ইউরোপীয় রেনেসাঁর নেতিবাচক প্রভাব

ইউরোপীয় রেনেসাঁর নেতিবাচক প্রভাব
নবজাগরণ আন্দোলন ও মানবতাবাদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এই আলোচনায় প্রাসঙ্গিক। পি এফ গ্রেন্ডলার (PF Grendler), জে হুইজিংগা (Johan Huizinga), জে আর হ্যালে (JR Hale) প্রমুখ নবজাগরণের সীমাবদ্ধতাগুলির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

(1) সামাজিক দায়বদ্ধতা

জে তুইজিংগা তাঁর 'Men and Ideas: History, the Middle Ages, the Renaissance' গ্রন্থে (১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ) বলেছেন যে, নবজাগরণ আন্দোলনে সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি (...the sense of social responsibility was largely lacking) । গ্রামীণ ও শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের বিষয়ে মানবতাবাদীরা ছিলেন উদাসীন।

(2) পুঁজিবাদী শোষণ

আর এস লোপেজ, এ্যাস্টনি মালো প্রমুখ মনে করেন যে, মানবতাবাদীরা সাধারণ মানুষের আর্থিক নিরাপত্তা বিষয়ে ভাবিত ছিলেন না। পুঁজিবাদী শোষণ আগের মতোই বর্তমান ছিল। সাহিত্য-সংস্কৃতির পুনরুদ্ধারে মগ্ন কবি-সাহিত্যিক-ধর্মগুরু কেউই সাধারণ মানুষের আর্থিক দুর্গতি বা দারিদ্র্য নিরসনের কথা ভাবেননি। এহেন অর্থনৈতিক বৈষম্য 'নবজাগরণ' ভাবাদর্শের বিরোধী।

(3) নগরকেন্দ্রিকতা

গবেষক হ্যালের মতে,  নবজাগরণের ঢেউ নগরগুলিতে সীমাবদ্ধ ছিল। বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চল নবজাগরণের আস্বাদ গ্রহণের সুযোগ পায় নি। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জে ব্লুম (J Blum) দেখিয়েছেন যে, পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকে প্রায় ৮৭ শতাংশ মানুষ গ্রামাঞ্চলে বাস করতেন। মূলত কৃষিকাজ ও কারিগরি বৃত্তির সঙ্গে যুক্ত। এই বিশাল সংখ্যক মানুষ আগের মতোই আর্থিক শোষণ ও সামাজিক অসাম্যের শিকার ছিলেন। তাই নবজাগরণ এক সমাজব্যবস্থা থেকে অন্য সমাজব্যবস্থায় উত্তরণের ক্রান্তিকাল ছিল- এমন ধারণা মিথ্যা হয়ে যায়।

(4) অভিজাত শ্রেণির রেনেসাঁ

রেনেসাঁর সময় গ্রিক ও ল্যাটিন জ্ঞানভান্ডার কখনোই সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত ছিল না। এর আস্বাদ পেয়েছিলেন কেবল মুষ্টিমেয় অভিজাত (Elite) জ্ঞানান্বেষীরাই। এই কারণে ইউরোপীয় নবজাগরণকে অভিজাত শ্রেণির রেনেসাঁ (Aristrocratic Renaissance) বলা হয়ে থাকে।

পরিশেষে বলা যায় যে, সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও রেনেসাঁ ছিল ইউরোপের ইতিহাসে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনগুলির মধ্যে অন্যতম। পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকের এই পুনরুজ্জীবন ও উত্তরণ থেকেই জন্ম নিয়েছিল নতুন জগতকে জানা এবং আবিষ্কারের প্রচেষ্টা। পরবর্তীতে বহির্বিশ্বে যে ইউরোপীয় শক্তিসমূহের প্রতিপত্তির বিস্তার ঘটেছিল, তার নৈতিক সমর্থনের ক্ষেত্র ছিল রেনেসাঁর এই সময়কাল। বর্তমানে বিশ্বকে জানা ও চেনার যে দৃষ্টিভঙ্গি, সেটাও নবজাগরণের কালপর্ব থেকেই তৈরি হয়েছিল।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url