বাংলাদেশের কৃষির সমস্যা বা অনগ্রসরতার কারণগুলো উল্লেখ কর
আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে বাংলাদেশের কৃষির সমস্যা বা অনগ্রসরতার কারণগুলো উল্লেখ কর নিয়ে আলোচনা করব।
বাংলাদেশের কৃষির সমস্যা বা অনগ্রসরতার কারণগুলো উল্লেখ কর। অথবা, বাংলাদেশের খাদ্য ঘাটতির কারণসমূহ উল্লেখ কর।
ভূমিকা
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে সুপরিচিত। এদেশের শতকরা ৮০ জন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষিকার্য করে জীবিকা নির্বাহ করে। কৃষির উন্নতির সাথে সাথে বাংলাদেশের উন্নতি এ সূত্রে গ্রথিত, কিন্তু বাংলাদেশের কৃষি অনুন্নত। প্রতি একর জমিতে ফলন কম এবং কৃষকরা অত্যন্ত দরিদ্র। এ উৎপাদন হ্রাসের পিছনে অতি বৃষ্টি, খরা, সারের অভাব, মান্ধাতার আমলের চাষাবাদ পদ্ধতি, অশিক্ষা, কীটপতঙ্গের উৎপাত প্রভৃতি কাজ করে।
বাংলাদেশের কৃষির সমস্যা
নিম্নে বাংলাদেশের কৃষির সমস্যাবলি বা অনগ্রসরতার কারণ বা খাদ্য ঘাটতির কারণসমূহ আলোচনা করা হলো:
১। বৈজ্ঞানিক চাষ পদ্ধতির অভাব:
জমির অত্যধিক খন্ডীকরণ, মূলধনের অভাব, শিক্ষার অভাব প্রভৃতি বিভিন্ন কারণে আমাদের দেশের কৃষকরা আধুনিক বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কৃষি উৎপাদনে চাষাবাদ করতে পারে না। প্রাচীন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার দরুন আমাদের দেশে কৃষির উৎপাদন আশানুরূপ বৃদ্ধি পাচ্ছে না।
২। প্রতি একর জমিতে ফলন কম:
অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে একর প্রতি জমির ফলন অনেক কম।
৩। খণ্ড খণ্ড জমি ও বিচ্ছিন্ন জমি:
বাংলাদেশের কৃষকরা যে সকল জমি চাষ করে তা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খণ্ডে বিভক্ত এবং বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে পড়ে রয়েছে।
৪। অশিক্ষিত কৃষক:
বাংলাদেশের কৃষকরা গরিব ও অশিক্ষিত। দিনরাত পরিশ্রম করে ঠিকভাবে দু'বেলা মোটা ভাত ও পরনের কাপড় যোগাড় করতে পারে না।
৫। মূলধনের অভাব:
আমাদের কৃষকদের আয় কম, সঞ্চয়ও কম। এজন্য কৃষকদের হাতে মূলধন নেই বললেই চলে। মূলধনের অভাবে কৃষকরা কৃষি পদ্ধতি আধুনিকীকরণ করতে পারে না।
৬। কীটনাশক ওষুধের অভাব:
অনেক সময় কীটনাশক ওষুধ সরকারি কৃষিকেন্দ্রে থাকে না এবং থাকলেও আমাদের কৃষকগণ অর্থাভাবে তা জমিতে ব্যবহার করতে পারে না।
৭। পর্যাপ্ত ঋণের অভাব:
কৃষক সমাজ পর্যাপ্ত পরিমাণে যথাসময়ে ঋণ পায় না বলে উত্তম বীজ, সার, ওষুধ প্রভৃতি ক্রয় করে জমি ব্যবহার করতে পারে না।
৮। ভালো বীজ ও সারের অভাব:
অনেক সময় সরকারি বীজ কেন্দ্রে ভালো বীজ ও সার পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে কৃষকরা জমিতে নিম্নমানের বীজ বপন করে ও সার ব্যবহার করে।
৯। ত্রুটিপূর্ণ ভূমি ব্যবস্থা:
বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ। যারা চাষাবাদ করে তাদের শতকরা ২৫ জন ভূমিহীন ক্ষেতমজুর।
১০। সেচব্যবস্থার অভাব:
অধিক ফসল উৎপন্ন করার জন্য ভালো সেচের প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশে পানির সেচের একান্ত অভাব।
১১। ত্রুটিপূর্ণ বাজারব্যবস্থা:
বাংলাদেশে কৃষিজাত দ্রব্যের বাজারব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ। অনুন্নত যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য কৃষকরা লাভজনক বাজারের তথ্য ও খবর পায় না।
১২। অনাবাদি জমি:
বাংলাদেশে মোট জমির মধ্যে প্রায় ১ কোটি ২৫ লক্ষ একর জমি অনাবাদি রয়েছে। এর ফলে কৃষি হতে যে পরিমাণ দ্রব্য উৎপাদন করা যেত তা অপেক্ষা অনেক কম ফসল উৎপন্ন হয়।
১৩। জলাবদ্ধতা:
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ২,৪৬৪ টি হাওর ও বিল রয়েছে। এদের মোট আয়তন প্রায় ৭.২৪ লক্ষ একর। জলাবদ্ধতার কারণে এ সকল জমি চাষের অযোগ্য হয়ে আছে।
১৪। লবণাক্ততা:
বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলের শত শত একর জমিতে প্রতি বছর সমুদ্রের লোনা পানি প্রবেশ করে। ফলে জমি চাষের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
১৫। বন্যা:
প্রতি বছর বন্যা বাংলাদেশের হাজার হাজার একর জমির ফসল ধ্বংস করে ফেলে।
১৬। ভূমির উর্বরতা হ্রাস:
বাংলাদেশের কৃষিজমিতে ক্রমাগতভাবে একই ফসল চাষ করা হয়। এর ফলে জমির উর্বরতা দিন দিন ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে।
১৭। প্রাকৃতিক দুর্যোগ:
প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে আমাদের দেশে খাদ্যশস্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এর ফলে দেশে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়।
১৮। খাদ্যশস্য সংরক্ষণের অভাব;
বাংলাদেশের খাদ্যশস্য সংরক্ষণের জন্য গুদাম, কোল্ড স্টোরেজ প্রভৃতি ব্যবস্থার যথেষ্ট অভার রয়েছে।
১৯। অর্থকরী ফসল উৎপাদনে অধিক আগ্রহ:
সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশের কৃষকদের মধ্যে খাদ্যশস্য উৎপাদন অপেক্ষা অর্থকরী ফসল উৎপাদনে অধিক আগ্রহ দেখা দেয়। এর ফলে দেশে শস্যের উৎপাদন হ্রাস পায় এবং খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়।
২০। খাদ্য মজুদ:
অনেক সময় দেশের অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় খাদ্যশস্য মজুদ করে দেশে কৃত্রিম খাদ্য সংকট সৃষ্টি করে।
২১। চোরাচালান:
চোরাচালানকারী ব্যবসায়ীরা বেআইনিভাবে খাদ্যশস্য বিদেশে পাচার করে থাকে। ফলে দেশে খাদ্যাভাব দেখা দেয়।
২২। অনিশ্চিত উৎপাদন:
প্রকৃতির উপর নির্ভরশীলতা শস্য উৎপাদনের অনিশ্চয়তার প্রধান কারণ।
২৩। ভূমি ক্ষয়:
বাংলাদেশের কৃষির অনগ্রসরতার পিছনে ভূমি ক্ষয় একটি গুরুত্বপূর্ণ বাধা।
২৪। ভূমির মালিকানা:
জমির মালিকবিহীন কৃষকগণ যথেচ্ছাভাবে ভূমি চাষ করে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট করে ফেলছে।
২৫। অনুন্নত পরিবহন ব্যবস্থা:
অনুন্নত পরিবহন ব্যবস্থার ফলে যথাসময়ে সার, বীজ, কৃষি যন্ত্রপাতি, উৎপাদিত ফসল ইত্যাদি সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণ, কৃষিক্ষেত্রে পৌঁছানো প্রভৃতি বিলম্ব ঘটে। এ অবস্থা কৃষি উৎপাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায় যে, উপরিউক্ত বিষয়সমূহের কারণে বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন কম। ফলে দেশে খাদ্য সমস্যা দেখা দেয়। মূলত এগুলো কৃষির অনগ্রসরতার প্রধান কারণ।
আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। বাংলাদেশের কৃষির সমস্যা বা অনগ্রসরতার কারণগুলো উল্লেখ কর এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url