খাদ্যে ভেজাল বলতে কি বুঝ | খাদ্যে ভেজালের সাম্প্রতিক চিত্র
আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে খাদ্যে ভেজাল বলতে কি বুঝ | খাদ্যে ভেজালের সাম্প্রতিক চিত্র নিয়ে আলোচনা করব।
খাদ্যে ভেজালের সাম্প্রতিক চিত্র (Recent Picture of Food Adulteration) বেঁচে থাকার জন্য আমাদেরকে কোনো না কোনো খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। বেঁচে থাকার জন্য এবং শারীরিক বিকাশের জন্য খাদ্য অপরিহার্য। কিন্তু ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে বিশ্বের কিছু দেশে বিশেষ করে বাংলাদেশে খাদ্যে ভেজালের ভয়াবহ চিত্র প্রকাশিত হচ্ছে।
মানুষ নামের কলঙ্ক কিছু অসাধু ব্যক্তি খাদ্যে ভেজালের সাথে যুক্ত। এমন কোনো খাদ্যসামগ্রী নেই যাতে তারা ভেজাল মেশাচ্ছে না। কোমল পানীয় তৈরিতে তরল গ্লুকোজ বা চিনির সিরাপের পরিবর্তে প্রায়শই ব্যবহৃত কার্বোক্সি মিথাইল সেলুলোজ মেশানো হচ্ছে। চাল-ডাল-আটা-ময়দা আমাদের প্রধান খাদ্য। ভালো চালের সাথে নিম্নমানের চাল মেশাচ্ছে।
ওজন বৃদ্ধির জন্য চালে পাথর ও বালি মেশাচ্ছে। চালের রং উজ্জ্বল করার জন্য ইউরিয়া ও অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মেশাচ্ছে বা তা দিয়ে শোধন করছে। বাজারের বেশির ভাগ ডালই ভেজাল ও খাওয়ার অনুপযোগী। ডালেও মেশানো হয় ক্ষতিকর রং এবং মাইটক্সিন নামে বিষাক্ত কেমিক্যাল।
আটা-ময়দাতেও মেশানো হচ্ছে ভেজাল, বিশেষ করে কাঠের গুড়ো। পাউরুটি, বিস্কুট এবং নুডুলস তৈরিতে ব্যবহৃত আটা-ময়দায় ভেজালের হার আরও বেশি। বিস্কুট, সেমাই, নুডুলস, জুস ও মিষ্টিতে মেশানো হয় টেক্সটাইল ও লেদারের রং। এগুলো বিষাক্ত। জিলাপী, চানাচুর, চিপস মচমচে করার জন্য মবিল মেশানো হচ্ছে।
বাজারে এখন যেসব মিনারেল ওয়াটার পাওয়া যায় তার ৯৫ ভাগই পানের অযোগ্য। বাজারে যে হরেক রকম ব্রান্ডের ফলের জুস পাওয়া যায় সেগুলোর প্রায় ৯৫ ভাগের মধ্যেই কোনো ফলের রস নেই বলে পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া এসব জুস, জ্যাম, জেলিতে যে কৃত্রিম নিষিদ্ধ দ্রব্য এবং বিষাক্ত রং মেশানো হয় তা কিডনি, লিভার ও পেটের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
আমরা 'ভাতে-মাছে বাঙালি'। অথচ যেভাবে মাছ টাটকা রাখার জন্য 'ফরমালিন' নামক বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হচ্ছে তা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। শুঁটকি মাছে পোকা যেন না ধরে সেজন্য ব্যবসায়ীরা কীটনাশক ও ডিডিটি ব্যবহার করছে।
বাংলাদেশে প্রচুর শাক সবজি ও ফলমূল পাওয়া যায়। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এগুলো টাটকা ও সতেজ রাখার জন্য ফরমালিন ও কার্বো-হাইড্রেড এবং ফলমূলগুলো পাকানোর জন্য ক্যালসিয়াম কার্বাইড, মার্শাল, ইথোপেন, ইখারিল, ডাই এলক্সির বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করে থাকে।
এগুলো আমাদের কিডনি ও লিভারের ক্ষতি করছে, হৃদ রোগ ও ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলছে এবং অনেকেই অকালে চোখের দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলছেন। আমাদের দেশের একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী খাবারের তেল, ঘি, ডালডা, বাটারওয়েল প্রভৃতিতে ভেজাল মেশাচ্ছেন।
ঘিয়ের সাথে পামঅয়েল ও চর্বি, সরিষার তেলের সাথে পামঅয়েল বা সয়াবিন, নারকেল তেলের সাথে সয়াবিন বা বাদাম তেল মেশাচ্ছে। দুধের মাখন তুলে নিয়ে বিক্রী করছে, দুধে পানি মেশাচ্ছে, মুড়িতে ইউরিয়া সার মেশাচ্ছে।
এমনকি গুরো দুধের মত শিশু খাদ্যেও বিষাক্ত মেলামাইন পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো মুখে দিলেই বা এর ঘ্রাণ নিলেই বোঝা যায় এগুলোর প্রায় ৭০/৮০ ভাগই ভেজাল, খাওয়ার অনুপযোগী এবং স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। অনেকে মাছ, দুধ, মিষ্টি, ফল ইত্যাদিতে ফরমালিন মিশিয়ে এগুলোর পচন রোধ করার চেষ্টা চালায়।
এমনকি অসাধু ব্যবসায়ীরা গুঁড়া মশলার সাথেও ইটের গুঁড়া এবং অনেক ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মেশাচ্ছেন, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বাজারে 'আয়োডিনযুক্ত লবণ' বলে যা বিক্রি হচ্ছে তার প্রায় ৯০ ভাগেই আয়োডিন বলে কিছুই নেই। আয়োডিনের অভাবে তাই আমাদের দেশে গলগণ্ড রোগ বেড়ে চলছে। মানসিক প্রতিবন্ধীর সংখ্যা বাড়ছে।
এছাড়াও আমাদের দেশে হোটেল রেস্তোরাঁগুলোর ভিতরের বিশেষ করে যেখানে খাবার তৈরি হয় সেখানকার চিত্র খুবই নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। এসব হোটেল রেস্তোরাঁয় পচা, বাসি খাবার পরিবেশন করা হয়। খাবারে বিষাক্ত রং, রস ও কেমিক্যাল মেশানো হয়।
প্রায়ই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হতে দেখা যায় যে, ভ্রাম্যমাণ পরিদর্শক টিম হোটেলগুলোতে মরা মুরগি, পচা মাছ-মাংস ব্যবহার করতে দেখেছেন, শাস্তি দিয়েছেন। এমনকি এদেশে হোটেল-রেস্তোরাঁয় কুকুরের মাংস পরিবেশনের সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে একাধিকবার।
আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। খাদ্যে ভেজাল বলতে কি বুঝ | খাদ্যে ভেজালের সাম্প্রতিক চিত্র এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url