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে স্বল্পমেয়াদে দামের উঠা-নামা স্বাভাবিক। যারা বিনিয়োগ করতে চান, তাদের উচিত বাজারের গতিবিধি লক্ষ্য রাখা এবং বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
উপসংহার
বাংলাদেশে সোনার দাম একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সূচক এবং সাধারণ মানুষের আগ্রহের বিষয়। আজকের (১২ এপ্রিল, ২০২৫) সোনার দাম জানার পাশাপাশি, আমরা সোনার ক্যারেট, দাম পরিবর্তনের কারণ, কেনার সময় সতর্কতা এবং বিনিয়োগের দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করলাম। আশা করি, এই তথ্যগুলো আপনাদের সোনা কেনা বা এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। মনে রাখবেন, সোনা কেনার আগে সর্বশেষ বাজারদর এবং হলমার্কের বিষয়টি ভালোভাবে যাচাই করে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আপনার মূল্যবান সম্পদ সুরক্ষিত থাকুক।
সোনার দাম সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQs)
প্রশ্ন: আজ বাংলাদেশে ২২ ক্যারেট সোনার দাম কত?
উত্তর: আজ, ১২ এপ্রিল, ২০২৫ অনুযায়ী, বাজুসের ঘোষণা অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম প্রায় ১,২৫,০০০ টাকা (এটি একটি আনুমানিক দাম, মজুরি ও ভ্যাট ছাড়া)। তবে, এই দাম পরিবর্তনশীল, তাই কেনার আগে জুয়েলারি দোকান থেকে সর্বশেষ দাম নিশ্চিত হয়ে নেওয়া ভালো।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে সোনার দাম কে নির্ধারণ করে?
উত্তর: বাংলাদেশে সোনার দাম মূলত বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) নির্ধারণ করে। তারা আন্তর্জাতিক বাজার, স্থানীয় চাহিদা-যোগান, ডলারের বিনিময় হার এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক বিষয় বিবেচনা করে নিয়মিতভাবে দাম নির্ধারণ ও ঘোষণা করে থাকে।
প্রশ্ন: গহনা কেনার জন্য কোন ক্যারেটের সোনা ভালো?
উত্তর: গহনার জন্য ২২ ক্যারেট সোনা সবচেয়ে জনপ্রিয় কারণ এতে ৯১.৬% খাঁটি সোনা থাকে এবং এটি যথেষ্ট টেকসই ও উজ্জ্বল হয়। তবে, বাজেট এবং পছন্দের ওপর ভিত্তি করে ২১ বা ১৮ ক্যারেটও বেছে নিতে পারেন। ১৮ ক্যারেট বেশি শক্ত এবং দামে কিছুটা কম।
প্রশ্ন: সোনা কেনার সময় হলমার্ক চিহ্ন থাকা জরুরি কেন?
উত্তর: হলমার্ক চিহ্ন সোনার বিশুদ্ধতা এবং মানের (ক্যারেটের) নিশ্চয়তা দেয়। এটি নিশ্চিত করে যে আপনি যে ক্যারেটের জন্য অর্থ প্রদান করছেন, সেই পরিমাণ খাঁটি সোনা পাচ্ছেন। হলমার্কযুক্ত সোনা কেনা প্রতারিত হওয়া থেকে রক্ষা করে এবং পরবর্তীতে বিক্রি করার সময় ভালো দাম পেতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন: সোনার দাম কি ভবিষ্যতে আরও বাড়বে?
উত্তর: সোনার দাম বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ কারণের উপর নির্ভর করে, তাই এর ভবিষ্যদ্বাণী করা বেশ কঠিন। সাধারণত, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, মুদ্রাস্ফীতি বা ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার সময় সোনার দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা যায়। দীর্ঘমেয়াদে দাম বাড়ার সম্ভাবনা থাকলেও স্বল্পমেয়াদে উঠা-নামা করতে পারে। বাজারের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা জরুরি।
আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। বাংলাদেশে আজকের সোনার দাম - বিস্তারিত জানুন এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url