ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর
আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর নিয়ে আলোচনা করব।
ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা হলো এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, যেখানে উৎপাদনের উপকরণসমূহের উপর ব্যক্তিগত মালিকানা বজায় থাকে। আর সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা হলো এমন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে উৎপাদনের উপকরণের কোনো ব্যক্তিগত মালিকানা থাকে না।
ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্যঃ এ দুই অর্থব্যবস্থার মধ্যে যেসব মৌলিক পার্থক্য রয়েছে তা নিচে উল্লেখ করা হলো-
- ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে উৎপাদনের বেশিরভাগ উপাদানগুলোর উপর ব্যক্তিগত মালিকানা বজায় থাকে। দেশের ভূমি, কলকারখানা ও অন্যান্য সম্পদের মালিকানা ব্যক্তিবিশেষের, রাষ্ট্রের নয়। ফলে সম্পদের ব্যবহার, উৎপাদন ও বণ্টন মূলত ব্যক্তিপর্যায়ে সম্পন্ন হয়। পক্ষান্তরে, সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে উৎপাদনের অধিকাংশ উপাদানগুলোর উপর ব্যক্তিগত মালিকানা থাকে না; সেগুলোর উপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্র বা সরকারের উদ্যোগে প্রধান প্রধান ক্ষেত্রে সম্পদের ব্যবহার ও বন্টন সম্পন্ন হয়।
- ধনতন্ত্রে ব্যক্তিগত উদ্যোগের স্বাধীনতা থাকে। অর্থাৎ উৎপাদনকারী নিজের ইচ্ছামতো বিনিয়োগ, উৎপাদন তথা সকল প্রকার অর্থনৈতিক কার্যাবলি সম্পাদন করতে পারে। কিন্তু সমাজতন্ত্রে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উদ্যোগের কোন স্বাধীনতা নেই। উৎপাদন, বিনিয়োগ এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যাবলি কেবলমাত্র সরকারের দ্বারা পরিচালিত হয়।
- ধনতন্ত্রে ভোগকারীর স্বাধীনতা বজায় থাকে। সমাজে কোন কোন দ্রব্য উৎপাদিত হবে তা ভোক্তাদের দ্বারা নির্ধারিত হয় এবং উৎপাদনকারী সে অনুযায়ী দ্রব্য উৎপাদন করে মুনাফা অর্জন করে। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক দেশে ভোক্তারা অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করে না। কেননা দ্রব্যসামগ্রীর প্রকৃতি ও উৎপাদনের পরিমাণ সরকারের সিদ্ধান্ত দ্বারা স্থির হয়। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী ক্রেতা ক্রয় করতে বাধ্য থাকে।
- ধনতান্ত্রিক সমাজে উৎপাদনকারীর প্রধান উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন। যেসব দ্রব্য উৎপাদনে মুনাফার হার বেশি সেসব দ্রব্য বেশি উৎপাদিত হয়। ফলে ধনতন্ত্রে অনেক সময় কিছু দ্রব্যের অতি উৎপাদন এবং কিছু দ্রব্যের স্বল্প উৎপাদন হয়। এটা জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নাও হতে পারে। পক্ষান্তরে, সমাজতন্ত্রে উৎপাদনের উদ্দেশ্যে সামাজিক কল্যাণ ব্যক্তিগত মুনাফা নয়। এ সমাজে যেসব দ্রব্যসামগ্রী সমাজের জন্য প্রয়োজন, সেগুলো উৎপাদনে সম্পদ বিনিয়োগ করা হয়। সুতরাং এখানে অতি উৎপাদন বা স্বল্প উৎপাদনের সুযোগ কম থাকে।
- উৎপাদনের উপকরণগুলোর উপর ব্যক্তিগত মালিকানা থাকায় ধনতান্ত্রিক সমাজে শ্রেণিশোষণ বিরাজ করে। উৎপাদনকারী বা পুঁজির মালিক শ্রমিককে তার ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করে। ফলে সমাজে ধনী ও দরিদ্র এ দুই শ্রেণির মধ্যে বৈষম্য বাড়ে। পক্ষান্তরে, বিশুদ্ধ সমাজতান্ত্রিক দেশে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে উৎপাদন কার্য পরিচালিত হওয়ায় এখানে শ্রমিক শোষণের অবকাশ কম। এ সমাজে কিছু ব্যক্তি মুনাফা অর্জনের দ্বারা ধনী হয় না এবং ধনী ও দরিদ্রের বৈষম্য কমে।
- ধনতন্ত্রে নিয়ন্ত্রণহীন দাম ব্যবস্থার দ্বারা উৎপাদন চালিত হয়। চাহিদা ও যোগানের দ্বারা দ্রব্যের দাম নির্ধারিত হয়। এজন্যই বলা হয় যে, ধনতন্ত্রে উৎপাদন, বিনিময়, বণ্টন প্রভৃতি বিষয়গুলো কোনো কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা ছাড়াই আপনা-আপনি স্থির হয়। অপরপক্ষে, সমাজতন্ত্রে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক উৎপাদন, বণ্টন প্রভৃতি বিষয়ে সামাজিক কল্যাণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সুতরাং সমাজতন্ত্রে স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থার পরিবর্তে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ প্রায় সকল অর্থনৈতিক কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে।
- ধনতন্ত্রে উৎপাদন ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা থাকে। প্রত্যেক উৎপাদনকারী চেষ্টা করে নিম্ন দামে উত্তম দ্রব্য বিক্রয় করতে। অর্থনৈতিক কমক্ষেত্রে এরূপ প্রতিযোগিতার ফলে অধিকতর দক্ষ লোক টিকে থাকে এবং উৎপাদনের দক্ষতা বাড়ে। পক্ষান্তরে, সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উৎপাদন ক্ষেত্রে এরূপ প্রতিযোগিতা থাকে না। কেননা সমাজে সম্পদের সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় মুনাফাভিত্তিক উৎপাদন বন্ধ হয়। সমাজতন্ত্রে উৎপাদনের দক্ষতা ও পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য রাষ্ট্র উৎপাদনের সব রকম কলাকৌশল ও নব নব প্রযুক্তিবিদ্যা ব্যবহার করে থাকে।
- ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দারিদ্র্যের জন্য অনেক লোক উপযুক্ত শিক্ষা ও চিকিৎসার অভাবে প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারে না। পক্ষান্তরে, সমাজতন্ত্রে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা প্রভৃতি মৌলিক অভাব পূরণের ব্যবস্থা থাকায় প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের প্রতিভা বিকাশ এবং যথাযথ ক্ষেত্রে তা ব্যবহার করতে পারে।
উপসংহারঃ ধনতন্ত্রে সম্পদের অসম বণ্টন ও শ্রেণিশোষণ সত্ত্বেও জনকল্যাণমুখী নীতি গ্রহণ ও অপচয় বন্ধ করা হলে জাতীয় উন্নয়ন ঘটে। পক্ষান্তরে, সমাজতন্ত্রে সম্পদের সুষম বণ্টন ও পরিকল্পিত উৎপাদন বাধাহীন অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহায়ক। কিন্তু রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের নামে জনমানুষের উপর নিপীড়নমূলক পদক্ষেপ আরোপিত হলে জাতীয় কল্যাণ ক্ষুণ্ণ হয়।
আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url