নাগরিকতা বলতে কী বোঝ

নাগরিকতা বলতে কী বোঝ

নাগরিকতা

ব্যুৎপত্তিগত অর্থে নগরে বসবাসকারী ব্যক্তিদের নাগরিক বলে। আবার আক্ষরিক অর্থেও নগরের অধিবাসীকে বলা হয় নাগরিক। এই দুটি অর্থ থেকে বোঝা যায় যে, যারা শুধুমাত্র নগরে বসবাস করে তারাই নাগরিক। কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এই অর্থ যথাযথ নয়। বিভিন্ন সময়ের দিক থেকে 'নাগরিকতা' শব্দটি কীভাবে গৃহীত হয়েছে তা দেখা যেতে পারে।

[1] গ্রিক ও রোমান ধারণা: প্রাচীন গ্রিক চিন্তাধারা থেকে নাগরিকতার বিষয়টি পাওয়া যায়। প্রাচীন গ্রিসে এবং রোমান বাবস্থায় নগর-রাষ্ট্রের অধিবাসীদের বলা হত নাগরিক। তবে ক্রীতদাসরা নাগরিক হিসেবে পরিচিত ছিল না। গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটলের মতে, শাসনকার্যে অংশগ্রহণকারীরাই নাগরিক হিসেবে পরিচিত ছিল। এই নাগরিকরা রাষ্ট্রের কাজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করত। এই সময় রাষ্ট্রের আয়তন ও জনসংখ্যা কম ছিল বলে রাষ্ট্রের মানুষ সরাসরিভাবে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ক্রিয়াকর্মে অংশগ্রহণ করতে পারত। তবে এই সময় নাগরিকত্বের অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল যারা, তারা হল-স্ত্রীলোক, দাস এবং শ্রমিক-কারিগর। রোমান রাজনৈতিক ব্যবস্থাতেও নাগরিকদের অধিকার ছিল সীমাবদ্ধ। রোমান সমাজে কেবলমাত্র অভিজাতরাই (প্যাট্রিশিয়ান) নাগরিক অধিকার ভোগ করতে পারত। অবশ্য পরবর্তীকালে ঐ অধিকার জনসাধারণের মধ্যে প্রসারিত হয়েছিল।

[2] সমাজতাত্ত্বিক ধারণা: আধুনিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অধিকার ও কর্তব্যের ধারণাটি পরস্পর ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ব্যক্তি নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের কাছে যেমন কিছু অধিকার লাভ করে, অর্থাৎ রাষ্ট্র ব্যক্তিকে কিছু অধিকার প্রদান করে, তেমনই ব্যক্তিকেও নাগরিক হিসেবে কিছু কর্তব্য পালন করতে হয়। যদি কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রের প্রতি নির্ধারিত কিছু কর্তব্য পালন করে তাহলে সে অধিকারও ভোগ করতে পারে। নাগরিক হিসেবে বাস্তির কর্তব্যপালন ও রাষ্ট্রের অধিকার প্রদানের মধ্যে ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের বিকাশ ও সমাজের মঙ্গলসাধনের বিষয়টি নিহিত থাকে। নাগরিকতার অর্থ প্রমাণ করার জন্য অধিকার ও কর্তব্যের যে পারস্পরিকতা আলোচনা করা হয় তা প্রধানত সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে পরিচিত। ল্যাঙ্কি এই কারণে বলেছেন, সমাজের মঙ্গল সাধনের জন্য ব্যক্তির বিচারবুদ্ধির প্রয়োগের সঙ্গে নাগরিকতা সংযুক্ত থাকে।

[3] আধুনিক ধারণা: বর্তমানে সকল মানুষই কোনো-না-কোনো রাষ্ট্রের সদস্য। তাই আধুনিককালে নাগরিক বলতে রাষ্ট্রের সদস্যকে বোঝায়। এরা সকলেই রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে। মিলার মনে করেন, রাজনৈতিক দিক থেকে সংগঠিত যে জনসমষ্টিকে নিয়ে রাষ্ট্র গঠিত হয় তাদের বলা ২৯ নাগরিক। সরকার এইসব নাগরিকদের অধিকার সংরক্ষণ করে এবং নাগরিকদের কাজ হল রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা। কোনো রাষ্ট্রই ব্যক্তির অধিকার সংরক্ষণের বিষয়টিকে অস্বীকার করে না।
 

0/Post a Comment/Comments