মুদ্রা কী? মুদ্রার কার্যাবলি আলোচনা কর
আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে মুদ্রা কী? মুদ্রার কার্যাবলি আলোচনা কর নিয়ে আলোচনা করব।
মুদ্রা কী? মুদ্রার কার্যাবলি আলোচনা কর। অথবা, অর্থের সংজ্ঞা দাও। অর্থের কার্যাবলি আলোচনা কর। অথবা, অর্থ কাকে বলে? অর্থের কার্যাবলি বর্ণনা কর।
মুদ্রা/অর্থঃ বিনিময়ের মাধ্যমে যে বস্তু সাধারণভাবে সকলের নিকট বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণযোগ্য, তাকে মুদ্রা বা অর্থ বলা হয়। পৃথিবীতে মুদ্রার প্রচলন কৃখন কীভাবে হয় এ বিষয়ে সঠিক তথ্য প্রদান করা কঠিন। তবে বিনিময় প্রথা প্রচলন হওয়ার শুরুতেই মানুষ কড়ি, হাতির দাঁত ইত্যাদির মাধ্যমে বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রীর আদান-প্রদান করতো।
এরপর সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে এবং ধীরে ধীরে বিনিময় প্রথার মাধ্যম হিসেবে মুদ্রা ব্যবস্থার প্রচলন ঘটে। বর্তমান সমাজে যাবতীয় অর্থনৈতিক কার্যাবলি মুদ্রার মাধ্যমে সম্পাদিত হচ্ছে। সুতরাং বলা যায়, যে বস্তু বিনিময়ের মাধ্যমে ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধের উপায়, মূল্যের পরিমাপক ও সঞ্চয়ের বাহন হিসেবে সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত ও সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য তাকেই মুদ্রা বলা হয়।
বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে মুদ্রার সংজ্ঞা প্রদান করেছেন যা নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ
- অর্থনীতিবিদ সেয়ার্স-এর মতে, যে বস্তু দেনা-পাওনা মেটানোর কাজে ব্যাপকভাবে গৃহীত হয় তা-ই মুদ্রা।
- অধ্যাপক ডি. এইচ. রবার্টসন-এর মতে, জিনিসপত্রের দাম বা গ্রহণযোগ্য তাকে মুদ্রা বলে।
- ক্রাউথার-এর মতে, যা বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে জনসাধারণের নিকট গ্রহণযোগ্য এবং মূল্যের পরিমাপক ও ব্যবসায়ের বাহন হিসেবে কাজ করে তাকেই মুদ্রা বলা হয়।
অর্থ/মুদ্রার কার্যাবলি: বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ অর্থের বিভিন্ন কার্যাবলির কথা উল্লেখ করেছেন। মুদ্রার ইতিহাস আলোচনা করলে দেখা যায় যে, বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন প্রকার দ্রব্য মুদ্রা বা অর্থ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। আধুনিক যুগে মুদ্রা নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করে। মুদ্রার এসব কার্যাবলিকে সাধারণভাবে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়; যথা ৪
(ক) বাণিজ্যিক কার্যাবলি, (খ) সামাজিক কার্যাবলি এবং (গ) মনস্তাত্ত্বিক কার্যাবলি। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো: (ক) বাণিজ্যিক কার্যাবলি: অর্থের মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোই বাণিজ্যিক কার্যাবলি। এগুলো নিম্নরূপঃ
- বিনিময়ের মাধ্যমঃ মুদ্রা বা অর্থের প্রাথমিক ও প্রধান কাজ হলো বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে লেনদেন সম্পন্ন করা। বিনিময়ের সর্বজনগ্রাহ্য মাধ্যম হওয়ায় অর্থ দ্বারা যে-কোনো সময়ে যে-কোনো পরিমাণ পণ্য ও সেবা ক্রয়-বিক্রয় করা যায়। ফলে দ্রব্য ও সেবার লেনদেন সহজ ও গতিশীল হয়।
- হিসাবের একক বা মূল্যের পরিমাপ: অর্থনৈতিক লেনদেনের যাবতীয় হিসাব অর্থের অঙ্কে প্রকাশিত হয়ে থাকে। অর্থ দ্বারা যে- কোনো দ্রব্য, সেবা বা সম্পদের মূল্য পরিমাপ করা যায়। মূল্য পরিমাপের এ ধরনের সাধারণ পরিমাপকের সাহায্যে অর্থনৈতিক হিসাব রাখতে এবং দ্রব্য ও সেবার আদান-প্রদান করতে সুবিধা হয়।
- স্থগিত লেনদেনের মানঃ অর্থ স্থগিত লেনদেন বা ঋণ পরিশোধের উপায় হিসেবে কাজ করে। অর্থ ব্যবহারের ফলে দ্রব্যের মাধ্যমে ঋণ প্রদান ও পরিশোধের প্রয়োজন পড়ে না। ঋণদাতা অর্থের অঙ্কে ঋণ দেয় এবং ঋণগ্রহীতা অর্থের অঙ্কে তা পরিশোধ করে। ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নির্বিঘ্নে চলতে থাকে।
- সঞ্চয়ের বাহনঃ অর্থ দ্বারা সবকিছু বিক্রয় করা যায় বলে বিক্রিত দ্রব্যসামগ্রী বা সেবার মূল্য অর্থের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা সম্ভব। তাই দ্রব্য সঞ্চয়ের পরিবর্তে তার মূল্য হিসেবে অর্থ সঞ্চয় করা বেশ সুবিধাজনক। অর্থের মাধ্যমে সঞ্চয় করার ফলে অর্থের ক্রয়ক্ষমতাকে বর্তমান থেকে ভবিষ্যতে ব্যবহার করা যায়। সঞ্চয়ের বাহন হিসেবে কাজ করে অর্থ পুঁজি গঠনেও সহায়তা করে।
- মূল্য স্থানান্তর: অনেক দ্রব্যসামগ্রী এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সহজে ও নিরাপদে স্থানান্তর করা যায় না। কিন্তু অর্থের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রী বিক্রয় করে তার মূল্য সহজে দূরে স্থানান্তর করা যায়। এভাবে মূল্য স্থানান্তরের মাধ্যমে অর্থ সম্পদ ব্যবহারও আর্থিক লেনদেনে সাহায্য করে।
- ঋণের ভিত্তি: বর্তমান কালে ব্যবসায়িক লেনদেনের অধিকাংশ বিভিন্ন ধরনের ঋণপত্র, যেমন- চেক, ব্যাংক ড্রাফ্ট, বিনিময় বিল প্রভৃতির সাহায্যে সম্পন্ন হয়। ব্যাংকে রক্ষিত নগদ অর্থের আমানতের ভিত্তিতেই এসব ঋণপত্রের প্রচলন হয়। অর্থ তাই ঋণপত্রের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
- তারল্যের মানঃ অর্থের সাহায্যে যে-কোনো সময়ে ক্রয়-বিক্রয় করা যায়। অর্থাৎ সবচেয়ে তরল সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়। অর্থের এ তারল্য গুণের জন্য দ্রব্যসামগ্রীকে যেমন রূপান্তর করা যায় তেমনি অর্থকেও দ্রব্যসামগ্রীতে রূপান্তর করা যায়।
- তৃপ্তি বৃদ্ধির উপায়ঃ ভোক্তার প্রধান লক্ষ্য হলো সীমিত আয়ের মধ্যে থেকে দ্রব্যসামগ্রী ক্রয়ের মাধ্যমে সর্বোচ্চ তৃপ্তি লাভ করা। এ উদ্দেশ্যে ভোক্তা এমনভাবে অর্থ ব্যয় করে যাতে দ্রব্যের দাম তার প্রান্তিক উপযোগের সমান হয়। তা ছাড়া ভোক্তা অর্থের মাধ্যমে নিজের ইচ্ছা ও প্রয়োজনমাফিক দ্রব্যাদি ক্রয় করতে পারে। এভাবে অর্থের ব্যবহারের ফলে ভোক্তার তৃপ্তি সর্বাধিক হওয়ার সুযোগ থাকে।
- জাতীয় আয়ের বণ্টন: দেশের মোট জাতীয় উৎপাদন, স্বাভাবিক প্রবাহের কারণে উৎপাদনে অংশগ্রহণকারী উপকরণগুলোর মধ্যে বণ্টিত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে জাতীয় উৎপাদনের আর্থিক মূল্যই অর্থরূপে বণ্টিত হয়, উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রীও সেবা নয়। সুতরাং বণ্টন ব্যবস্থা সহজীকরণের ক্ষেত্রে অর্থ মৌলিক ভূমিকা পালন করে।
(গ) সামাজিক কার্যাবলি: বাণিজ্যিক কার্যাবলির পাশাপাশি অর্থ সমাজবদ্ধ মানুষের কিছু সামাজিক কাজেও সাহায্য করে। এগুলো অর্থের সামাজিক কাজ। অর্থের সামাজিক কার্যাবলিও আধুনিক কালে গুরুত্বের সাথে স্বীকার করা হয়। এগুলো নিম্নরূপঃ
১। সামাজিক মর্যাদা ও নিশ্চয়তার প্রতীক: সমাজের মানুষের মর্যাদা ও নিরাপত্তা অর্থক্ষমতার প্রেক্ষিতেই নির্ণীত হয়। অর্থাৎ দ্রব্যসামগ্রী ও সম্পদের আর্থিক মূল্যমানই মানুষের সামাজিক মর্যাদা ও নিরাপত্তার উপাদান হিসেবে কাজ করে।
২। সামাজিক সম্পর্ক রক্ষা: সামাজিক অনুষ্ঠান ও উৎসবের ক্ষেত্রে উপহার বা উপঢৌকন প্রদানে অর্থ ব্যবহৃত হয়। কেবল অর্থ প্রদান করেই অনেক সামাজিক দায়দায়িত্ব পালন করা যায়। অর্থের এরূপ কাজের দ্বারা সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয় এবং সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিকাশ ঘটে।
(গ) মনস্তাত্ত্বিক কার্যাবলি: অর্থ তার বিভিন্নমুখী ব্যবহার ও উপযোগ দ্বারা ব্যক্তিজীবনে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব সৃষ্টি করে। নগদ অর্থের সভায় মানুষকে অনেক সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে এবং তাকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখে।
এর ফলে সমাজে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বোধ বাড়ে এবং বস্তুগত প্রগতি ত্বরান্বিত হয়। উপরিউক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, মুদ্রার কার্যাবলির মাধ্যমে মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক কাজগুলো গুরুত্বপূর্ণভাবে ও সুষ্ঠুভাবে সমাধান হয়।
আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। মুদ্রা কী? মুদ্রার কার্যাবলি আলোচনা কর এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url