স্বার্থগোষ্ঠীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা করো

স্বার্থগোষ্ঠীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা করো

স্বার্থগোষ্ঠীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি

সেসব গোষ্ঠী তাদের নিজেদের স্বার্থরক্ষার কারণে সরকারের উপর সক্রিয়ভাবে চাপ সৃষ্টি করে তা আদায়ের চেষ্টা করে তাদের স্বার্থগোষ্ঠী বা স্বার্থগোষ্ঠী বলে। কাজেই স্বার্থগোষ্ঠীর ব্যক্তিবর্গ সমভাবাপন্ন হওয়ায় তাদের মূল্যবোধ এবং উদ্দেশ্যও একই ধরনের হয়।

এস ই ফাইনার (SE Finer) বলেছেন যে, জনপ্রতিনিধিত্বের দুটি মাধ্যম। তাদের মধ্যে একটি হল-স্বার্থগোষ্ঠী এবং অন্যটি হল-রাজনৈতিক দল। স্বার্থগোষ্ঠী সরকার ও বাক্তির মধ্যে শূন্যস্থান দূর করে দিয়ে সম্পর্ক সুদৃঢ় করে। স্বার্থগোষ্ঠীসমূহের প্রধান কাজগুলি হল:-

রাজনৈতিক দলগুলির কর্মসূচি রূপায়ণ

স্বার্থগোষ্ঠীগুলি সরাসরি সরকার গঠন না করলেও অনেক সময় দেখা যায় যে স্বার্থগোষ্ঠীগুলি রাজনৈতিক দলের নীতি ও কর্মসূচি গ্রহণের ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে কাজ করে। কোনো একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে শ্রমিক, ছাত্র, কৃষক, মহিলা, যুব প্রভৃতি যেসব গোষ্ঠী থাকে, তাদের মুখ্য নেতারা সংশ্লিষ্ট দলের নীতি নির্ধারণ ও কর্মসূচিগ্রহণের সময় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।

সিদ্ধান্তগ্রহণের কাজ

আইনসভায় আইন প্রণেতারা আইন সম্পর্কিত আলোচনার সময় বিভিন্ন রকমের তথ্য, পরিসংখ্যান, মনোভাব প্রভৃতি সম্পর্কে স্বার্থগোষ্ঠীর কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে থাকেন। স্বার্থগোষ্ঠীগুলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা, প্রতিক্রিয়া দাবি দেখে সেগুলিকে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের দ্বারা আইনসভায় উপস্থিত করতে পারে।

রাজনৈতিক নিয়োগের ওপর প্রভাব

স্বার্থগোষ্ঠীগুলি উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক নিযুক্তির ক্ষেত্রে প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করে। কোনো রাজনৈতিক নেতার রাজনৈতিক কর্মসূচি স্বার্থগোষ্ঠীর সদস্য বা নেতা হিসেবে শুরু হয়। সংশ্লিষ্ট নেতা যদি কখনও সরকারি দায়িত্ব বা সেবার কাজে নিযুক্ত হন তাহলে তার ওপর সেসব সরকারি দফতরের কাজের দায়িত্ব এসে পড়লে সেইসব দায়িত্ব পালনে অসুবিধা হয় না।

নির্বাচনের ক্ষেত্রে সহায়তাদান

রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে জয়যুক্ত হওয়ার জন্য স্বার্থগোষ্ঠীগুলির রাজনৈতিক কাজকর্মের শিক্ষা, জনসাধারণের নানা সমস্যা সম্পর্কে সচেতন থাকে। স্বার্থগোষ্ঠীগুলির মনোভাব ও স্বার্থ রূপায়িত করে রাজনৈতিক দলসমূহ। কারণ স্বার্থগোষ্ঠীগুলো নিজেদের বিশেষ বিশেষ দাবিগুলিকে তুলে ধরে রাজনৈতিক দলের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে।

সংযোগসাধনমূলক কাজ

স্বার্থগোষ্ঠীগুলি অনেকসময় নিজেদের দাবির সমর্থনে জনমত গঠন করে এবং এই কারণে সমাজের বিভিন্ন স্তরে মানুষের মধ্যে তারা সংযোগ রাখারও ব্যবস্থা করে থাকে। তা ছাড়া স্বার্থগোষ্ঠীগুলি রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে জনসাধারণের একটা সংযোগ ঘটিয়ে দেয়। রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে নির্বাচনের সময় এবং বিশেষ কোনো পরিস্থিতির ব্যাপারে জনগণের সংযোগ ঘটে।

কিন্তু স্বার্থগোষ্ঠীগুলি সার্বিকভাবে নাগরিকদের সমস্যা ও নানা অভিযোগের সম্মুখীন হয় বলে জনসাধারণের সঙ্গে তাদের একটা যোগসূত্র স্বাভাবিকভাবেই থেকে যায়। এই কারণে স্বার্থগোষ্ঠীগুলি সংকীর্ণ স্বার্থের মধ্যে না গিয়ে বরং জনগণের নানা অভাব-অভিযোগ, সমস্যা প্রভৃতির সমাধানের ব্যাপারে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।

জনমত গঠনের ক্ষেত্রে ভূমিকা

স্বার্থগোষ্ঠীগুলি মানুষের অভাব-অভিযোগ, সমস্যা প্রভৃতি এবং দাবিদাওয়াকে প্রচার করার জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে এবং তাদের স্বার্থের অনুকূলে জনমত গড়ে তোলার কাজে সচেষ্ট থাকে। এ ছাড়াও স্বার্থগোষ্ঠীগুলি তাদের আন্দোলনের হাতিয়ার ধর্মঘট, প্রচার পুস্তিকা বিতরণ, বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সভাসমিতি প্রভৃতি গঠন করে জনসাধারণের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে।

ব্যক্তিগত যোগাযোগের মধ্যস্থতাকারী

স্বার্থগোষ্ঠী সরকারি সিদ্ধান্তগুলিকে প্রভাবিত করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ বজায় রাখার জন্য সচেষ্ট থাকে। চাপসৃষ্টিকারী কোনো গোষ্ঠীর সাথে যদি সরকারি দপ্তরের কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকে তাহলে স্বার্থগোষ্ঠী তাকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টা করে।

বিচার বিভাগের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার

স্বার্থগোষ্ঠীগুলি নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বিচার বিভাগের মাধ্যমেও প্রভাব বিস্তার করে থাকে। বিচারপতিদের নিয়োগের সময় স্বার্থগোষ্ঠীগুলি চেষ্টা করে যাতে তাদের গোষ্ঠীভুক্ত কোনো সদস্যকে ওই পদে নিয়োগ করা যায়। এইভাবে স্বার্থগোষ্ঠীগুলি বিচার বিভাগের সিদ্ধান্তকেও প্রভাবিত করে থাকে।

উপসংহার

স্বার্থগোষ্ঠীগুলির ভূমিকাপালন অনেকাংশে নির্ভর করে রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রকৃতির সঙ্গে তা কতখানি সাযুজ্যপূর্ণ তার ওপর। স্বার্থগোষ্ঠীগুলির ভূমিকা কেবল উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতেই পালন করতে দেখা যায়, সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা য় তা বিশেষ কার্যকর হয়।

0/Post a Comment/Comments