বিশ্বব্যাপী তামাকের উৎপাদন ও বণ্টন দেখাও

আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে বিশ্বব্যাপী তামাকের উৎপাদন ও বণ্টন দেখাও নিয়ে আলোচনা করব।

বিশ্বব্যাপী তামাকের উৎপাদন ও বণ্টন দেখাও

বিশ্বব্যাপী তামাকের উৎপাদন ও বণ্টন দেখাও। অথবা, তামাক চাষের অনুকূল অবস্থা, উৎপাদন, বিশ্ব বণ্টন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বিবরণ দাও।

ভূমিকা:

নিকোটিনিয়া জাতীয় এক প্রকার ক্ষুদ্র উদ্ভিদের পাতা তামাক অতি সাধারণ বিলাসপণ্য। তামাকের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে:-

Nicotainal Tobacum- যার উৎপত্তি Solanaceae পরিবার থেকে। আমেরিকার ক্রান্তীয় অঞ্চলে তামাকের প্রথম আবাদ শুরু হলেও পরবর্তীতে এটির আবাদ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তামাক গাছের পাতা সংগ্রহ করে তা শুকিয়ে ও সেঁকে তামাক প্রস্তুত করা হয়।

তামাক চাষের অনুকূল অবস্থা/উপাদান: তামাক চাষে নিম্নলিখিত প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক অনুকূল অবস্থা/উপাদানসমূহের দরকার হয়।

ক) প্রাকৃতিক উপাদানঃ

তামাক চাষের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক উপাদানসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

  1. জলবায়ু: ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চল তামাক চাষের জন্য উপযোগী। উপযুক্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলেও এর চাষ করা যায়।
  2. উষ্ণতা: তামাক চাষের জন্য যথেষ্ট উষ্ণতার প্রয়োজন। সাধারণত ২৩০-২৮০ সে. উত্তাপে তামাক ভালো জন্মে।
  3. বৃষ্টিপাত: তামাক চাষের জন্য পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও আর্দ্র আবহাওয়া প্রয়োজন। যে সকল অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ২০০-২৫০ সেমি সেসব অঞ্চলে তামাকের চাষ ভালো হয়। বৃষ্টিপাত কম হলে তামাকের পাতা ছোট এবং এর গুণাগুণ হ্রাস পায়।
  4. মৃত্তিকা: তামাক চাষের জন্য চুন, পটাশ ও জৈব পদার্থ মিশ্রিত হালকা বেলে মাটির প্রয়োজন। মাটির গুণাগুণের উপর তামাকের গুণাগুণ নির্ভরশীল। তামাক সাধারণত হালকা রংবিশিষ্ট ও গন্ধহীন বেলে মাটিতে উৎপাদিত হয়। পক্ষান্তরে, ভারী কাদামাটিতে উৎপাদিত তামাকের রং কালো, ওজনে ভারী ও তীব্র গন্ধযুক্ত।
  5. ভূপ্রকৃতি: তামাক সাধারণত পাহাড়িয়া এলাকার ঢালু সমভূমি ও বৃষ্টিবহুল অঞ্চলে ভালো জন্মে।

(খ) অর্থনৈতিক উপাদানঃ

নিম্নে তামাক চাষের অনুকূল অর্থনৈতিক উপাদানসমূহ বর্ণনা করা হলো:

  1. শ্রমিক: তামাক চাষের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে সুলভ শ্রমিকের প্রয়োজন। ভূমিকর্ষণ, চারা রোপণ, পরিচর্যা, সার প্রদান ও তামাক সংগ্রহ ইত্যাদি কাজের জন্য শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।
  2. মূলধন: তামাক চাষ যথেষ্ট ব্যয়বহুল। তাই বীজ, সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি প্রদানের জন্য প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন হয়।
  3. বীজ: ভালো তামাকের জন্য ভালো বীজের দরকার। ভালো বীজ না হলে অন্যান্য উপাদানগুলো অনুকূল থাকলেও ফলন কম হবে।
  4. সার: তামাক চাষের কারণে জমি উর্বরতা শক্তি হ্রাস পায়। তাই জমির উর্বরতাকে ধরে রাখার জন্য মাঝে মাঝে সার প্রয়োগ করতে হয়।
  5. কীটনাশক ঔষধ: তামাক বিভিন্ন পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত হলে পর্যাপ্ত ঔষধ ব্যবহারের মাধ্যমে গাছকে রক্ষা করতে হয়।
  6. পরিবহন: শ্রমিক, সার, বীজ ইত্যাদি আনা-নেয়া এবং তামাক সংগ্রহ ও বাজারে বিক্রয়ের জন্য উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা অপরিহার্য।

বিশ্বব্যাপী তামাক উৎপাদন ও বণ্টন:

২০১৯ সালে পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশে সর্বমোট ৪০ লক্ষ ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে তামাকের চাষ করে প্রায় ৭০ লক্ষ ৭ হাজার মেট্রিক টন তামাক উৎপন্ন হয়। তামাক উৎপাদনে এশিয়া মহাদেশ বিশ্বে শীর্ষস্থানীয়। তামাক উৎপাদনে দক্ষিণ আমেরিকা দ্বিতীয় এবং ইউরোপ তৃতীয়। নিচে মহাদেশ অনুযায়ী পৃথিবীর তামাক উৎপাদনের বিবরণ দেয়া হলোঃ নিম্নে বিশ্বের প্রধান প্রধান তামাক উৎপাদনকারী অঞ্চলের উৎপাদন ও বণ্টন আলোচনা করা হলো:

  1. চীন: বর্তমানে তামাক উৎপাদনে চীন বিশ্বে প্রথম। ২০১৯ সালে এদেশে ২৬১১৬১০ হাজার মেট্রিক টন তামাক উৎপন্ন হয়। এটি পৃথিবীর মোট উৎপাদনের প্রায় ৩৯.০৬%। চীনের ইয়াংসিকিয়াং ও সিকিয়াং নদী অববাহিকায় এবং রেড অববাহিকার চেংতুর পানি সেচিত অঞ্চলে তামাকের চাষ হয়।
  2. ভারত: বর্তমানে তামাক উৎপাদনে ভারত বিশ্বে তৃতীয়। ২০১৯ সালে এদেশে উৎপাদিত তামাকের পরিমাণ ছিল ৮০৪.৪৫৪ মট্রিক টন। অন্ধ্র, গুজরাট, তামিলনাড়ু, কর্নাটক, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি রাজ্যসমূহ তামাক চাষের জন্য প্রসিদ্ধ।
  3. ব্রাজিল: ২০১৯ সালে ব্রাজিলে ৭৬৯.৮০৪ হাজার মেট্রিক টন তামাক উৎপাদন হয়। তামাক উৎপাদনে ব্রাজিল বিশ্বে দ্বিতীয়।
  4. আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র: তামাক উৎপাদনে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে চতুর্থ। ২০১৯ সালে এদেশে ২১৬.২০৬ হাজার মেট্রিক টন। তামাক উৎপন্ন হয়। এটি পৃথিবীর মোট উৎপাদনের প্রায় ৪.৬০%। এদেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকরাই তামাকের পত্তন করেছিল। এর মিসিসিপি নদীর উপত্যকা হতে পূর্বদিকে আটলান্টিক উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত কেন্টাকি, ভার্জিনিয়া, টেনেসি, উত্তর ও দক্ষিণ ক্যারোলিনা এবং জর্জিয়া রাজ্যে দেশের ৯০% তামাক উৎপাদিত হয়। ভার্জিনিয়া রাজ্যের তামাক স্বাদে ও গন্ধে পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠত্বের আসন সন লাভ করেছে।
  5. তুরস্ক: তামাক উৎপাদনে তুরস্ক বিশ্বে পঞ্চম। ২০১৯ সালে এদেশে উৎপাদিত তামাকের পরিমাণ ছিল ৫৫ হাজার মেট্রিক টন।
  6. ইন্দোনেশিয়া : তামাক উৎপাদনে ইন্দোনেশিয়া বিশ্বে ৬ষ্ঠ। ২০১৯ সালে এদেশে ১৯৭.২৫০ হাজার মেট্রিক টন তামাক উৎপন্ন হয়। সুমাত্রা ও জাভা তামাক চাষে প্রসিদ্ধ।
  7. কানাডা: কানাডার প্রচুর তামাক উৎপন্ন হয়। ২০১৯ সালে এদেশে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন তামাক উৎপন্ন হয়। তবে এখানে হেক্টরপ্রতি তামাক উৎপাদনের পরিমাণ খুবই বেশি। কানডার মধ্যঞ্চলে সবচেয়ে বেশি তামাক উৎপন্ন হয়।
  8. কিউবা: এদেশে বার্ষিক প্রায় ৩৩ হাজার মেট্রিক টন তামাক উৎপন্ন হয়। সুগন্ধি তামাকের জন্য এদেশ পৃথিবী বিখ্যাত।
  9. জাপান: তামাক উৎপাদনে জাপান বিশ্বে দ্বাদশ। ২০১০ সালে এদেশে প্রায় ২৯ হাজার মেট্রিক টন তামাক উৎপন্ন হয়। তামাকের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য (International Trade of Tobacco): পৃথিবীর মোট উৎপাদিত তামাকের প্রায় অধিকাংশই বিশ্ববাজারে আমাদানি হয়।

রপ্তানিকারক দেশসমূহ:

তামাক রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে প্রথম, ব্রাজিল দ্বিতীয়, জিম্বাবুয়ে তৃতীয় এবং তুরস্ক চতুর্থ। এছাড়া চীন, গ্রিস, ভারত, ইতালি, মালাউই, বুলগেরিয়া প্রভৃতি দেশও প্রচুর তামাক রপ্তানি করে থাকে।

আমাদানিকারক দেশসমূহ:

তামাক আমদানিকারক দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়া বিশ্বে প্রথম, যুক্তরাজ্য দ্বিতীয়, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় এবং জার্মানি চতুর্থ। এছাড়া ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, মিশর, বেলজিয়াম, প্যারাগুয়ে প্রভৃতি দেশও বিশ্ব বাজারে প্রচুর তামাক আমদানি করে থাকে।

উপসংহার:

উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বিশ্বে তামাকের প্রচুর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও সব দেশে তামাক উৎপন্ন হয় না। কারণ তামাক সেবন ও ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। তাই অনেক দেশই তামাক চাষে আগ্রহী হয় না।

আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। বিশ্বব্যাপী তামাকের উৎপাদন ও বণ্টন দেখাও এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

Next Post Previous Post
🟢 কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।

comment url