পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্পর্ক

পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্পর্ক

পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্পর্ক  - Relationship of Civics & Good Governance with ICT (Information and Communications Technology) তথ্য দেওয়া-নেওয়া, সংরক্ষণ করা আবার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা, বিশ্লেষণ করা এবং নিজের কাজে ব্যবহার করার প্রযুক্তিই হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। পৌরনীতি ও সুশাসনের অন্যতম আলোচ্য বিষয় হলো নাগরিক যাতে কার্যকর সেবা পায় তা নিশ্চিত করার উপায় সংক্রান্ত আলোচনা।

নাগরিক সেবাকে সহজতর উপায়ে নাগরিকের কাছে পৌছে দেওয়ার কার্যকর উপায় হলো তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার। তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার নাগরিক জীবনকে করতে পারে সহজ, সরল এবং স্বাচ্ছন্দ্যময়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ল্যাপটপ, নোটবুক, ট্যাবলেট, স্মার্টফোন, মোবাইল ফোন ইত্যাদি।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অসংখ্য ব্যবহার রয়েছে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ, টেলিভিশনে দেশ-বিদেশের খবর দেখা, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ই-মেইল, চ্যাটিং, ভিডিও চ্যাটিং, ই বুক রিডারে বই পড়া, এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলা, জিপিএস ব্যবহার করে গাড়ি চালানো, অনলাইনে পত্রিকা পড়া ইত্যাদি আরও নানারকম ব্যবহার।

বর্তমানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে চালু করা হয়েছে ই-কমার্স, ই-গভর্নেন্স, ই-পুঁজি, ই-পার্লামেন্ট, ই-ডেমোক্রেসি, ই- গভর্নমেন্ট এরূপ আরও বহুবিধ বিষয়। তবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির এত ব্যাপক ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য হলো নাগরিক জীবনকে সহজ, স্বাচ্ছন্দ্যময় ও গতিশীল করে তোলা।

বর্তমানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিস্তৃতি এত বেশি যে মোটামুটি সকল অধ্যয়ন শাস্ত্রের সাথেই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির একটি সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এরই ধারাবাহিকতায় পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্পর্ক রচিত হয়েছে।

ক. ই-গভর্নেন্স ও ই-গভর্নমেন্ট এ বিষয় দুটি সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম অনুষঙ্গ। আর ই-গভর্নেন্স ও ই-গভর্নমেন্টের কার্যকারিতা প্রায় পুরোপুরি নির্ভর করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ওপর। আবার নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে শিক্ষা দিয়ে থাকে পৌরনীতি ও সুশাসন। নাগরিকরা যদি নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ না করে তবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সফল প্রয়োগ সম্ভব হয় না।

খ. পৌরনীতি ও সুশাসনের অন্যতম লক্ষ্য হলো দারিদ্র্য ও ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। এ ক্ষেত্রে অবাধ তথ্যপ্রবাহের গুরুত্ব অপরিসীম। তথ্যপ্রবাহের অন্যতম বাহন হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি।

গ. তথ্য অধিকার বর্তমানে নাগরিকের অন্যতম অধিকার হিসেবে বিবেচিত। তাই পৌরনীতি ও সুশাসনের আলোচনায় তথ্য অধিকার বিশেষ গুরুত্ব লাভ করে থাকে। নাগরিকের তথ্য অধিকার বাস্তবায়নে প্রধান মাধ্যম হিসেবে ভূমিকা পালন করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি।

ঘ. বাক স্বাধীনতা বা মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা নাগরিকের অন্যতম অধিকার। বাক স্বাধীনতা সুশাসনেরও অন্যতম একটি শর্ত। বাক স্বাধীনতা বা মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। এজন্য বলা যায়, নাগরিক অধিকারসমূহকে কার্যকর করতে বর্তমানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

অর্থাৎ পৌরনীতি ও সুশাসন সম্পর্কের দিক থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। সেই তুলনায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পৌরনীতি ও সুশাসনের ওপর তুলনামূলকভাবে কম নির্ভরশীল। ঙ. পৌরনীতি ও সুশাসনের অনুশীলন পদ্ধতি মূলত ঐতিহাসিক ও বিশ্লেষণধর্মী। কিন্তু তথ্য ও প্রযুক্তিবিদ্যার অনুশীলন পদ্ধতি মূলত গাণিতিক ও তথ্যনির্ভর।

চ. পৌরনীতি ও সুশাসনে বিদ্যমান সমস্যাগুলোকে নাগরিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয় এবং বিশ্লেষণ করা হয়। কিন্তু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে এগুলোকে দেখা হয় তথ্য ও প্রযুক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে।

পরিশেষে বলা যায়, পৌরনীতি ও সুশাসন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মধ্যে কিছু বৈসাদৃশ্য থাকলেও এদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেকে প্রস্তুত করতে হলে উভয় শাস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সমাজে সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।

0/Post a Comment/Comments