লিঙ্গ-রাজনীতির বিভিন্ন দিক আলোচনা করো

আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে লিঙ্গ-রাজনীতির বিভিন্ন দিক আলোচনা করো নিয়ে আলোচনা করব।

লিঙ্গ-রাজনীতির বিভিন্ন দিক আলোচনা করো

লিঙ্গ-রাজনীতির বিভিন্ন দিক

আক্ষরিক অর্থে 'লিঙ্গ-রাজনীতি' হল লিঙ্গা-সম্পর্কিত বা লিঙ্গ-কেন্দ্রিক রাজনীতি। কিন্তু বাস্তবে লিঙ্গ- রাজনীতি হল পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় 'নারীকেন্দ্রিক-রাজনীতি'। কারণ লিঙ্গ-রাজনীতির প্রধান বিষয় হল-পুরুষের অধীনতা থেকে নারীজাতিকে মুক্ত করা ও তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
 
একই সঙ্গে লিঙ্গা- রাজনীতি নারীজাতিকে সকল অধিকার ও মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করতে, নারীর সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে এবং সার্বিক ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন প্রভৃতির জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে। অতএব বলা যায় যে, লিঙ্গ, রাজনীতির কতকগুলি দিক উল্লেখযোগ্য। এগুলি হল-

[1] পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও লিঙ্গ-বৈষম্য

পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা হল লিঙ্গ-রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। লিঙ্গ-বৈষম্যের শুরু ও তার বিকাশ পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ঘটে। তাই লিভা-বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে লিঙ্গ-রাজনীতিরও বিকাশ ঘটতে থাকে।
 
অর্থাৎ পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের প্রাধানোই নারীদের জীবনযাপন। পুরুষ তার পৌরুষের দ্বারা নারীকে অবদমিত করে রাখে। সমাজে পিতার বংশধারাই পরিচিতি লাভ করে। সার্বিক দিক দিয়ে বলা যায় যে, পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারী জাতি পুরুষের আধিপত্যের বিরুদ্ধে তাদের মর্যাদা ও অধিকারের দাবিতে অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে আন্দোলন করে আসছে।
 
পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নারীজাতির প্রতিবাদের এই যে পরিমণ্ডল-এটিই হল লিঙ্গ- রাজনীতি। অতএব, লিজা-রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল পিতৃতান্ত্রিক-ব্যবস্থা।

[2] পরিবার-ব্যবস্থা ও লিঙ্গ-রাজনীতি

পরিবার-ব্যবস্থা পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থায় লিঙ্গ-রাজনীতির ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এইরূপ সমাজে নারীর কোনোরকম স্বাধীনতা নেই। কেবলমাত্র নারীর গৃহকর্ম ব্যতীত অন্য কোনো কর্মে নিযুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে পিতৃতান্ত্রিক সমাজের কোনো স্বীকৃতি নেই।
 
এইরূপ সমাজে পরিবারের কর্তা নারীর প্রজনন ক্ষমতা ও যৌনতার অধিকারকে বিভিন্ন দিক থেকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরিবার ব্যবস্থা নারীকে একদিকে যেমন শোষণ করে, তেমনই অন্যদিকে নারীরা হয় বৈষম্য ও নির্যাতনের স্বীকার।
 
নারীরা তাদের ওপর এই পারিবারিক শোষণ, বৈষম্য ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ ধ্বনিত করে তা লিঙ্গ-রাজনীতির একটি রূপ। এরূপ ব্যবস্থায় নারীদের প্রতিবাদের কণ্ঠ প্রতিনিয়ত জোরালো হয়ে উঠছে।

[3] অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্য

পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পুরুষের আধিপত্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পিতৃতান্ত্রিক মতাদর্শ বিভিন্ন উৎপাদনশীল ক্রিয়াকর্মকে চিহ্নিতকরণের ক্ষেত্রে এবং সেগুলির মূল্যমান নির্ধারণের ব্যাপারে প্রতিফলিত হয়।
 
এই ব্যবস্থায় সন্তানের জন্ম ও তাকে প্রতিপালনের বিষটিতে নারীর শ্রমকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না। কাজেই এক্ষেত্রে নারীর কোনোরূপ অর্থনৈতিক মূল্যায়নও হয় না। 1995 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত Human Development Report- UNDP দেখিয়েছে যে, সমগ্র বিশ্বে নারীজাতি যে অবেতন শ্রম দিয়ে চলেছে তার বাৎসরিক মূল্য এগারো ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।
 
নারীর অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতাকে সকল পুরুষশাসিত সমাজই অস্বীকার করে। বিশ্বে গণতান্ত্রিক দেশগুলিতে নারীদের সম্পত্তির অধিকার ও বণ্টনের অধিকার দিলেও বাস্তবক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তারা সকল অধিকার থেকেই বঞ্চিত।

[4] আইনগত ক্ষেত্রে বৈষম্য

এখনও পর্যন্ত অনেক দেশে আইন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে পুরষের আস্ফালন বিশেষভাবে স্পষ্ট। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশেই আইনগত ব্যবস্থার দ্বারা পুরুষ হয়ে উঠেছে গৃহকর্তা এবং শিশুদের অভিভাবক। এরূপ ব্যবস্থায় আইনগত উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তিকে বণ্টন করে।
 
তবে আবার এমন অনেক দেশও আছে যেখানে আইনগত ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের জন্য সমান অধিকার প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু পুরুষদের মধ্যে বেশিরভাগ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আইনগত বিষয়গুলির সংশ্লিষ্ট। তাই আইনগত ব্যবস্থার ক্ষেত্রে পুরুষরাই আইনের নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে।

[5] ধর্ম ও লিঙ্গবৈশিষ্ট্য

বেশিরভাগ ধর্মের ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, পুরুষের কর্তৃত্বকে বড়ো করে দেখানো হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই ধর্ম সংক্রান্ত বিষয়গুলিতে পিতৃতান্ত্রিকতার প্রাধান্য স্বীকৃত হয়েছে। সেইসব ক্ষেত্রগুলিতে পুরুষরাই ধর্মের সৃষ্টিকর্তা, ব্যাখ্যাকর্তা এবং নিয়ন্ত্রক হিসেবে প্রধান ভূমিকা অর্জন করে বলে তারাই ন্যায়, নীতি, আইনের সৃষ্টিকর্তা।
 
নারীরা এইসব ক্ষেত্রে বঞ্চিত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে ধর্ম ও রাষ্ট্রকে অঙ্গাগী করে তুলেছে সেই কারণেই লিঙ্গ-বৈষম্যের ব্যাপারে সেই দেশগুলি উদারতা দেখাতে পারেনি।

[6] প্রচারমাধ্যম ও লিঙ্গ-বৈষম্য

প্রচারমাধ্যম সমাজে মতাদর্শের বিকিরণ ঘটায়। এর মধ্যে সংবাদপত্র, দূরদর্শন, সিনেমা, বেতার প্রভৃতি সকলক্ষেত্রেই পুরুষের পক্ষপাতিত্ব ও লিঙ্গ-বৈষম্যকে তুলে ধরা হয়। এইসব প্রচারমাধ্যমে হলিউড থেকে বলিউড-সকলক্ষেত্রে নারীদেহকে পণ্য হিসেবে দেখানো হয় এবং এই ধরনের চিন্তাধারায় নারী হল গৃহকেন্দ্রিক জীব। বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রেও নারীকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। অনেক দেশে পর্নোগ্রাফিক চলচ্চিত্রকে নারীবাদী আন্দোলন আক্রমণের বিষয় হিসেবে তুলে ধরেছে।

[7] সংস্কৃতি ও লিঙ্গ-বৈষম্য

সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও লিভা-বৈষম্য বিশেষভাবে প্রকট। পুরুষ শাস্ত্রকাররা নারীর পৌরহিতাকে মেনে নেয়নি, বরং নারীদের ওপর কতকগুলি বাধ্যতামূলক বাধা নিষেধ আরোপ করেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, কোনো নারী বিধবা হলে তাকে বহু সামাজিক বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়, কিন্তু কোনো পুরুষের ক্ষেত্রে এরূপ বিধিনিষেধ থাকে না। সুতরাং পুরুষ-আধিপত্যের দ্বারাই সংস্কৃতি নিয়ন্ত্রিত হয়।

উপসংহার

অতএব দেখা যায় লিঙ্গ-বৈষম্যের বিষয়টি পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রকেই বেষ্টন করে রেখেছে। পুরুষরা গ্রামীণ সভা থেকে সংসদ সর্বত্রই তাদর আধিপত্যকে বজায় রেখেছে।
 
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে মহিলাদের আইনসভায় অংশগ্রহণ সামানাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে কোনো মহিলা রাষ্ট্রপতিত্ত্বের স্বপ্ন দেখতে পারেন না। সুতরাং পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থায় লিঙ্গ-বৈষম্য এখনও অনড়।
 

আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। লিঙ্গ-রাজনীতির বিভিন্ন দিক আলোচনা করো এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

Next Post Previous Post
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url