ফ্যাসিবাদের মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করো
আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে ফ্যাসিবাদের মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করো নিয়ে আলোচনা করব।
ফ্যাসিবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্যাসিবাদের আবির্ভাব ঘটে। প্রথমে তাদের লক্ষ্য ছিল পুঁজিবাদের বিরোধিতা করা এবং ক্রমশ তাদের চরম লক্ষা হয়ে ওঠে শ্রমিক সংগঠনগুলি ধবংস করে পুঁজিবাদকে রক্ষা করা। ফ্যাসিবাদ এই কারণে একটি প্রতিক্রিশীল মতাদর্শ।
দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী পর্যায়ে যখন ইতালি ও জার্মানি- সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, দারিদ্রদ্র্য, পুঁজিবাদের নগ্ন প্রতিযোগিতা, অর্থনৈতিক শোষণ প্রভৃতি সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল, তখন ইতালিতে মুসোলিনি ও জার্মানিতে হিটলার সংশ্লিষ্ট দেশের জনগণকে এই সংকটাপন্ন অবস্থা থেকে মুক্ত করতে ক্ষমতায় আসীন হন। ক্ষমতালাভের পরই ফ্যাসিবাদী শাসন শুরু হয়।
ফ্যাসিবাদের প্রবক্তা
ফ্যাসিবাদের তাত্ত্বিক প্রবক্তাগণ হলেন-ইতালির জিওভিন্নি জেন্টাইল, জি ডি অ্যানানজিও, জি প্রেজোলিনি; জার্মানির ট্রিঙ্কে, নিঙ্গে প্রমুখ।
ফ্যাসিবাদের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
[1] সর্বনিয়ন্ত্রণবাদী ব্যবস্থা
ফ্যাসিবাদ রাষ্ট্রকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছে এবং এটি একটি সর্বাত্মক বা সর্বনিয়ন্ত্রণবাদী (totalitarian) মতাদর্শ। ফ্যাসিবাদীদের দৃষ্টিতে সমাজ হল 'জাতি' এবং জাতি হল 'রাষ্ট্র'। ফ্যাসিবাদীরা মনে করতেন রাষ্ট্র হল 'প্রকৃত ইচ্ছা' সমন্বিত একটি স্বাধীন সত্তা।
তাঁরা আরও মনে করেন যে, রাষ্ট্র হল নিজস্ব ইচ্ছা ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সম্পূর্ণ সচেতন একটি সত্তা। মুসোলিনি মনে করেন, কোনো কিছুই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বা রাষ্ট্রের বাইরে নয়, সব কিছুই রাষ্ট্রের মধ্যে। রাষ্ট্রকে শুধু 'বর্তমান' বলা যায় না, তা একই সঙ্গে অতীত এবং ভবিষ্যৎ উভয়ই।
[2] সরকারের এক্তিয়ার
ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সব কিছুই সরকারের এক্তিয়ারভুক্ত, ব্যক্তিজীবন এবং সমাজজীবন কোনো কিছুই সরকারের এক্তিয়ার বহির্ভূত নয়।
[3] জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র
জার্মানির হিটলার তাঁর 'মেইন ক্যাম্ফ' (Mein Kemph) নামক গ্রন্থে শ্রেষ্ঠতর জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলতেন, কেবল জার্মানরাই বিশুদ্ধ আর্য রক্তস্বয়ম্ভূত বলে তারাই শ্রেষ্ঠ সভ্যতা ও সংস্কৃতির ধারক।
এই কারণে জার্মান রাষ্ট্র জামান জাতিকে রক্ষা করবে। তিনি আরও বলেন, যাদের ধমনিতে আর্য রক্ত বইছে তারাই একমাত্র জামান জাতি আর যাদের ধমনিতে আর্য রক্ত বইছে না তাদের ধবংস করে দিতে হবে।
[4] ব্যক্তিস্বাধীনতা
ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থায় ব্যক্তিস্বাধীনতার কোনো অস্তিত্ব নেই। রাষ্ট্রব্যবস্থায় ব্যক্তিজীবনকে কোনোরূপ গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এরূপ ব্যবস্থায় বাক্তি সর্বদাই রাষ্ট্রের যুপকাষ্ঠে বলিপ্রদত্ত।
[5] ক্ষমতাকেন্দ্রীকরণ
ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থায় মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে সামাজিক, আর্থনৈতিক, রাজনৈতিক প্রভৃতি ক্ষমতা কুক্ষিগত থাকে। এই ব্যবস্থায় অবিসংবাদী নেতা সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার মূলকথা হল-'এক দল, এক নেতা, এক রাষ্ট্র'।
[6] যৌথরাষ্ট্রের ধারণা
ফ্যাসিবাদ 'যৌথরাষ্ট্র' ব্যবস্থার তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিল। ফ্যাসিবাদীদের মতে 'যৌঘবাদ' হল এমন একটি ব্যবস্থা যার দ্বারা কতকগুলি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কর্তৃত্ববাদী হিসেবে গড়ে তুলে জাতির বিভিন্নপ্রকার অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে চূড়ান্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
মুসোলিনি মনে করতেন যে, দেশের যাবতীয় সমস্যা শুধু ফ্যাসিবাদী দলই অনুধাবন করতে পারে এবং জনগণ যেহেতু দেশের সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয় সেহেতু তাদের নিষ্ক্রিয় থাকতে হবে।
ফ্যাসিবাদীরা রাষ্ট্রের যাবতীয় কার্যাবলি বিভিন্ন পেশাগত গোষ্ঠীর দ্বারা পরিচালনা করে এবং এক্ষেত্রে ব্যক্তি তাদের ভূমিকাকেই মেনে নিতে বাধ্য।
(7) সরকারের ভূমিকা
ফ্যাসিবাদ মনে করত যে, সরকার কীভাবে পরিচালিত হবে বা রাষ্ট্রীয় কার্যাবলি কীভাবে পলিচালিত হবে সে-ব্যাপারে জনগণ একেবারে অক্ত থাকায় নির্বাচিত মুষ্টিমেয় কিছু অভিজাত ব্যক্তির ওপর শাসনভার তথা সরকার চালানোর দায়িত্ব অর্পণ করা শ্রেয়। তারাই সরকার গঠন করবে।
তারাই একমাত্র সমগ্র জাতির ভাগ্য নির্ধারণে সক্ষম। দল এবং রাষ্ট্রের যাবতীয় ক্ষমতার শীর্ষে অবস্থান করে নেতা। নিসে এইরূপ সর্বোচ্চ ক্ষমতাশালী নেতাকে 'অতিমানব' (superman) বলে অভিহিত করেছেন।
আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। ফ্যাসিবাদের মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করো এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url