ধূমপান ও স্বাস্থ্যসচেতনতা রচনা
আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে ধূমপান ও স্বাস্থ্যসচেতনতা রচনা নিয়ে আলোচনা করব।
ভূমিকা
সারা পৃথিবীর মানুষ দীর্ঘ অতীত থেকে স্নায়ুউত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য ধূমপানে অভ্যস্ত হয়েছে। বিশেষ করে তামাক জাতীয় বস্তুকে ধূমপানের জন্য ব্যবহার করা হয়। তামাকে থাকে 'নিকোটিন' নামক বস্তু যা মানুষকে নেশাগ্রস্ত করে তোলে। মানুষ নেশাগ্রস্ত হলে তার থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন ব্যাপার। শুধু ধূমপান নয় চরস, আফিম, মদ্যপান প্রভৃতির মাধ্যমেও নেশা হয়। যেকোন নেশার কবলে পড়লে মানুষ যদি বুঝতেও পারে যে নেশা করা উচিৎ নয় তবুও নেশা তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে।
নানা ধরনের ধূমপানের ব্যবস্থা
পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশে ধূমপান প্রচলিত আছে। অতীতে সবচেয়ে বেশি প্রচলন ছিল হুঁকোর সাহায্যে তামাক সেবন। বিভিন্ন ধরনের হুঁকো তখন ব্যবহার করা হত। আবার রাজদরবার, জমিদারের কাছারি, এমন কি মুঘল রাজদরবারেও বিশেষ ধরনের হুঁকো গড়গুড়ির ব্যবহারের উল্লেখ দেখা যায় পত্র-পত্রিকা সাহিত্যে।
তামাকেরও শ্রেণিবিভাগ ছিল। সাধারণ তামাক ছাড়া সুগন্ধি মতিচুর তামাকও সেবন করত অভিজাত শ্রেণীর লোকেরা। একসময় বাবু সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের অভ্যাসকে বাবু-কালচার বলা হত। ইংরেজ রাজত্বকালে প্রত্যেক রাজবাড়িতে বা জমিদার বাড়িতে হুঁকাদার বা ছিলিমদার থাকত। ব্রিটিশ প্রভৃতি অভিজাত ব্যক্তিরা আবার চুরুট সেবন করত। পরে প্রচলন হল বিড়ি ও সিগারেটের।
ধূমপান সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচলিত হয়। ব্রিটিশরা আবার সাধারণ মানুষকে নেশাগ্রস্ত করে পঙ্গু করার জন্য বিনা পয়সায় আফিম সরবরাহ করত। গ্রামাঞ্চলে কোন বাড়িতে অতিথি গেলে ধূমপানের ব্যবস্থা ছিল তখনকার প্রচলিত রীতি। হাসিস, চরস, হেরোইন, ব্রাউন সুগার, এল.এস.ডি, ম্যানড্রেক্স প্রভৃতির আমদানি হয় আরও পরে।
ধূমপানে কুফল
অনেকে বলে, ধূমপান করলে শরীর সতেজ হয়, শরীরের জড়তা কেটে যায়, শ্রমের ক্লান্তি দূর হয়। ধূমপানের ফলে শরীরে নানা জটিল রোগের সৃষ্টি হয়। ধূমপান শরীরের শুধু ক্ষতি করে না তার থেকে ক্যানসারের মতো দূরারোগ্য অসুখ ও হতে পারে। তামাক ও গাড়ির ধোঁয়ায় পলিসাইক্লিক হাইড্রোকার্বন থাকে যা ক্যানসারের উৎপত্তিতে সাহায্য করে।
শুধু ধূমপান নয় পোড়া খাদ্যে থাকে নাইট্রোসোমাইন যার ক্ষেত্রেও ক্যানসার হয়। ধূমপানের ফলে শরীরের রক্তের চাপ বাড়তে পারে, সর্দি, কাসি, হাঁপানি প্রভৃতি জটিল রোগ ও সৃষ্টি হয়। পৃথিবীতে ধূমপান জনিত রোগে প্রতিবছর ৩০ লক্ষের ও বেশি মানুষ মারা যায়।
প্রতিকার
ধূমপানে প্রতিবছর বহু মানুষের মৃত্যু হওয়ায় সারা পৃথিবী জুড়ে ধূমপান বিরোধী প্রচার শুরু হয়েছে। নানাভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে ধূমপানের কুফল সম্বন্ধে সচেতন করা মানুষকে। ধূমপান যে শরীরের ক্ষতি করে তা তামাক জাতীয় দ্রব্যের সাথে সতর্কবার্তাও লিখে রাখা হচ্ছে।
রেল, বাস প্রভৃতিতে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকারী অফিস প্রভৃতিতে ধূমপান করা বারণ। সাহিত্য, যাত্রা, থিয়েটার, দূরদর্শন প্রভৃতিতে তবুও যেসব ঘটনা বা দৃশ্য দেখান হয় সেখানে ধূমপানের সমারোহ দেখে যেকোন শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ চিন্তিত। কারণ এসব দৃশ্য তরুণ সমাজে গভীর রেখাপাত করে।
উপসংহার
ধূমপানের বিষময় ফল সম্বন্ধে গণ-প্রচার মাধ্যমগুলির প্রচার আরও বেশি করা প্রয়োজন। ধূমপানের জন্য সঙ্গী-সাথীরা দায়ী। সংসর্গ-দোষে ধূমপানের বদভ্যাস গড়ে ওঠে। ধূমপান বিরোধী আইন আরও কঠোর হওয়া প্রয়োজন। শিক্ষা ও গণসচেতনতা বাড়লে মানুষ ধূমপানে বিরত হবে।
আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। ধূমপান ও স্বাস্থ্যসচেতনতা রচনা এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url