মূলধন গঠন বলতে কী বুঝায়? মূলধন গঠন কোনো কোনো বিষয়ের উপর নির্ভরশীল?

মূলধন গঠন বলতে কী বুঝায়? মূলধন গঠন কোনো কোনো বিষয়ের উপর নির্ভরশীল? অথবা, মূলধন গঠন কী? মূলধন গঠন কোনো কোনো বিষয়ের উপর নির্ভর করে?

মূলধন গঠন বলতে কী বুঝায়? মূলধন গঠন কোনো কোনো বিষয়ের উপর নির্ভরশীল?

মূলধন গঠন: অর্থনীতিতে 'মূলধন গঠন' বলতে মূলধন বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে বুঝায়। কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ে যে পরিমাণ বৃদ্ধি সাধিত হয়, তাকে মূলধন গঠন বলে। মূলধন গঠন সঞ্চয়ের উপর নির্ভরশীল। এজন্য সঞ্চয় বৃদ্ধি পেলে মূলধন গঠনের হারও বৃদ্ধি পায়।

বেনহাম বলেছেন, "কোনো নির্দিষ্ট সময়ে একটি জাতি যে পরিমাণ মূলধন বৃদ্ধি করে, তাকে ঐ সময়ের মূলধন গঠন বলে।" মূলধন গঠন যেসব বিষয়ের উপর নির্ভরশীল: মূলধন গঠন মূলত সঞ্চয়ের উপর নির্ভর করে। আবার সঞ্চয় কতকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে। এগুলোই মূলধন গঠনের নির্ভরশীল উপাদান। নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলো:

১। সঞ্চয়ের সামর্থ্য: সঞ্চয়ের সামর্থ্য মানুষের আয়ের উপর নির্ভর করে। জীবনধারণের ব্যয় ও সামর্থ্য নিরূপণ করে। আয় যদি ব্যয়ের চেয়ে বেশি হয়, তখন সঞ্চয়ের সামর্থ্য লাভ করা যায়। ব্যয়ের পরিমাণ ঠিক থেকে আয় যত বাড়ে সঞ্চয়ের পরিমাণও তত বাড়ে এবং মূলধন গঠন তত বৃদ্ধি পায়।

২। সঞ্চয়ের ইচ্ছা : শুধু সামর্থ্য নয়, সঞ্চয়ের ইচ্ছার উপর মূলধন গঠন নির্ভর করে। সঞ্চয় বৃদ্ধি তথা মূলধন সঞ্চয়ের ইচ্ছা। নিম্নলিখিত বিষয়ের উপর সঞ্চয়ের ইচ্ছা নির্ভর করে।

  • (ক) দূরদৃষ্টি: ভবিষ্যতে কোনো বিপদ-আপদের জন্য, রোগ, বৃদ্ধ বয়সে ভরণপোষণের জন্য আয়ের কিছু অংশ সঞ্চয় করতে হয়। (খ) পারিবারিক স্নেহমমতা: পারিবারিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, শিক্ষা, বিবাহ, সুন্দর জীবনযাপনের জন্য সন্তানসন্ততির ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করা হয়।
  • (গ) ধনলিল্লাঃ ধনলিপ্সা মানুষকে সঞ্চয় করতে আগ্রহী করে। ধনলিন্সা ব্যক্তি ভোগ হ্রাস করে অধিক সঞ্চয়ে মনযোগী হয়।
  • (ঘ) উচ্চাকাঙ্ক্ষাঃ জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করা, জীবনযাত্রার মান উন্নত করা, সামাজিক মর্যাদা লাভ প্রভৃতি কারণে মানুষ উচ্চাভিলাষী হয়। ফলে সঞ্চয়ী মনোভাব গড়ে তোলে।
  • (ঙ) নিরাপত্তাঃ দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত থাকলে, শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকলে, জানমালের নিরাপত্তা সঞ্চয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। (চ) সুদের হয়ঃ সুদের হার বেশি হলে মানুষের সঞ্চয়ের আগ্রহ বাড়ে। সুদের টাকা খাটানো আয়ের একটি উৎস হিসেবেও কাজ করে।
  • (ছ) করনীতিঃ করনীতি সঞ্চয়কে প্রভাবিত করে। সঞ্চয়ের উপর কর বেশি হলে সঞ্চয় প্রবণতা কমে যায়।
  • (জ) শিক্ষার হার: অশিক্ষিত লোকের তুলনায় শিক্ষিত লোকের মধ্যে সঞ্চয়ের ইচ্ছা বেশি। শিক্ষিত ব্যক্তি সঞ্চয়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করে বেশি সঞ্চয় করে।
  • (ঝ) সামাজিক মর্যাদাঃ সমাজে লক্ষ করা যায়, যে যত সম্পদশালী তার মর্যাদা তত বেশি। সামাজিক মর্যাদা, যশ, খ্যাতি লাভের জন্য মানুষ সঞ্চয় করে।
  • (ঞ) ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি: কোনো কোনো ধর্মীয় অনুশাসন সঞ্চয় প্রবণতাকে প্রভাবিত করে। সুদ গ্রহণ নিষিদ্ধ হওয়ায় সঞ্চয়ের পরিমাণ কমতে পারে।

৩। বিনিয়োগ সুযোগ সুবিধা: দেশের মূলধনের নিরাপদ ও লাভজনক বিনিয়োগের সুযোগ সুবিধা যত বেশি হবে সঞ্চয়ের পরিমাণও তত বাড়বে। দেশে শিক্ষা, কলকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ যত বাড়বে বিনিয়োগের আশায় সঞ্চয়ের প্রবণতাও তত বাড়বে।

৪। সঞ্চয়ী প্রতিষ্ঠানের সুযোগ-সুবিধা: দেশে ব্যাংক, বিমা লগ্নি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা যত বৃদ্ধি পাবে, যত বেশি বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে, যত বেশি নিকটবর্তী হবে, সঞ্চয়ের আগ্রহ তত বেশি হবে।

পরিশেষে বলা যায়, উপরিউক্ত বিষয়গুলোর উপর সঞ্চয় নির্ভর করে। সঞ্চয় বাড়লে বিনিয়োগ বাড়ে এবং বিনিয়োগ বাড়লে মূলধন বাড়ে।

0/Post a Comment/Comments