প্রকৃত মজুরি কী কী বিষয়ের উপর নির্ভর করে?
আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে প্রকৃত মজুরি কী কী বিষয়ের উপর নির্ভর করে? নিয়ে আলোচনা করব।
প্রকৃত মজুরি কী কী বিষয়ের উপর নির্ভর করে? অথবা, প্রকৃত মজুরি কী কী বিষয়ের উপর নির্ভরশীল? যেসব বিষয়ে প্রেক্ষিতে শ্রমিকের মজুরি বেশি বা কম হয় তা নিচে আলোচনা করা হলোঃ
- দাম স্তরঃ আর্থিক মজুরির পরিমাণ স্থির থাকলে দামস্তরের পরিবর্তনের ফলে প্রকৃত মজুরি কম-বেশি হয়ে থাকে। দ্রব্যের দাম বাড়লে শ্রমিকের ভোগ কমে এবং এর ফলে প্রকৃত মজুরিও কমে যায়। পক্ষান্তরে, দ্রব্যসামগ্রীর দাম কমলে শ্রমিক একাই পরিমাণ আর্থিক মজুরি দ্বারা পূর্বাপেক্ষা বেশি দ্রব্য সে ক্রয় করতে পারে। ফলে তার প্রকৃত মজুরি বাড়ে।
- কাজের প্রকৃতিঃ শ্রমিকের কাজ অপেক্ষাকৃত আরামদায়ক, মর্যাদাকর ও ঝুঁকিহীন হলে সেখানে শ্রমিকের মানসিক শান্তি বেশি থাকায় তার প্রকৃত মজুরি বেশি বলে গণ্য করা হয়। পক্ষান্তরে, যে কাজ বেশি পরিশ্রম সাপেক্ষ, অপ্রীতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ, সেখানে শ্রমিকের মানসিক চাপ বাড়ে ও শান্তি বিনষ্ট হয়। ফলে প্রকৃত মজুরি কম হয়।
- কাজের স্থায়িত্বঃ চাকরি নিয়মিত ও স্থায়ী হলে সেখানে শ্রমিকের হঠাৎ বেকার হওয়া কিংবা আর্থিক অনটনে পড়ার আশঙ্কা কম থাকে। ফলে সেক্ষেত্রে শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি বেশি হয়। কিন্তু অনিয়মিত ও অস্থায়ী চাকরিতে শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি কম হয়।
- কাজের সময়সীমা: প্রকৃত মজুরি কাজের সময়সীমার উপরও নির্ভরশীল। আর্থিক মজুরি অপরিবর্তিত থেকে শ্রমিকের কাজের সময় যদি পূর্বাপেক্ষা বেশি হয় তাহলে তার প্রকৃত মজুরি কমে যাবে।
- অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ: যেসব কাজে অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ থাকে সেখানে আর্থিক মজুরি না বাড়লেও প্রকৃত মজুরি বেশি হয়। যেমন- ডাক্তার ও ও শিক্ষক তাঁদের নির্ধারিত কাজের বাইরে অতিরিক্ত আয় করতে পারেন। ফলে তাঁদের প্রকৃত মজুরি বেশি।
- পেশাগত খরচঃ যেসব কাজে পেশাগত খরচ কম বা নেই সেখানে প্রকৃত মজুরি বেশি হয়। অন্যদিকে, যেসব কাজে পেশাগত খরচ থাকে সেখানে প্রকৃত মজুরি অপেক্ষাকৃত কম। যেমন- ডাক্তারকে কম্পাউন্ডার ও অন্যান্য সরঞ্জামের জন্য বেশি খরচ করতে হয়। এতে তার প্রকৃত মজুরি কমে যায়।
- শিক্ষাগত ব্যয়ঃ পেশা শিক্ষার খরচের উপরও প্রকৃত মজুরি কমবেশি নির্ভরশীল। কিছু পেশা যেমন- ডাক্তারি, কারিগরি প্রভৃতির বিদ্যা অর্জনে খরচ বেশি হয় বলে এসব ক্ষেত্রে প্রকৃত মজুরি কিছুটা কম হয়। পক্ষান্তরে, পেশা শিক্ষার ব্যয় কম হলে সেখানে প্রকৃত মজুরি বেশি হয়।
- কর্মস্থলে পরিবেশঃ চাকরিস্থল বা কারখানার পরিবেশ উন্নত, স্বাস্থ্যসম্মত ও স্বস্তিকর হলে শ্রমিকরা স্বাচ্ছন্দ্য ও দক্ষতার সাথে। কাজ করতে পারে। ফলে তাদের মানসিক সন্তুষ্টি থাকে বলে প্রকৃত মজুরি বেশি হয়।
- সামাজিক নিরাপত্তা: যেসব পেশায় শ্রমিকদের জন্য অসুস্থতা, চাকরি থেকে সাময়িক ছাটাই ও পঙ্গু হওয়ার কারণে আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা থাকে, সেসব ক্ষেত্রে আর্থিক মজুরি কম হলেও প্রকৃত মজুরি বেশি হয়।
- পরোক্ষ কর: পরোক্ষ করের প্রভাবে মজুরির তারতম্য ঘটে। দ্রব্যসামগ্রীর উপর বেশি হারে পরোক্ষ করা আরোপ করা হলে শ্রমিকের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে তার প্রকৃত মজুরি কমে যায়।
- সামাজিক মর্যাদা ও যেসব পেশায় শ্রমিক বা কর্মচারীর সামাজিক মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকে সেখানে আর্থিক মজুরি কম হলেও প্রকৃত মজুরি বেশি হয়। পক্ষান্তরে, যেসব কাজে সামাজিক মর্যাদা অত্যন্ত কম সেখানে আর্থিক মজুরি বেশি হলেও প্রকৃত মজুরি কম হয়।
- অন্যান্য সুযোগ সুবিধা: আর্থিক মজুরির সঙ্গে কর্মস্থল থেকে নানারকম সুযোগ সুবিধা যেমন- বিনামূল্যে পোশাক, চিকিৎসা, বাসস্থান, রেশন, বেতনসহ ছুটি, পরিবহন ও শিক্ষার সুবিধা ইত্যাদি পাওয়া গেলে সেখানে শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি বেশি হয়।
সুতরাং সার্বিক বিবেচনায় দেখা যায়, দ্রব্য ও সেবার ভোগের পরিমাণ ছাড়াও শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি অন্যান্য আরও যেসব বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হয় তা হলো শ্রমিকের কাজ সংক্রান্ত মানসিক শান্তি, স্বস্তি, মর্যাদা, নিরাপত্তা ইত্যাদি। প্রকৃত মজুরি বাড়লে শ্রমিকের মান উন্নত হয়।
আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। প্রকৃত মজুরি কী কী বিষয়ের উপর নির্ভর করে? এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url