বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কার্যকলাপের উপর জলবায়ুর প্রভাব বর্ণনা কর
আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কার্যকলাপের উপর জলবায়ুর প্রভাব বর্ণনা কর নিয়ে আলোচনা করব।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কার্যকলাপের উপর জলবায়ুর প্রভাব বর্ণনা কর। অথবা, বাংলাদেশের অধিবাসীদের অর্থনৈতিক জীবনের উপর জলবায়ুর প্রভাব বর্ণনা কর।
ভূমিকা
বাংলাদেশ মৌসুমি জলবায়ুর দেশ। গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম এবং শীতকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বাংলাদেশের বৃষ্টিপাত ও উষ্ণতা এ মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের উপর নির্ভর করে। গ্রীষ্মের শেষে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। শীতকাল শুষ্ক থাকে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কার্যকলাপের উপর জলবায়ুর প্রভাব/গুরুত্বঃ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মৌসুমি জলবায়ুর গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশেষ করে কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য প্রভৃতির উপর মৌসুমি জলবায়ুর প্রভাব যথেষ্ট। নিম্নে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব ও গুরুত্ব আলোচনা করা হলো:
কৃষির উপর প্রভাব
বাংলাদেশের কৃষি সম্পূর্ণরূপে বৃষ্টিপাত বা মৌসুমি বায়ু দ্বারা প্রভাবিত। কৃষি প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে মৌসুমি বায়ুর উপর নির্ভরশীল। কৃষির উপর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব কী কী তা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
(ক) কৃষি উন্নয়ন: মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত পরিমাণে বৃষ্টিপাত হলে জমিতে প্রচুর ফসল উৎপন্ন হয়। বস্তুত বাংলাদেশের প্রধান প্রধান ফসল যেমন- ধান, পাট, ইক্ষু, তামাক, চা প্রভৃতি উৎপাদন একান্তভাবে মৌসুমি বায়ুর উপর নির্ভরশীল।
(খ) রবি শস্য উৎপাদন: মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে শীতকালের বৃষ্টিপাত বাংলাদেশের প্রধান প্রধান রবি শস্য যেমন- গম, তামাক, ছোলা, মসুর, সরিষা প্রভৃতি উৎপন্ন হয়। (গ) অর্থকরী ফসল উৎপাদন: মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে পাহাড়ি অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং ঐসব অঞ্চলে বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল চা ও রাবার চাষ সমৃদ্ধি লাভ করেছে।
(ঘ) কৃষিজমির উর্বরতা বৃদ্ধি: মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে বাংলাদেশের নদনদীগুলো পানিতে ভরে যায় এবং নদীবাহিত পলি মাটির দ্বারা কৃষি উর্বরতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
(ঙ) সমভাবাপন্ন জলবায়ু: সমভাবাপন্ন জলবায়ু কৃষির জন্য উপযোগী। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশের জলবায়ু সমভাবাপন্ন হয়েছে।
(চ) বিভিন্ন প্রকার ফসল উৎপাদনে সহায়ক: মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন আবহাওয়া বিরাজ করে এবং এ আবহাওয়া বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে সহায়ক।
(ছ) পানি সরবরাহ: বাংলাদেশে পানি সেচব্যবস্থা নেই বললেই চলে। ফলে কৃষিকার্যের জন্য পানি সরবরাহের একমাত্র উৎস বৃষ্টিপাত, যা এদেশের মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সংঘটিত হয়ে থাকে।
(জ) সম্পদ বৃদ্ধি পায়: মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এদেশের প্রচুর ফসল উৎপাদন হয় বলে মোট সম্পদ বৃদ্ধি পায়। মোটকথা মৌসুমি বায়ু দ্বারা বাংলাদেশের কৃষিজ উৎপাদন বৃদ্ধি পায় বলে দেশের সম্পদ বৃদ্ধি পায়, সরকারের রাজস্ব বাড়ে, জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়, কৃষিনির্ভর শিল্পের উন্নয়ন ঘটে। দেশের বেকারত্ব দূর হয়, তথা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির উন্নতি ঘটে। সুতরাং বলা যায়, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের কৃষির প্রাণ শক্তিস্বরূপ।
শিল্পের ক্ষেত্রে মৌসুমি বায়ুর গুরুত্ব
কৃষি নির্ভরশীল শিল্পগুলো হচ্ছে- পাট শিল্প, চা শিল্প বস্ত্র শিল্প, কাগজ শিল্প প্রভৃতি। জলবায়ু অনুকূল হলে শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়। এই কাঁচামালের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের পাটশিল্প বিশ্ব সুনাম অর্জন করেছে।
বনজসম্পদের উন্নয়ন
মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সুন্দরবন এবং উত্তর ও উত্তর-পূর্বাংশে বনভূমি গড়ে উঠেছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ বনজ সম্পদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বনভূমি বাংলাদেশের কাগজ ও রেয়ন শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ করে।
জীবজন্তুর উপর প্রভাব
বাংলাদেশের অধিকাংশ জীবজন্তু তৃণভোজী। এরা প্রত্যক্ষভাবে মৌসুমি বায়ুর উপর নির্ভরশীল। এছাড়া বাঘ, শৃগাল প্রভৃতি মাংসাশী প্রাণীও পরোক্ষভাবে মৌসুমি বায়ুর উপর নির্ভরশীল।
মৎস্য সম্পদের উপর প্রভাব
বাংলাদেশে মৌসুমি জলবায়ুর প্রভাবে বর্ষা ঋতুতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এতে নদী-নালা, খাল- বিল, পুকুর প্রভৃতি পানিতে ভরে যায় এবং এতে প্রচুর মাছ জন্মে থাকে।
পরিবহন ব্যবস্থার উপর প্রভাব
মৌসুমি জলবায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হওয়ার ফলে বাংলাদেশের নদীগুলো প্রায় সারা বছরই নাব্য থাকে। এ নদী পথে প্রায় ৮৫% পণ্যসামগ্রী ও যাত্রী চলাচল করে। ফলে দেশের অর্থনীতিতে নৌ-পরিবহনের গুরুত্ব অত্যধিক।
উপজীবিকার উপর
মৌসুমি জলবায়ু মানুষের উপজীবিকার উপরে সর্বাধিক প্রভাব বিস্তার করে। মৌসুমি জলবায়ু কৃষির উপযোগী বলে বাংলাদেশের অধিকাংশ লোকই কৃষিজীবী।
ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর প্রভাব
বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বৃষ্টিপাত পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশের কৃষিজ, বনজ, মৎস্য ইত্যাদি সম্পদ বৃদ্ধি পায় বলে দেশের মোট জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায়। এবং শিল্পকারখানার সম্প্রসারণ ঘটে। ফলে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটে।
জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হওয়ায় এদেশের শতকরা প্রায় ৮০ জনই কৃষির উপর নির্ভরশীল। সময়মতো বৃষ্টিপাত হলে কৃষকদের ফসল ভালো হয়। ফলে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।
মৃত্তিকার উর্বরতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রভাব
মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে মৌসুমি বায়ু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
রপ্তানি বাণিজ্যের উপর প্রভাব
সময়মতো বৃষ্টিপাত হলে শিল্পের কাঁচামালের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, যা পরবর্তী সময়ে রপ্তানি বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
উপসংহার
উপরিউক্ত আলোচনা হতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, দেশের অর্থনীতিতে তথা কৃষি, শিল্প, বাণিজ্যের উন্নতিতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব সর্বাধিক। মৌসুমি বায়ু বিরূপ হলে যেমন শস্য উৎপাদন হ্রাস পায় তেমনি অর্থনীতিতে বিপর্যয় দেখা দেয়। সুতরাং বাংলাদশের অর্থনীতিতে মৌসুমি বায়ুর গুরুত্ব অনস্বীকার্য। তাই এদেশের কৃষিকে 'মৌসুমি বায়ুর জুয়া খেলা' বলা হয়ে থাকে।
আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কার্যকলাপের উপর জলবায়ুর প্রভাব বর্ণনা কর এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url