পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে মানবাধিকার এবং জেন্ডার স্টাডিজের সম্পর্ক
আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে মানবাধিকার এবং জেন্ডার স্টাডিজের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করব।
পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে মানবাধিকার এবং জেন্ডার স্টাডিজের সম্পর্ক (Relationship of Civics and Good Governance with Human Rights and Gender Studies) আধুনিককালে মানবাধিকার ও জেন্ডার স্টাডিজ স্বতন্ত্র বিষয় যিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এটি মানবাধিকার, আইন, ন্যায়বিচার, লিকাভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।
মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কর্মরত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কর্মপন্থা ও পরিকল্পনা নিয়ে মানবাধিকার কাজ করে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ১৯৪৮ সালের ১০ই ডিসেম্বর মৌলিক মানবাধিকারসমূহ ঘোষিত ও গৃহীত হয়। মানবাধিকার আইন, ন্যায়বিচার, অন্যায় প্রতিরোধ প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করে। রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার জীবনে মানুষ যেসব অধিকার, সুযোগ ও সুবিধার দাবিদার হয় এবং যা ছাড়া তার ব্যক্তিত্ব বিকশিত হতে পারে না তাই মানবাধিকার।
অন্যদিকে, প্রত্যেক মানুষই জন্মসূত্রে স্বাধীন এবং সমান অধিকার প্রাপ্তির দাবিদার। মানুষের যেমন জীবন ধারণের অধিকার রয়েছে, তেমনি রয়েছে মুক্ত জীবন ও ব্যক্তিগত সুরক্ষার অধিকার। বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই মৌলিক মানবাধিকারগুলো স্বীকৃত এবং অনেকটা সংবিধানভুক্ত। কিন্তু সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়া সত্ত্বেও নারী সমাজ বরাবরই এ অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে।
১৯৭০-এর দশক থেকে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান ব্যাপক বৈষম্যের অবসানের জন্য নারী সমাজ সোচ্চার হয়েছে, যার ফলে ১৯৭৯ সালে অর্জিত হয়েছে জাতিসংঘে নারীর মানবাধিকার সনদ বা Convention on the Elimination of all forms of Discrimination Against Women (CEDAWY। তারপর ১৯৯৩ সালের জুন মাসে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনাতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব সম্মেলনে আরেকটি ঘোষণা আসে।
সেটি হলো, 'নারীর অধিকার মানবাধিকার ও তা সার্বিক মানবাধিকারের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।' অন্যদিকে, জেন্ডার স্টাডিজ নারীর অধিকার, নারী-পুরুষ সমতা, নারীর আর্থ-সামাজিক অবস্থান, নারীর প্রতি বিদ্যমান। বৈষম্য ও নির্যাতন এবং নারী উন্নয়নে কাজ করছে। মানবাধিকারের মূললক্ষ্য হলো মানুষের মধ্যে আর্থ-সামাজিক ও মর্যাদাগত পার্থক্যভেদে বৈষম্য সৃষ্টি না করে সকল মানুষকে সমানভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে যে বাধা আছে। সেগুলো দূর করা। অন্যদিকে, জেন্ডার স্টাডিজের মূললক্ষ্য হচ্ছে সমাজে বিদ্যমান নারী-পুরুষ বৈষ্যমের কারণে পিছিয়ে পড়া নারীদেরকে উন্নয়নের ধারায় সম্পৃক্ত করা এবং সকল কর্মকাণ্ডে পুরুষের পাশাপাশি নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ। নিশ্চিত করা।
ক. নারী-পুরুষ সবাই রাষ্ট্রের নাগরিক। পৌরনীতি ও সুশাসনের অন্যতম আলোচ্য বিষয় হলো নাগরিকের কর্তব্য পালন ও অধিকার নিশ্চিত করা। নারী-পুরুষ সকলের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে মানবাধিকার এবং বিশেষভাবে নারী উন্নয়নের জন্য কাজ করছে জেন্ডার স্টাডিজ। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় পৌরনীতি ও সুশাসন, মানবাধিকার ও জেন্ডার স্টাডিজের মধ্যে নির্ভরশীলতার সম্পর্ক বিদ্যমান।
খ. মানবাধিকার ও জেন্ডার স্টাডিজের কল্যাণে একটি রাষ্ট্রে যথোপযুক্ত আইন পাস করা হলেও তা থেকে নারী-পুরুষ। বিশেষত নারী বঞ্চিত হতে পারে। নারীরা যদি তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন না হয় তাহলে সেই আইন থেকে তারা কোনো সুফল পাবে না। নারী-পুরুষ বিশেষত নারীর এই অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য পৌরনীতি ও সুশাসন সম্পর্কিত জ্ঞান প্রয়োজন।
গ. নারী-পুরুষের সমান অধিকারের স্বীকৃতি হলো মানবাধিকার। বর্তমানে পৌরনীতি ও সুশাসনের আলোচনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হলো মানবাধিকার। মানবাধিকারকে পদদলিত করে কোনো রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
ঘ. পৌরনীতি ও সুশাসন এবং মানবাধিকার ও জেন্ডার স্টাডিজ একে অপরের সহায়ক ও পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। পৌরনীতি ও সুশাসন মানবাধিকার, আইনের শাসন, সুশাসন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে মানবাধিকার ও জেন্ডার স্টাডিজকে সহায়তা করে। তেমনি জেন্ডার স্টাডিজ জেন্ডার বৈষম্য, মানবাধিকারের সমস্যা, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে পৌরনীতিকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে।
পৌরনীতি ও সুশাসন পরিচিতি ৩৫ অধ্যয়নের পরিধি ও বিষয়বস্তু দেখে আপাতদৃষ্টিতে পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে মানবাধিকার ও জেন্ডার স্টাডিজের সাদৃশ্য থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান। যেমন: নাগরিকভার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ, নাগরিকতার স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিক, স্বাধীনতা, সংবিধান, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক তত্ত্ব প্রভৃতি পৌরনীতি ও সুশাসনের আলোচ্য বিষয় হলেও মানবাধিকার ও জেন্ডার স্টাডিজের আলোচ্য বিষয় নয়।
পৌরনীতি ও সুশাসন রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিক আলোচনা ও পর্যালোচনা করে থাকে। কিন্তু মানবাধিকার ও জেন্ডার স্টাডিজ কেবলমাত্র মানবাধিকার ও জেন্ডার ইস্যু আলোচনা করে। এ দিক থেকে মানবাধিকার ও জেন্ডার স্টাডিজের তুলনায় পৌরনীতি ও সুশাসনের পরিধি অনেক বেশি সম্প্রসারিত।
পৌরনীতি ও সুশাসন নারী-পুরুষের মধ্যে সেরকম কোনো পার্থক্য না করে সবাইকে নাগরিক হিসেবে গণ্য করে। পৌরনীতির বিষয়বস্তুতে নাগরিকের নানা প্রসঙ্গ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। কিন্তু মানবাধিকার ও জেন্ডার স্টাডিজ নারীর মানবাধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন, জেন্ডার বৈষম্য, জেন্ডার সমতা প্রভৃতি বিষয়গুলোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়।
উপরের আলোচনা থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে মানবাধিকার ও জেন্ডার স্টাডিজের সম্পর্ক খুবই নিবিড়। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে মানবাধিকারের ঘোষণার বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে এবং কৃত্রিমভাবে সমাজসৃষ্ট নারী-পুরুষের বিভাজন ও বৈষম্য দূর করতে হবে।
আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে মানবাধিকার এবং জেন্ডার স্টাডিজের সম্পর্ক এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url