বাংলা দরখাস্ত লেখার নিয়ম: সহজ ও পূর্ণাঙ্গ নির্দেশিকা
আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে বাংলা দরখাস্ত লেখার নিয়ম: সহজ ও পূর্ণাঙ্গ নির্দেশিকা নিয়ে আলোচনা করব।
বাংলা দরখাস্ত লেখার নিয়ম
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা প্রয়োজনে দরখাস্ত বা আবেদনপত্র লেখার দরকার হয়। স্কুল, কলেজ, অফিস কিংবা কোনো সরকারি দপ্তরে কোনো আবেদন জানাতে হলে আমাদের এই দরখাস্ত লিখতেই হয়। কিন্তু অনেকেই আছেন যারা সঠিক বাংলা দরখাস্ত লেখার নিয়ম জানেন না। ফলে তাদের দরখাস্তটি অসম্পূর্ণ বা ভুল হয়ে যায়, যা আবেদনটি বাতিল হওয়ার কারণ হতে পারে।
আপনি যদি ৭ম বা ৮ম শ্রেণীর ছাত্র হন, অথবা যেকোনো প্রয়োজনে একটি নির্ভুল ও সুন্দর বাংলা দরখাস্ত লিখতে চান, তবে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এখানে আমরা সহজ ভাষায় ধাপে ধাপে আলোচনা করব কিভাবে একটি সঠিক বাংলা দরখাস্ত লিখতে হয়। আমরা দরখাস্তের বিভিন্ন অংশ, প্রকারভেদ, লেখার নিয়মকানুন এবং কিছু নমুনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
দরখাস্ত বা আবেদনপত্র কি?
দরখাস্ত বা আবেদনপত্র হলো একটি লিখিত অনুরোধ বা আবেদন যা কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষর কাছে কোনো নির্দিষ্ট বিষয় বা সুবিধার জন্য পেশ করা হয়। এটি একটি আনুষ্ঠানিক লেখা, যার মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রয়োজন বা বক্তব্যকে সুন্দর ও গুছিয়ে উপস্থাপন করি। যেমন – স্কুলে ছুটির জন্য আবেদন, কলেজে ভর্তির আবেদন, চাকরির জন্য আবেদন, কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ইত্যাদি।
দরখাস্ত লেখার গুরুত্ব
সঠিকভাবে দরখাস্ত লিখতে পারা একটি জরুরি দক্ষতা। এর গুরুত্ব অনেক:
- যোগাযোগের মাধ্যম: এটি আপনার এবং কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
- প্রয়োজনীয়তা উপস্থাপন: আপনার প্রয়োজন বা অনুরোধটি স্পষ্টভাবে জানাতে সাহায্য করে।
- রেকর্ড সংরক্ষণ: লিখিত হওয়ায় এটি একটি প্রমাণ হিসেবে কাজ করে এবং ভবিষ্যতে প্রয়োজন হতে পারে।
- আনুষ্ঠানিকতা রক্ষা: এটি একটি আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া, যা আপনার আবেদনকে গুরুত্ব দেয়।
- সফলতার সম্ভাবনা বৃদ্ধি: একটি সুন্দর ও নির্ভুল দরখাস্ত আপনার আবেদন মঞ্জুর হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
তাই, প্রত্যেকেরই বাংলা দরখাস্ত লেখার নিয়ম জানা অত্যন্ত জরুরি।
দরখাস্তের প্রকারভেদ (বিভিন্ন ধরণের দরখাস্ত)
বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরণের দরখাস্ত লেখা হয়। কিছু প্রচলিত দরখাস্তের প্রকার নিচে দেওয়া হলো:
- স্কুলের জন্য দরখাস্ত: যেমন – ছুটির আবেদন, ছাড়পত্রের জন্য আবেদন, জরিমানা মওকুফের আবেদন, প্রশংসাপত্রের জন্য আবেদন ইত্যাদি।
- কলেজের জন্য দরখাস্ত: যেমন – ভর্তির আবেদন, ছাড়পত্র বা প্রশংসাপত্রের জন্য আবেদন, বিষয় পরিবর্তনের আবেদন, পরীক্ষার ফি মওকুফের আবেদন ইত্যাদি।
- চাকরির জন্য দরখাস্ত: কোনো পদে চাকরির জন্য আবেদন।
- সরকারি বা বেসরকারি দপ্তরে আবেদন: যেমন – নাগরিকত্ব সনদের জন্য আবেদন, কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য আবেদন, তথ্য জানার জন্য আবেদন ইত্যাদি।
- ব্যক্তিগত দরখাস্ত: অনেক সময় ব্যক্তিগত প্রয়োজনেও কারো কাছে লিখিত আবেদন করতে হতে পারে।
বাংলা দরখাস্ত লেখার পূর্বপ্রস্তুতি
একটি ভালো দরখাস্ত লেখার আগে কিছু প্রস্তুতি নেওয়া ভালো। এতে দরখাস্তটি নির্ভুল ও সুন্দর হবে।
- উদ্দেশ্য ঠিক করা: আপনি কেন দরখাস্ত লিখছেন, আপনার মূল বক্তব্য কী হবে তা আগে ঠিক করে নিন।
- প্রাপক নির্দিষ্ট করা: আপনি কার কাছে দরখাস্ত লিখছেন (যেমন: প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ, ম্যানেজার, কর্মকর্তা) তা সঠিকভাবে জানুন এবং তার পদবি সঠিকভাবে লিখুন।
- প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ: দরখাস্তের সাথে যদি কোনো কাগজপত্র (যেমন: ডাক্তারের সার্টিফিকেট, ফলাফলের কপি) জমা দিতে হয়, তবে সেগুলো আগে থেকে সংগ্রহ করে রাখুন।
- ভাষা নির্ধারণ: দরখাস্তের ভাষা হবে আনুষ্ঠানিক এবং মার্জিত। সহজ ও সরল ভাষায় মূল বক্তব্য তুলে ধরুন।
- কাগজ ও কলম: পরিষ্কার সাদা কাগজে, কালো বা নীল কালির কলম দিয়ে দরখাস্ত লিখুন। কম্পিউটারে টাইপ করলে ভালো হয়।
দরখাস্তের প্রধান অংশগুলো কি কি?
একটি আদর্শ বাংলা দরখাস্তের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ থাকে। নিচে এই অংশগুলো এবং লেখার নিয়ম আলোচনা করা হলো:
১. তারিখ
দরখাস্তের শুরুতে কাগজের উপরের ডানদিকে অথবা বামদিকে তারিখ লিখতে হয়। সাধারণত ডানদিকে লেখাই বেশি প্রচলিত। তারিখ লেখার মাধ্যমে বোঝা যায় কখন আবেদনটি করা হয়েছে।
উদাহরণ: ১০ এপ্রিল, ২০২৫
২. প্রাপক
আপনি যার কাছে আবেদন করছেন তার পদবি ও ঠিকানা লিখতে হয়। এটি কাগজের বাম দিকে, তারিখের একটু নিচে থেকে শুরু করতে হয়।
উদাহরণ (স্কুলের জন্য):
বরাবর,
প্রধান শিক্ষক,
[স্কুলের নাম],
[স্কুলের ঠিকানা]।
উদাহরণ (অফিসের জন্য):
বরাবর,
ব্যবস্থাপনা পরিচালক,
[কোম্পানির নাম],
[কোম্পানির ঠিকানা]।
৩. বিষয়
এটি দরখাস্তের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে খুব সংক্ষেপে দরখাস্তের মূল উদ্দেশ্য লিখতে হয়। প্রাপক যেন বিষয়টি দেখেই বুঝতে পারেন আবেদনটি কী সম্পর্কে। এটি প্রাপকের ঠিকানার নিচে লিখতে হয়।
উদাহরণ:
বিষয়: তিন দিনের ছুটির জন্য আবেদন।
অথবা,
বিষয়: ছাড়পত্রের জন্য আবেদন।
৪. সম্বোধন
প্রাপককে সম্মান জানিয়ে সম্বোধন করতে হয়। এটি বিষয়ের নিচে, বাম দিক থেকে একটু ডানদিকে সরিয়ে লিখতে হয়। সাধারণত 'মহোদয়', 'জনাব', 'মহাশয়' ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করা হয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে 'মহোদয়া' ব্যবহার করা যেতে পারে।
উদাহরণ:
মহোদয়,
৫. মূল বক্তব্য বা আবেদন
এটি দরখাস্তের প্রধান অংশ। এখানে আপনার আবেদনের কারণ, প্রয়োজনীয়তা বিস্তারিত কিন্তু সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরতে হবে। ভাষা হবে সরল, স্পষ্ট ও বিনীত। এটিকে সাধারণত দুই বা তিনটি অনুচ্ছেদে ভাগ করা যেতে পারে:
- প্রথম অনুচ্ছেদ: নিজের পরিচয় (নাম, শ্রেণি, রোল নম্বর/পদবি) দিয়ে আবেদনের কারণ সংক্ষেপে উল্লেখ করুন।
- দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ: কেন আপনার আবেদনটি মঞ্জুর করা উচিত, তার কারণ বা যুক্তি বিস্তারিতভাবে বলুন।
- তৃতীয় অনুচ্ছেদ: আপনার আবেদনটি মঞ্জুর করার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ জানান।
উদাহরণ (ছুটির আবেদনের মূল বক্তব্য):
সবিনয় নিবেদন এই যে, আমি আপনার বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির একজন নিয়মিত ছাত্র/ছাত্রী। আমার রোল নম্বর [রোল নম্বর]। আগামী [তারিখ] তারিখে আমার বড় বোনের বিবাহ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। উক্ত অনুষ্ঠানে আমার পরিবারের সাথে উপস্থিত থাকা একান্ত প্রয়োজন।
এমতাবস্থায়, আমি আগামী [শুরুর তারিখ] থেকে [শেষের তারিখ] পর্যন্ত মোট [কত দিন] দিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে পারব না।
অতএব, মহোদয়ের নিকট বিনীত প্রার্থনা, আমাকে উক্ত [কত দিন] দিনের ছুটি মঞ্জুর করে বাধিত করবেন।
৬. বিদায় সম্ভাষণ
মূল বক্তব্যের শেষে একটি বিদায় সম্ভাষণ জানাতে হয়। এটি সাধারণত কাগজের ডানদিকে লেখা হয়।
উদাহরণ:
নিবেদক,
অথবা,
বিনীত নিবেদক,
অথবা,
আপনার একান্ত অনুগত ছাত্র/ছাত্রী,
৭. আবেদনকারীর নাম ও স্বাক্ষর
বিদায় সম্ভাষণের নিচে আবেদনকারীর পুরো নাম লিখতে হবে এবং তার নিচে স্বাক্ষর করতে হবে (যদি হাতে লেখা হয়)। যদি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী হয়, তবে নামের নিচে শ্রেণি, শাখা ও রোল নম্বর উল্লেখ করতে হবে। চাকরির আবেদন হলে পুরো নাম ও যোগাযোগের ঠিকানা দিতে হবে।
উদাহরণ (ছাত্র/ছাত্রীর জন্য):
আপনার একান্ত অনুগত ছাত্র,
[আপনার নাম]
শ্রেণি: অষ্টম
শাখা: ক
রোল নং: ০১
৮. সংযুক্তি (যদি থাকে)
যদি দরখাস্তের সাথে কোনো প্রমাণপত্র বা কাগজপত্র যুক্ত করার প্রয়োজন হয় (যেমন: ছুটির জন্য ডাক্তারের সার্টিফিকেট, চাকরির জন্য জীবনবৃত্তান্ত), তবে দরখাস্তের শেষে বাম দিকে 'সংযুক্তি' শিরোনাম দিয়ে সেগুলোর তালিকা উল্লেখ করতে হবে।
উদাহরণ:
সংযুক্তি:
১. ডাক্তারের সনদপত্রের ফটোকপি।
২. পরীক্ষার ফলাফলের সনদপত্রের ফটোকপি।
স্কুলের ছুটির দরখাস্ত লেখার নিয়ম (নমুনা সহ)
স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রায়ই ছুটির জন্য দরখাস্ত লিখতে হয়। নিচে একটি নমুনা দেওয়া হলো:
নমুনা: অসুস্থতার জন্য ছুটির আবেদন
তারিখ: ১০ এপ্রিল, ২০২৫
বরাবর,
প্রধান শিক্ষক,
ঢাকা মডেল স্কুল,
ঢাকা।
বিষয়: অসুস্থতার কারণে ছুটির জন্য আবেদন।
মহোদয়,
সবিনয় নিবেদন এই যে, আমি আপনার বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির 'খ' শাখার একজন নিয়মিত ছাত্র/ছাত্রী। আমার রোল নম্বর ০৫। গতকাল স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় আমি আজ, ১০ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে পারছি না।
অতএব, মহোদয়ের নিকট আকুল আবেদন, আমাকে অনুগ্রহপূর্বক আজকের দিনের ছুটি মঞ্জুর করে বাধিত করবেন।
নিবেদক,
আপনার একান্ত অনুগত ছাত্র,
[আপনার নাম]
শ্রেণি: ৭ম
শাখা: খ
রোল নং: ০৫
কলেজের দরখাস্ত লেখার নিয়ম (ছাড়পত্রের নমুনা সহ)
কলেজের বিভিন্ন প্রয়োজনেও দরখাস্ত লিখতে হয়। নিচে একটি ছাড়পত্রের জন্য আবেদনের নমুনা দেওয়া হলো:
নমুনা: ছাড়পত্রের জন্য আবেদন
তারিখ: ১০ এপ্রিল, ২০২৫
বরাবর,
অধ্যক্ষ,
ঢাকা কলেজ,
ঢাকা।
বিষয়: ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য আবেদন।
মহোদয়,
যথাবিহীত সম্মান প্রদর্শনপূর্বক নিবেদন এই যে, আমি আপনার কলেজের একাদশ বিজ্ঞান বিভাগের একজন নিয়মিত ছাত্র। আমার রোল নম্বর ১০১। সম্প্রতি আমার বাবা সরকারি চাকরিসূত্রে কুমিল্লায় বদলি হয়েছেন। পুরো পরিবার সেখানে স্থানান্তরিত হওয়ায় আমার পক্ষে এই কলেজে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমাকে কুমিল্লার কোনো কলেজে ভর্তি হতে হবে।
এমতাবস্থায়, আমার কলেজের সকল পাওনা পরিশোধ করা আছে। অনুগ্রহপূর্বক আমাকে কলেজ থেকে ছাড়পত্র (Transfer Certificate) প্রদান করলে আমি বিশেষভাবে উপকৃত হব।
অতএব, মহোদয় সমীপে বিনীত অনুরোধ, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে আমাকে যত দ্রুত সম্ভব একটি ছাড়পত্র প্রদান করে বাধিত করবেন।
বিনীত নিবেদক,
আপনার অনুগত ছাত্র,
[আপনার নাম]
শ্রেণি: একাদশ (বিজ্ঞান)
রোল নং: ১০১
শিক্ষাবর্ষ: ২০২৪-২০২৫
চাকরির দরখাস্ত লেখার নিয়ম
চাকরির জন্য আবেদনপত্র লেখার সময় কিছু অতিরিক্ত বিষয় খেয়াল রাখতে হয়। যেমন:
- বিজ্ঞপ্তি সূত্র: কোন পত্রিকা বা ওয়েবসাইটে চাকরির বিজ্ঞাপনটি দেখেছেন তা উল্লেখ করা ভালো।
- পদের নাম: কোন পদের জন্য আবেদন করছেন তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
- যোগ্যতা: আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিতে হবে।
- জীবনবৃত্তান্ত (CV): চাকরির আবেদনের সাথে অবশ্যই একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবৃত্তান্ত বা সিভি সংযুক্ত করতে হবে।
চাকরির দরখাস্ত সাধারণত একটু বেশি আনুষ্ঠানিক ও বিস্তারিত হয়। তবে মূল গঠন উপরে আলোচিত নিয়ম অনুযায়ীই হবে।
সাধারণ দরখাস্ত লেখার নিয়ম (জরিমানা মওকুফের নমুনা)
অনেক সময় বিদ্যালয়ে বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে জরিমানা হলে তা মওকুফের জন্য আবেদন করতে হয়। নিচে একটি নমুনা দেওয়া হলো:
নমুনা: জরিমানা মওকুফের আবেদন
তারিখ: ১০ এপ্রিল, ২০২৫
বরাবর,
প্রধান শিক্ষক,
খুলনা পাবলিক স্কুল,
খুলনা।
বিষয়: জরিমানা মওকুফের জন্য আবেদন।
মহোদয়,
সবিনয় নিবেদন এই যে, আমি আপনার বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির একজন ছাত্র/ছাত্রী। আমার রোল নম্বর ১২। গত মাসের বেতন অনিবার্য কারণবশত আমি নির্ধারিত তারিখের মধ্যে পরিশোধ করতে পারিনি, যার জন্য আমাকে ৫০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
আমার বাবা একজন সাধারণ কৃষক এবং পরিবারের আর্থিক অবস্থা তেমন সচ্ছল নয়। এমতাবস্থায়, এই অতিরিক্ত ৫০ টাকা জরিমানা পরিশোধ করা আমার পরিবারের জন্য বেশ কষ্টকর। আমি পূর্বে কখনো বেতন প্রদানে বিলম্ব করিনি এবং পড়াশোনায়ও মনোযোগী।
অতএব, মহোদয়ের নিকট বিনীত প্রার্থনা, আমার পারিবারিক আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে উক্ত জরিমানা মওকুফ করলে আমি আপনার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকব।
নিবেদক,
আপনার একান্ত অনুগত ছাত্র/ছাত্রী,
[আপনার নাম]
শ্রেণি: অষ্টম
রোল নং: ১২
দরখাস্ত লেখার সময় কী কী ভুল এড়িয়ে চলবেন?
দরখাস্ত লেখার সময় কিছু সাধারণ ভুল হয়ে থাকে যা এড়িয়ে চলা উচিত:
- ভুল বানান ও ব্যাকরণ: দরখাস্তে ভুল বানান ও ব্যাকরণগত ভুল থাকা একদমই উচিত নয়। এটি আপনার আবেদনকে দুর্বল করে দেয়।
- অস্পষ্ট বিষয়: 'বিষয়' অংশে পরিষ্কারভাবে মূল উদ্দেশ্য না লেখা।
- অপ্রাসঙ্গিক কথা: মূল বক্তব্যের বাইরে অপ্রাসঙ্গিক বা অতিরিক্ত কথা লেখা।
- কাটাকাটি বা ঘষামাজা: দরখাস্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়া জরুরি। কাটাকাটি বা ঘষামাজা করা উচিত নয়। ভুল হলে নতুন করে লিখুন।
- ভুল ফরম্যাট: দরখাস্তের অংশগুলো (তারিখ, প্রাপক, বিষয় ইত্যাদি) সঠিক স্থানে না লেখা।
- অসম্মানজনক ভাষা: আবেদন বিনীত ও সম্মানজনক ভাষায় লিখতে হবে।
- অসম্পূর্ণ তথ্য: প্রয়োজনীয় তথ্য (যেমন: রোল নম্বর, শ্রেণি, ঠিকানা) উল্লেখ না করা।
- স্বাক্ষর না করা: হাতে লেখা দরখাস্তে অবশ্যই স্বাক্ষর করতে হবে।
দরখাস্ত সুন্দর ও আকর্ষণীয় করার টিপস
একটি ভালো দরখাস্ত কেবল নির্ভুল হলেই চলবে না, সেটি দেখতে সুন্দর ও গোছানো হওয়াও জরুরি। কিছু টিপস:
- পরিষ্কার কাগজ ব্যবহার করুন: সবসময় সাদা, পরিষ্কার ও ভাঁজমুক্ত কাগজ ব্যবহার করুন। A4 সাইজের কাগজ ব্যবহার করা ভালো।
- মার্জিন রাখুন: কাগজের চারপাশে (বিশেষ করে বাম দিকে এবং উপরে) পর্যাপ্ত মার্জিন বা খালি জায়গা রাখুন।
- সুন্দর হাতের লেখা: যদি হাতে লেখেন, তবে স্পষ্ট ও সুন্দর হাতের লেখায় লিখুন। অক্ষরগুলো যেন সহজে পড়া যায়।
- কম্পিউটার টাইপিং: সম্ভব হলে কম্পিউটারে টাইপ করুন। এতে লেখা পরিষ্কার ও আনুষ্ঠানিক দেখায়। সেক্ষেত্রে SutonnyMJ বা SolaimanLipi ফন্ট ব্যবহার করতে পারেন।
- সঠিক ফরম্যাট অনুসরণ করুন: উপরে আলোচিত দরখাস্তের অংশগুলো সঠিকভাবে সাজিয়ে লিখুন।
- সহজ ভাষা ব্যবহার করুন: কঠিন বা অপ্রচলিত শব্দের ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। সহজ ও সরল ভাষায় মূল বক্তব্য তুলে ধরুন।
- সংক্ষিপ্ত রাখুন: অপ্রয়োজনীয় কথা বাদ দিয়ে দরখাস্তটি সংক্ষিপ্ত ও প্রাসঙ্গিক রাখুন।
- প্রুফরিডিং করুন: লেখা শেষ হলে অবশ্যই পুরো দরখাস্তটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। কোনো বানান বা ব্যাকরণগত ভুল আছে কিনা তা দেখে নিন। প্রয়োজনে অন্য কাউকে দিয়েও একবার পড়িয়ে নিতে পারেন।
অনলাইনে বা ইমেইলে দরখাস্ত লেখার নিয়ম
বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রে ইমেইলের মাধ্যমেও দরখাস্ত পাঠাতে হয়। ইমেইলে দরখাস্ত লেখার নিয়ম প্রায় একই, তবে কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে:
- বিষয় (Subject Line): ইমেইলের সাবজেক্ট লাইনে দরখাস্তের বিষয়টি স্পষ্টভাবে লিখুন। যেমন: "Application for Sick Leave" বা "ছুটির জন্য আবেদন"।
- সম্বোধন: ইমেইলের শুরুতে প্রাপককে সম্মান জানিয়ে সম্বোধন করুন (যেমন: Dear Sir/Madam, জনাব/মহোদয়)।
- মূল বক্তব্য: ইমেইলের বডিতে দরখাস্তের মূল বক্তব্য লিখুন। ফরম্যাট সাধারণ দরখাস্তের মতোই রাখুন।
- স্বাক্ষর: ইমেইলের শেষে আপনার নাম, পদবি (যদি থাকে), এবং যোগাযোগের তথ্য (মোবাইল নম্বর, ইমেইল ঠিকানা) উল্লেখ করুন।
- সংযুক্তি: যদি কোনো ফাইল সংযুক্ত করতে হয় (যেমন: সিভি, সার্টিফিকেট), তবে সেগুলো PDF ফরম্যাটে অ্যাটাচ করে দিন এবং ইমেইলে তা উল্লেখ করুন।
দরখাস্ত লেখার পাশাপাশি, একটি ভালো অসুস্থতার জন্য ছুটির আবেদন পত্র জানাও জরুরি, যা আপনার আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের দক্ষতাকে আরও বাড়াবে।
শেষ কথা
সঠিকভাবে বাংলা দরখাস্ত লেখার নিয়ম জানা এবং তা অনুসরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুন্দর, নির্ভুল ও গোছানো দরখাস্ত আপনার প্রয়োজন পূরণে সহায়ক হয় এবং প্রাপকের কাছে আপনার সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা তৈরি করে। উপরে আলোচিত নিয়মাবলী ও নমুনাগুলো অনুসরণ করে আপনি সহজেই যেকোনো ধরনের বাংলা দরখাস্ত লিখতে পারবেন। মনে রাখবেন, বারবার অনুশীলন করলে দরখাস্ত লেখার দক্ষতা আরও বাড়বে।
বাংলা দরখাস্ত লেখার সাধারণ জিজ্ঞাসাসমূহ (FAQs)
দরখাস্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ কোনটি?
দরখাস্তের প্রতিটি অংশই গুরুত্বপূর্ণ, তবে 'বিষয়' এবং 'মূল বক্তব্য' সবচেয়ে বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করে। 'বিষয়' অংশটি প্রাপককে এক নজরে আবেদনের উদ্দেশ্য বুঝতে সাহায্য করে আর 'মূল বক্তব্যে' আবেদনের কারণ ও অনুরোধ বিস্তারিতভাবে উল্লেখ থাকে। তাই এই দুটি অংশ খুব যত্ন সহকারে লেখা উচিত।
দরখাস্ত হাতে লেখা ভালো নাকি টাইপ করা ভালো?
সাধারণত স্কুল-কলেজের সাধারণ আবেদনগুলো (যেমন: ছুটি) হাতে লেখাই যথেষ্ট, যদি হাতের লেখা স্পষ্ট ও সুন্দর হয়। তবে চাকরির আবেদন বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ আনুষ্ঠানিক আবেদন কম্পিউটারে টাইপ করে প্রিন্ট করাই ভালো। এটি বেশি পেশাদার দেখায় এবং পড়ার সুবিধা হয়।
দরখাস্তে কি মার্জিন রাখা জরুরি?
হ্যাঁ, দরখাস্তে মার্জিন রাখা জরুরি। এটি দরখাস্তকে দেখতে গোছানো ও সুন্দর করে তোলে। সাধারণত কাগজের বাম দিকে ১ থেকে ১.৫ ইঞ্চি এবং উপরে, নিচে ও ডান দিকে কিছুটা কম মার্জিন রাখা হয়। এতে ফাইল করার সুবিধা হয় এবং লেখাগুলো দেখতেও ভালো লাগে।
দরখাস্ত কত বড় হওয়া উচিত?
দরখাস্তের আকার নির্ভর করে আবেদনের বিষয়বস্তুর উপর। তবে চেষ্টা করতে হবে যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত অথচ পূর্ণাঙ্গভাবে মূল বক্তব্য তুলে ধরতে। অপ্রয়োজনীয় কথা বা বাক্য পরিহার করা উচিত। সাধারণত এক পৃষ্ঠার মধ্যেই দরখাস্ত শেষ করা ভালো, যদি না বিশেষ কোনো কারণে (যেমন: চাকরির আবেদন যেখানে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে হয়) বেশি লেখার প্রয়োজন হয়।
দরখাস্তের সাথে কী কী কাগজপত্র যোগ করতে হতে পারে?
আবেদনের ধরনের ওপর নির্ভর করে সংযুক্তি প্রয়োজন হতে পারে। যেমন: অসুস্থতার জন্য ছুটির আবেদনে ডাক্তারের সার্টিফিকেট, চাকরির আবেদনে জীবনবৃত্তান্ত (CV) ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র, ছাড়পত্রের আবেদনে আগের পরীক্ষার ফলাফল বা ভর্তির কাগজপত্র ইত্যাদি যোগ করার প্রয়োজন হতে পারে। দরখাস্তে 'সংযুক্তি' অংশে এগুলোর তালিকা উল্লেখ করতে হবে।
আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। বাংলা দরখাস্ত লেখার নিয়ম: সহজ ও পূর্ণাঙ্গ নির্দেশিকা এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url