ফ্যাসিবাদের তাত্ত্বিক উৎস সম্পর্কে একটি টীকা লেখো

আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে ফ্যাসিবাদের তাত্ত্বিক উৎস সম্পর্কে একটি টীকা লেখো নিয়ে আলোচনা করব।

ফ্যাসিবাদের তাত্ত্বিক উৎস সম্পর্কে একটি টীকা লেখো

ফ্যাসিবাদের তাত্ত্বিক উৎস

ফ্যাসিবাদ সম্পূর্ণরূপে সুসামঞ্জস্যপূর্ণ রাজনৈতিক তত্ত্ব বা মতাদর্শ নয়। বিভিন্ন দার্শনিকদের চিন্তাধারায় যে নেতিবাচক দিকগুলি প্রকাশ পেয়েছে মুসোলিনি সেইসব বিষয়ের মধ্যে সমন্বয় করে ফ্যাসিবাদী মতাদর্শের উৎপত্তি ঘটান। অর্থাৎ ফ্যাসিবাদ গড়ে ওঠে বিভিন্ন দার্শনিকের নেতিবাচক চিন্তাধারার সমন্বয়ে।

যেমন- [1] ম্যাকিয়াভেলির চিন্তাধারা থেকে পাওয়া সুবিধাবাদ, [2] হেগেলের দর্শন থেকে পাওয়া রাজনৈতিক চরমতাবাদ, [3] উইলিয়াম জেমসের অভিজ্ঞতাবাদ ও [4] জর্জ সোরেলের চিন্তাধারায় প্রকাশিত হিংসা তত্ত্ব- এগুলির সম্মিলিত ধারণা থেকে ফ্যাসিবাদ জন্মলাভ করে।

এ ছাড়াও ফ্যাসিবাদের অন্যান্য তাত্ত্বিক উৎস হল- প্রথমত, ইতালীয় সমাজতত্ত্ববিদ প্যারেটো, জামান সমাজতত্ত্ববিদ মিশেলস প্রমুখ তাঁদের রচনায় প্রচার করেন- সমাজ বা দেশ শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের দ্বারা শাসিত হওয়াই বাঞ্ছনীয়।

দ্বিতীয়ত, নিসে লিখেছিলেন যে, কখনো-কখনো রাষ্ট্রব্যবস্থায় এমন এক ব্যতিক্রমী সময় আসে, যখন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আবির্ভূত হয় এক 'অতিমানব' বা 'সুপারম্যান'। যার কর্তৃত্ব সাধারণ মানুষের ভাগ্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। নিসের এই চিন্তাধারার দ্বারা হিটলার ও মুসোলিনিও বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন।

তৃতীয়ত, 1859 খ্রিস্টাব্দে ডারউইন যে তত্ত্বের প্রচার করেন, 'প্রাকৃতিক নির্বাচন' ও 'যোগ্যতমের উর্ধ্বতন' ছিল প্রধান বিষয়। মুসোলিনি এই তত্ত্বের মধ্যে তাঁর চিন্তাশক্তি খুঁজে পান।

চতুর্থত, শোপেনহওয়ার, জিওভিন্নি জেন্টাইল প্রমুখ দার্শনিক উনিশ শতকের শেষ ও বিংশ শতকের প্রথম দিকে তাঁদের দর্শন-ভাবনা প্রচার করেন। তাঁদের চিন্তাধারায় ফ্যাসিবাদ তাদের শক্তি খুঁজে পায়।

পঞ্চমত, আর্থার ডি গোবিনো তাঁর 'Essays on the Inequality of Human Races' নামক গ্রন্থে জাতিগত আলোচনা করে ফ্যাসিবাদের চিন্তাধারাকে সমৃদ্ধ করে তোলেন। তিনি তাঁর গ্রন্থে মানবজাতিকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করেন। যথা-শ্বেত, পীত ও কৃয়কায়। এই গ্রন্থে তিনি এ কথা প্রচার করেন যে, এই তিন শ্রেণির মধ্যে সংঘাষই হল ইতিহাসের মূল চালিকাশক্তি। গোবিনোর চিন্তাধারার দ্বারা ফ্যাসিবাদ শক্তি পায়।

পরিশেষে বলা যায় যে, সমকালীন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি অর্থাৎ দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যকালীন সময়ে ইউরোপে যে আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছিল, ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদের উত্থানের পক্ষে ছিল সেই। পরিস্থিতি সহায়ক ভূমিকা নিয়েছিল।

আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। ফ্যাসিবাদের তাত্ত্বিক উৎস সম্পর্কে একটি টীকা লেখো এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

Next Post Previous Post
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url