ইক্ষু উৎপাদনের প্রয়োজনীয় ভৌগোলিক অবস্থানসমূহ আলোচনা কর

ইক্ষু উৎপাদনের প্রয়োজনীয় ভৌগোলিক অবস্থানসমূহ আলোচনা কর

ইক্ষু উৎপাদনের প্রয়োজনীয় ভৌগোলিক অবস্থানসমূহ আলোচনা কর। অথবা, আখ উৎপাদনে ভৌগোলিক উপাদানসমূহ উল্লেখ কর।

ভূমিকা: ইক্ষু গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের ফসল। ইক্ষু সরু এবং ২, ৪ হতে ৪, ৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। ইক্ষু গাছের কাণ্ড হতে যে রস বের হয় তা হতে গুড় বা চিনি তৈরি করা হয়। এর ছোবড়া ও পাতা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

এছাড়া ছোবড়া দ্বারা কাগজও তৈরি করা হয়। ইক্ষু উৎপাদনের প্রয়োজনীয় ভৌগোলিক অবস্থাসমূহঃ ইক্ষু চাষের প্রয়োজনীয় ভৌগোলিক উপাদানসমূহকে প্রধানত দু'টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন- ১। প্রাকৃতিক উপাদান এবং ২। অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান।

১। প্রাকৃতিক উপাদানসমূহ: ইক্ষু চাষের অনুকূল প্রাকৃতিক উপাদানসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো-

  • ভূপ্রকৃতিঃ উর্বর সমতল ভূমি ইক্ষু চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। তাই উঁচু ও ঢালু জমিতে ইক্ষুর চাষ ভালো হয়।
  • মৃত্তিকাঃ চুন ও পটাশ জাতীয় পদার্থ মিশ্রিত দো-আঁশ মাটি ইক্ষু চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। তাই নদী অববাহিকায় ও সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে ইক্ষুর ফলন ভালো হয়।
  • জলবায়ুঃ ইক্ষু ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলের ফসল। ইক্ষু উৎপাদনে প্রচুর উত্তাপ ও বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয়। (ক) উত্তাপ: সাধারণত ২৭০-৩৭° সেলসিয়াস তাপমাত্রা ইক্ষু চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। কারণ এ তাপমাত্রার ইক্ষুর ফলন ভাল হয়।
  • বৃষ্টিপাত: অল্প বৃষ্টিপাত অঞ্চলে ইক্ষু চাষের জন্য পানি সেচের প্রয়োজন হয়। তাই ইক্ষু চাষের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয়। সাধারণত ১২৫-১৭৫ সেসি বৃষ্টিপাত অঞ্চলে ইক্ষুর ফলন ভালো হয়।

২। অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান: ইক্ষু চাষের প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উপাদানগুলো নিম্নরূপঃ

  • মূলধনঃ ইক্ষু চাষের জন্য মূলধনের প্রয়োজন অত্যন্ত বেশি। কারণ ইক্ষু চাষের বিভিন্ন পর্যায়ে যেমন- চাষের বলদ বা যন্ত্রপাতি, বীজ, সার, কীটনাশক ওষুধ ক্রয়, চারা লাগানো, শ্রমিকের মজুরি প্রভৃতি বাবদ প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন হয়।
  • শ্রমিকঃ ইক্ষু চাষের জন্য শ্রমিকের যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে। ভূমি কর্ষণ হতে শুরু করে শস্য কর্তন পর্যন্ত সকল কাজে প্রচুর দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।
  • বাজার: বাজারের উপর ইক্ষু চাষ বহুলাংশে নির্ভরশীল। সাধারণত অর্থকরী ফসল হিসেবে ইক্ষুর চাষ হয়। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে ইক্ষু ও এর দ্বারা তৈরি চিনির ব্যাপক চাহিদা না থাকলে ইক্ষু চাষ লাভজনক হয় না। তাই ইক্ষু চাষের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু বাজারব্যবস্থা একান্ত প্রয়োজন।
  • পরিবহন ব্যবস্থাঃ সুষ্ঠু পরিবহন ব্যবস্থার উপরও ইক্ষু চাষ নির্ভরশীল। উৎপাদিত ভূমি হতে ইক্ষু দ্রুত চিনি কলে নিয়ে যাওয়া এবং উৎপাদিত চিনি দেশ-বিদেশের বাজারে প্রেরণের জন্য সুলভ পরিবহন ব্যবস্থার প্রয়োজন।
  • উন্নত বীজঃ ভালো ও অধিক ফসল পেতে হলে ইক্ষু চাষের জন্য উন্নত বীজের প্রয়োজন।
  • সার প্রয়োগঃ ইক্ষু গাছ অতি দ্রুত মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট করে ফেলে। তাই মাটির উর্বরতা শক্তি সংরক্ষণের জন্য ইক্ষু জমিতে প্রচুর জৈব ও নাইট্রোজেন সার প্রয়োজন।
  • কীটনাশক ওষুধঃ এক প্রকার পোকা ইক্ষু গাছের ডগা ও কাণ্ড ছিদ্র করে ইক্ষু গাছের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। তাই কীটনাশক ওষুধ ছিটিয়ে পোকা দমন করতে হয়।

উপসংহারঃ ইক্ষু চাষের জন্য জমি হতে ভাল ফলন পেতে হলে উল্লিখিত প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উপাদানসমূহ বিশেষ প্রয়োজন।

0/Post a Comment/Comments