আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলতে কী বুঝ? আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সুবিধা ও অসুবিধা লেখ
আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলতে কী বুঝ? আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সুবিধা ও অসুবিধা লেখ নিয়ে আলোচনা করব।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য: আধুনিক বিশ্বের কোনো দেশই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। একজন ব্যক্তির পক্ষে যেমন তার প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করা সম্ভব হয় না, তেমনি কোনো দেশও নিজস্ব প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করতে পারে না। এজন্য একটি দেশকে প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর আদান-প্রদান তথা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অন্য দেশের উপর নির্ভর করতে হয়।
অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলতে দুই বা ততোধিক সার্বভৌম রাষ্ট্রের মধ্যে দ্রব্যসামগ্রী বা সেবাকর্মের আদান-প্রদানকে বুঝায়। বিশ্বের কোনো একটা দেশের সাথে অন্য কোনো দেশের বা একাধিক দেশের যে বাণিজ্য চলে তাকেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
সুবিধাসমূহঃ
- অনুৎপাদিত দ্রব্য ভোগের সুবিধা: কোনো দেশই তার প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্য নিজে উৎপাদন করতে পারে না। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে একটি দেশ তার প্রয়োজনীয় অনুৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী সহজেই বিদেশ হতে সংগ্রহ করতে পারে।
- মোট উৎপাদন বৃদ্ধি পায়: একটি দেশ সকল প্রকার দ্রব্য সমান পারদর্শিতার সাথে উৎপাদন করতে পারে না। তাই যে দেশের যে দ্রব্য উৎপাদনে আপেক্ষিক সুবিধা বেশি সে দেশ সেই দ্রব্য উৎপাদন করবে। এভাবে আন্তর্জাতিক শ্রম বিভাগ ও বিশেষীকরণের ফলে পৃথিবীর মোট উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
- প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা: গ্রহণ ও কোনো দেশ যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়, তাহলে দুর্যোগপূর্ণ এলাকার লোকজনকে বাঁচানোর জন্য খাদ্য, বস্ত্র, ঔষধ ইত্যাদির ঘাটতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে অন্য দেশ হতে আমদানি করে ঘাটতি পূরণ করতে পারে।
- উদ্বৃত্ত পণ্য বিদেশে রপ্তানির সুযোগঃ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে কোনো দেশের উদ্বৃত্ত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন বা অন্য কোনো প্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি করা সম্ভব। এভাবে একটি দেশ তার উদ্বৃত্ত পণ্যকে অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিয়োজিত করতে পারে।
- কম মূল্যের দ্রব্য ক্রয় করা যায়: যেসব দ্রব্য দেশের মধ্যে উৎপাদন করা ব্যয়বহুল তা কম দামে অন্য কোনো দেশ হতে ক্রয় করা সম্ভব। এভাবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে একটি দেশ নিজের দেশে ব্যয়বহুল দ্রব্য উৎপাদন না করে তা কম দামে বিদেশ হতে আমদানি করে দেশীয় মূলধনের সংস্থান করতে পারে।
- বিশ্বব্যাপী বাজার সম্প্রসারণঃ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে একটি দেশ তার রপ্তানিযোগ্য পণ্যের বাজার বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারণ করতে পারে।
- অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করে: আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষভাবে সহয়তা করে। উন্নয়নকামী দেশগুলো বিদেশ হতে যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল আমদানি করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
- দেশীয় উৎপাদকগণের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়ঃ বৈদেশিক বাণিজ্যের ফলে উৎপাদনকারিগণের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা দেখা দেয়। ফলে উৎপাদন খরচ হ্রাস এবং উৎপাদিত পণ্যের উৎকর্ষতা বৃদ্ধির জন্য উৎপাদকগণ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য নিজের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে সচেষ্ট হয়।
- জ্ঞান ও সংস্কৃতির প্রসার ঘটে: আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে বিভিন্ন দেশ পরস্পরের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসে এবং এর ফলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে জ্ঞান ও সংস্কৃতির প্রসার ঘটে।
- আন্তর্জাতিক শাস্তি বৃদ্ধি পায়: আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে বিভিন্ন জাতির মধ্যে আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়।
অসুবিধাসমূহ :
- অন্য দেশের উপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পায় : আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে একটি দেশ তার প্রয়োজনীয় সবগুলো দ্রব্য উৎপাদন করে না বলে অন্য দেশের উপর নির্ভরশীল হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় দ্রব্যের জন্য অন্য দেশের উপর অত্যধিক নির্ভরশীল হলে তা দেশের জন্য যুদ্ধ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি সময়ে জরুরি অবস্থায় অত্যন্ত বিপজ্জনক হবে।
- অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকারক দ্রব্যের আমদানি: আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংঘটিত হওয়ার ফলে দেশের মধ্যে অনেক অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকারক দ্রব্যের আমদানি হতে পারে, এর ফলে একদিকে জাতি অর্থনৈতিক দিক হতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অন্যদিকে জনসাধারণের নৈতিক মানেরও অবনতি ঘটে।
- সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে নাঃ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে কোনো দেশ কৃষিজাত দ্রব্য এবং কোনো দেশ শিল্পজাত দ্রব্য উৎপাদনে বিশিষ্টতা লাভ করে। ফলে কৃষি ও শিল্পের উন্নয়ন হয় না।
- অতিরিক্ত রপ্তানি দ্রব্য উৎপাদন সমস্যা: সরকারি করনীতি, অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে অনেক সময় রপ্তানিকারক দেশের পক্ষে আমদানিকারক দেশের সঠিক চাহিদা নিরূপণ করা সম্ভব হয় না। ফলে অতিরিক্ত রপ্তানি দ্রব্য উৎপাদনে সমস্যা দেখা দেয় এবং উৎপাদনকারীগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- অসাধু প্রতিযোগিতা ও ডাম্পিং: আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সুযোগ নিয়ে অনেক সময় এক দেশ অন্য দেশের শিল্পকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে কম দামে প্রচুর পরিমাণে দ্রব্য বিদেশে রপ্তানি করে। এ নীতিকে ডাম্পিং বলে।
- কাঁচামাল ও খনিজ সম্পদের মজুদ নিঃশেষ হয়: অনেক দেশ ভবিষ্যৎ প্রয়োজনের কথা চিন্তা না করে বর্তমান মুনাফা লাভের আশায় দেশ হতে অবাধে কাঁচামাল ও খনিজ সম্পদ রপ্তানি করে থাকে। এর ফলে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও খনিজ সম্পদের মজুদ ক্রমান্বয়ে নিঃশেষ হয়ে যায় এবং দেশি শিল্পের উন্নয়ন ব্যাহত হয়।
- আন্তর্জাতিক বিবাদ সৃষ্টি হয় : আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে এক দেশ অন্য দেশে কায়েমি স্বার্থ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সেজন্য শক্তিশালী দেশগুলো বিদেশি বাজার দখলের জন্য নানারকম অসাধু প্রচেষ্টা চালায়। ফলে বিভিন্ন জাতির মধ্যে স্বার্থের সংঘাত ও আন্তর্জাতিক বিবাদ দেখা দিতে পারে।
- দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন হয়: বিদেশিরা অনেক সময় ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে অন্য দেশে মূলধন নিয়োগ করে এবং সুযোগ বুঝে সে দেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর প্রভাব খাটাতে চেষ্টা করে। বিদেশিদের এ অশুভ চক্রান্তের শিকারে পরিণত হয়ে দুর্বল দেশগুলোর স্বাধীনতা অনেক সময় বিপন্ন হয়।
- বাণিজ্য শর্ত দরিদ্র দেশের প্রতিকূলে থাকে: আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে দরিদ্র দেশগুলো ধনী দেশের সাথে অসম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে কৃষিপ্রধান দেশগুলো হতে অধিক মূল্যে শিল্পজাত দ্রব্য আমদানি করতে বাধ্য হয়। ফলে বাণিজ্য শর্ত অধিকাংশ ক্ষেত্রে দরিদ্র দেশের প্রতিকূলে থাকে।
- অসম উন্নয়ন: আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে কোনো দেশ কৃষিতে ও কোনো দেশ শিল্পে বিশেষত্ব লাভ করে। ফলে দেশে সুষম উন্নয়ন লাভ করা যায় না।
উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের যেমন সুবিধা রয়েছে তেমনি অসুবিধাও বিদ্যমান রয়েছে। তবে অসুবিধার চেয়ে সুবিধাই বেশি রয়েছে।
আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলতে কী বুঝ? আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সুবিধা ও অসুবিধা লেখ এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url