বাংলাদেশের স্বল্প মজুরি হারের কারণগুলো কী কী?
আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে বাংলাদেশের স্বল্প মজুরি হারের কারণগুলো কী কী? নিয়ে আলোচনা করব।
বাংলাদেশের স্বল্প মজুরি হারের কারণগুলো কী কী? অথবা, বাংলাদেশে স্বল্প মাথাপিছু আয়ের কারণসমূহ সংক্ষেপে লেখ। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের শ্রমিকদের মজুরি হার অনেক কম। এটা কৃষি ও শিল্পখাতে কর্মরত সব শ্রেণির শ্রমিকের বেলায় প্রযোজ্য। তা ছাড়া এদেশের নারী শ্রমিকের মজুরির হারও বেশ কম। নিচে বাংলাদেশে স্বল্প মজুরি হারের কারণগুলো আলোচনা করা হলো:
- অর্থনীতির দরিদ্রাবস্থা: বাংলাদেশ ধীরগতিতে উন্নতি লাভ করলেও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশ, যেমন- মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড প্রভৃতির তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে। সকল দরিদ্র দেশেই শ্রমিকদের মজুরির হার খুব কম। বাংলাদেশেও তাই সাধারণভাবে শ্রমিকদের মজুরি কম।
- শ্রমিকদের অদক্ষতা: বাংলাদেশের অধিকাংশ শ্রমিক কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার অভাবে আধুনিক উৎপাদন পদ্ধতি, কলাকৌশল ও যন্ত্রপাতির সুষ্ঠু ব্যবহার সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে। ফলে তারা অদক্ষই থেকে যায়। আর অদক্ষ শ্রমিকদের মজুরি সংগত কারণেই কম হয়।
- শারীরিক দুর্বলতাঃ বাংলাদেশের অধিকাংশ শ্রমিক পর্যাপ্ত খাদ্য, স্বাস্থ্যকর বাসস্থান ও উন্নত চিকিৎসার অভাবে দুর্বল স্বাস্থ্যের অধিকারী হয়। এ ধরনের শ্রমিকরা বেশি উৎপাদন করতে পারে না। ফলে তারা মজুরি কম পায়।
- প্রতিকূল সামাজিক পরিবেশঃ এদেশের সামাজিক পরিবেশও শ্রমিকদের স্বল্প মজুরি হারের অন্যতম প্রধান কারণ।
- ত্রুটিপূর্ণ নিয়োগ পদ্ধতিঃ এদেশে শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক সময় দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেয়া হয়। দক্ষ শ্রমিকের পরিবর্তে অদক্ষ শ্রমিক কাজ পায়। ফলে উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়।
- কলকারখানায় প্রযুক্তিগত অনুন্নয়ন: বাংলাদেশের অধিকাংশ কলকারখানায় ব্যবহৃত প্রযুক্তি অত্যন্ত নিম্নমানের। কারখানায় স্থাপিত যন্ত্রপাতি পুরাতন ও সেকেলে। এ ধরনের কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের দ্বারা উৎপাদনশীলতা কখনই বেশি হতে পারে না। ফলে তারা নিম্ন মজুরিতেই আবদ্ধ থাকে।
- শক্তিশালী শ্রমিক সংঘের অভাবঃ যুক্তিসংগত মজুরির হার আদায়ের জন্য শক্তিশালী শ্রমিক সংঘ একান্ত প্রয়োজন। এদেশে শক্তিশালী ও উন্নত শ্রমিক সংঘ একরকম নেই বললেই চলে। এ কারণে মজুরির হার কম থাকলেও যৌথভাবে দরকষাকষি করে তা বাড়ানো যায় না। ফলে অত্যন্ত নিম্ন মজুরিতেও শ্রমিক কাজ করতে বাধ্য হয়।
- ত্রুটিপূর্ণ মজুরি কাঠামো: এদেশের শ্রমিকদের মজুরি কাঠামো অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ। রাষ্ট্রায়ত্ত কলকারখানায় মজুরির হার নির্ধারণের কিছু নিয়মকানুন থাকলেও বেসরকারি ক্ষেত্রে তা লক্ষণীয়ভাবে অনুপস্থিত। তারা কখনই বেশি মজুরিতে শ্রমিক নিয়োগের পক্ষপাতি না হওয়ায় মজুরি হার কমই থেকে যায়।
- কৃষি শ্রমিকদের আধিক্য: এদেশে কৃষিক্ষেত্রে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি শ্রমশক্তি রয়েছে। ফলে সেখানে রয়েছে ব্যাপক ছদ্মবেশী বেকারত্ব। ফলে বাড়তি কৃষি শ্রমিক কেবল মজুরি হার কমাতেই সাহায্য করে।
- শ্রমিক শোষণঃ এদেশে মালিকশ্রেণি সবসময়ই অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জনে আগ্রহী। ফলে উৎপাদনের সকল ক্ষেত্রে অপরিমেয় শ্রমিক শোষণ চলে। ফলে সামগ্রিকভাবে মজুরি হার কমই থেকে যায়। এসব কারণের জন্যই বাংলাদেশে শ্রমিকদের মজুরির হার কম। শ্রমিকরা যে মজুরি পায় তা দিয়ে কোনোমতে তারা টিকে থাকে; জীবনের সুখস্বাচ্ছন্দ্য ভোগ করতে পারে না।
আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। বাংলাদেশের স্বল্প মজুরি হারের কারণগুলো কী কী? এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url