জাতীয় আয় বণ্টনের প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা তত্ত্বটির ত্রুটিবিচ্যুতিগুলো লেখ
আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে জাতীয় আয় বণ্টনের প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা তত্ত্বটির ত্রুটিবিচ্যুতিগুলো লেখ নিয়ে আলোচনা করব।
জাতীয় আয় বণ্টনের প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা তত্ত্বটির ত্রুটিবিচ্যুতিগুলো লেখ। অথবা, জাতীয় আয় বণ্টনের প্রান্তিক উৎপাদন ক্ষমতা তত্ত্বটির সমালোচনা লেখ। আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে বণ্টনের প্রান্তিক উৎপাদন ক্ষমতা তত্ত্বটি সমালোচনা করেছেন। এ তত্ত্বের ত্রুটিগুলো নিচে আলোচনা করা হলোঃ
১। অবাস্তব ধারণাঃ বণ্টনের প্রান্তিক উৎপাদন ক্ষমতা তত্ত্বটি কতকগুলো কাল্পনিক ও অবাস্তব ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত। এ তত্ত্বে ধরে নেয়া হয়েছে যে, উপাদান ও পণ্যের বাজারে পূর্ণ প্রতিযোগিতা ও পূর্ণনিয়োগ অবস্থা বর্তমান থাকলে উপাদানের দাম তার প্রান্তিক উৎপাদনের সমান হবে। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে কোথাও পূর্ণ প্রতিযোগিতা ও পূর্ণনিয়োগ অবস্থা বিরাজ করে না।
২। যুক্ত প্রচেষ্টা: অধ্যাপক টাউশিগ-এর মতে, "প্রত্যেক দ্রব্যের উৎপাদন বিভিন্ন উপাদানের যুক্ত প্রচেষ্টার ফল। কোনো উপাদান এককভাবে কোনো দ্রব্য উৎপাদন করতে পারে না। তাই কোনো উৎপন্ন দ্রব্য হতে প্রত্যেকটি উপাদানের পৃথক পৃথক অংশ বের করা খুবই কঠিন।
৩। স্থির অনুপাতঃ কোনো কোনো উৎপাদন ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপাদান একই হারে নিয়োগ করতে হয়। যেমন- একটি মোটর গাড়ির জন্য একজন চালক দরকার। এক্ষেত্রে মোটর চালকের সংখ্যা পৃথকভাবে বাড়ানো বা কমানো যায় না। ফলে মোটর চালকের প্রান্তিক উৎপাদন ক্ষমতা নির্ধারণ করা সম্ভব হয় না।
৪। যোগানের দিকে উপেক্ষিত: প্রান্তিক উৎপাদন তত্ত্বে কেবল উপাদানগুলোর চাহিদার বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু এ তত্ত্বে যোগানের দিক উপেক্ষা করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে যে-কোনো উপাদানের দাম তার চাহিদা ও যোগানের যুক্ত প্রভাব দ্বারা নির্ধারিত হয়। কিন্তু প্রান্তিক উৎপাদন তত্ত্বে কেবল চাহিদার প্রভাব দ্বারাই উপাদানের দাম নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। তাই এ তত্ত্বটিকে অপূর্ণ তত্ত্ব বলে অভিহিত করা হয়।
৫। উৎপাদনে বিশৃঙ্খলা: প্রান্তিক উৎপাদন দ্বারা কোনো উপাদানের পারিশ্রমিক যথাযথ নির্ধারণ করা যায় না। কারণ কোনো উপাদানের পরিমাণ এক একক বাড়ালে বা কমালে সমগ্র উৎপাদন ব্যবস্থা ব্যাহত হতে পারে। ফলে মোট উৎপাদন যে পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া উচিত তা অপেক্ষা কম বাড়তে পারে কিংবা যে পরিমাণে কমা উচিত তা অপেক্ষা বেশি কমতে পারে। তাই এ তত্ত্ব দ্বারা উপাদানের পারিশ্রমিক সঠিকভাবে নির্ধারণ করা যায় না।
৬। অপূর্ণ প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়: এ তত্ত্বটি পূর্ণ প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে। কিন্তু বাস্তবজীবনে উপাদান বা পণ্যের বাজারে কোনো ক্ষেত্রেই পূর্ণ প্রতিযোগিতা বিরাজ করে না, বরং সব ক্ষেত্রেই অপূর্ণ প্রতিযোগিতা বিদ্যমান। ফলে উপাদানের দাম তার প্রান্তিক উৎপাদনের সমান হয় না। বস্তুত, অপূর্ণ প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বণ্টনের প্রান্তিক উৎপাদন ক্ষমতা তত্ত্বটি প্রযোজ্য হয় না।
৭। দক্ষতার তারতম্যঃ এ তত্ত্বে ধরে নেয়া হয়েছে যে, একই উপাদানের সব এককগুলো সমদক্ষতাসম্পন্ন। কিন্তু বাস্তবে এটা ঠিক নয়। যেমন - সব শ্রমিকের উৎপাদন সমান নয়। সুতরাং সব শ্রমিকের মজুরি এক হতে পারে না।
৮। উৎপাদনের উপাদান সম্পূর্ণ গতিশীল নয়ঃ এ তত্ত্বে উৎপাদনের উপাদানসমূহকে সম্পূর্ণ গতিশীল ধরে নেয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে এদের গতিশীলতার ক্ষেত্রে অনেক বাধা রয়েছে। এজন্য উৎপাদনের উপাদানের দাম তার প্রান্তিক উৎপাদনের সমান হয় না। এভাবে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে তত্ত্বটির সমালোচনা করেছেন। কিন্তু বিভিন্ন ত্রুটি সত্ত্বেও উৎপাদনের বিভিন্ন উপাদানের পারিশ্রমিক নির্ধারণ ও জাতীয় আয় বণ্টনের ক্ষেত্রে প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা তত্ত্বটির গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। জাতীয় আয় বণ্টনের প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা তত্ত্বটির ত্রুটিবিচ্যুতিগুলো লেখ এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url