বাজারের সংজ্ঞা দাও | সময় ও প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বাজারের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর
আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে বাজারের সংজ্ঞা দাও | সময় ও প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বাজারের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর নিয়ে আলোচনা করব।
বাজারের সংজ্ঞা দাও। সময় ও প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বাজারের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর। অথবা, বাজার কাকে বলে? বাজারের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর। অথবা, অর্থনীতিতে বাজার বলতে কী বুঝায়? বিভিন্ন প্রকার বাজারের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দাও।
বাজার: সাধারণ অর্থে বাজার বলতে সেই স্থানকে বুঝায়, যেখানে বিভিন্ন প্রকার দ্রব্যসামগ্রী কেনাবেচা হয়। যেমন- বাংলাবাজার, মৌলভীবাজার ইত্যাদি। কিন্তু অর্থনীতিতে বাজার শব্দটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়।
অর্থনীতিতে বাজার বলতে এক বা একাধিক দ্রব্যকে বুঝায় যার কেনাবেচা নিয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট দাম নির্ধারিত হয়। যেমন- চালের বাজার, মাছের বাজার, স্বর্ণের বাজার ইত্যাদি। অর্থনীতিবিদগণ প্রদত্ত বাজারের কয়েকটি প্রামাণ্য সংজ্ঞা নিম্নে তুলে ধরা হলো:-
- অধ্যাপক চ্যাপমান এর মতে, "বাজার বলতে কোনো স্থানকে বুঝায় না, বরং এক বা একাধিক দ্রব্যকে বুঝায়, যা ক্রেতা- বিক্রেতাদের মধ্যে প্রত্যক্ষ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কেনাবেচা হয়।
- ফরাসি অর্থনীতিবিদ কুর্নট-এর মতে, "অর্থনীতিবিদগণ বাজার শব্দ দ্বারা দ্রব্যসামগ্রী কেনাবেচার কোনো বিশেষ স্থানকে বুঝায় না, বরং যে-কোনো অঞ্চলের সমগ্রটিকে বুঝায়, যেখানে ক্রেতা বিক্রেতার পরস্পর অবাধ সংযোগের মাধ্যমে দ্রব্যাদির মূল্য সহজে ও দ্রুততার সাথে ঠিক হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
সুতরাং এসব বৈশিষ্ট্যের আলোকে বলা যায়, কোন দ্রব্য কেনাবেচা নিয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার ফলে একটি নির্দিষ্ট দামের উদ্ভব হলে অর্থনীতিতে তাকে বাজার বলা যায়। বাজারের শ্রেণিবিভাগ: বাজারের পরিধি, সময় ও প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বাজারকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। নিম্নে বিভিন্ন প্রকার বাজার সম্পর্কে সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা করা হলোঃ
১। পরিধি বা আয়তন অনুযায়ী বাজারের শ্রেণিবিভাগ: পরিধি বা আয়তনের দিক হতে বাজারকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা : (ক) স্থানীয় বাজার, (খ) জাতীয় বাজার এবং (গ) আন্তর্জাতিক বাজার।
(ক) স্থানীয় বাজার: যখন কোনো দ্রব্যের ক্রয়-বিক্রয় নির্দিষ্ট কোনো স্থান বা অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তখন তাকে স্থানীয় বাজার বলে। যেমন- মাছ, মাংস, দুধ, তরিতরকারি প্রভৃতির বাজার।
(খ) জাতীয় বাজার: যখন কোনো দ্রব্যের বাজার সারা দেশব্যাপী বিস্তৃত থাকে, তখন তাকে জাতীয় বাজার বলে। যেমন- দেশীয় শাড়ি, প্রসাধনী দ্রব্য, যন্ত্রপাতি প্রভৃতির বাজার।
(গ) আন্তর্জাতিক বাজার: যখন কোনো দ্রব্যের ক্রয়-বিক্রয় দেশের ভৌগোলিক সীমারেখা অতিক্রম করে বাইরের দেশগুলোতে সম্প্রসারিত হয় তখন তাকে আন্তর্জাতিক বাজার বলে। যেমন- স্বর্ণ, রৌপ্য, বস্ত্র, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি দ্রব্য বিভিন্ন দেশের মধ্যে ক্রয়-বিক্রয় হয় বলে এদের বাজার আন্তর্জাতিক।
২। সময়ের তারতম্য অনুসারে বাজারের শ্রেণিবিভাগ: সময়ের তারতম্য অনুসারে বাজারকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ (ক) অতি স্বল্পকালীন বাজার, (খ) স্বল্পকালীন বাজার (গ) দীর্ঘকালীন বাজার এবং (ঘ) অতি দীর্ঘকালীন বাজার।
(ক) অতি স্বল্পকালীন বাজার: যখন কোনো দ্রব্যের ক্রয়-বিক্রয় কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিনের মধ্যে অর্থাৎ অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হয়, তখন তাকে অতি স্বল্পকালীন বাজার বলে। যেমন- মাছ, দুধ, শাকসবজি ইত্যাদি পণ্যের ক্রয়-বিক্রয় কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিনের মধ্যে শেষ করতে হয়।
(খ) স্বল্পকালীন বাজার: যে বাজার ব্যবস্থায় দ্রব্যের চাহিদা বাড়লে যোগান কিছুটা বাড়ানো যায় এবং চাহিদা কমলে যোগানও কিছুটা কমানো যায়, তাকে স্বল্পকালীন বাজার বলে। স্বল্পকালীন সময়ে উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের আয়তন ও যন্ত্রপাতির কোনরূপ পরিবর্তন করা যায় না। তাই এ ধরনের বাজারের দ্রব্যের চাহিদা অনুযায়ী যোগান ব্যাপকভাবে হ্রাস-বৃদ্ধি করা সম্ভব হয় না।
(গ) দীর্ঘকালীন বাজার: যে বাজারে দ্রব্যের চাহিদা পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে যোগানের পরিবর্তন করা যায় তাকে দীর্ঘকালীন বাজার বলে। দীর্ঘকাল ধরে উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা, আয়তন এবং কাঠামোগত ও পদ্ধতিগত পরিবর্তন সাধন করে দ্রব্যের যোগান চাহিদা অনুযায়ী হ্রাস-বৃদ্ধি করা যায়। এ বাজারে দীর্ঘকালীন যোগান রেখা অধিক স্থিতিস্থাপক হয়।
(ঘ) অতি দীর্ঘকালীন বাজার: যে বাজারের স্থিতিকাল অতি দীর্ঘ এবং এই সময়ে দীর্ঘকালীন বাজারে যেসব পরিবর্তন সম্ভন সেগুলো ছাড়া আরও সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন ঘটে, তাকে অতি দীর্ঘকালীন বাজার বলা হয়। এ বাজারে মানুষের রুচি, অভ্যাস রীতিনীতি, জনসংখ্যা ইত্যাদির যথেষ্ট 'পরিবর্তনের দরুন দামের পরিবর্তন ঘটতে পারে। তাই অতি দীর্ঘকালীন বাজারে দ্রব্যে চাহিদা ও যোগান অধিক স্থিতিস্থাপক হয়।
৩। প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বাজারের শ্রেণিবিভাগ: প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বাজারকে প্রধানত দু'ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: (ক) পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার এবং (খ) অপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার।
(ক) পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার: যে বাজারে অসংখ্য ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে দ্রব্যমূল্য নির্ধারণে পরিপূর্ণ প্রতিযোগিতা বিরাজ করে, তাকে পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলে। পূর্ণ প্রতিযোগিতায় পণ্যের চাহিদা ও যোগানের মধ্যে পূর্ণসমন্বয় সাধিত হয়। ফলে এ বাজারে একই মূল্য বিরাজ করে।
(খ) অপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারঃ যে বাজারে কমসংখ্যক ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ ও ক্রয়-বিক্রয়ের পূর্ণ প্রতিযোগিতা থাকে না, তাকে অপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলে। এ ধরনের বাজারে একই দ্রব্য বিভিন্ন দামে ক্রয়-বিক্রয় হয়। অপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ (i) একচেটিয়া বাজার এবং (ii) একচেটিয়ামূলক প্রতিযোগিতার বাজার।
- একচেটিয়া বাজারঃ যে বাজারে একজন মাত্র বিক্রেতা থাকে, দ্রব্যের কোনো পরিবর্তক বা বিকল্প থাকে না এবং অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান ঐ বাজারে প্রবেশ করতে পারে না, তাকে একচেটিয়া বাজার বলে।
- একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজার: কোনো বাজারে যদি বহুসংখ্যক বিক্রেতা প্রায় সমজাতীয় দ্রব্য বিক্রয় করে, তবে তাকে একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলা হয়। একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারকে আবার দু'ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ (অ) দুই বিক্রেতার বাজার এবং (আ) কমসংখ্যক বিক্রেতার বাজার।
(অ) দুই বিক্রেতার বাজার: যে বাজারে দু'জন মাত্র বিক্রেতা উৎপাদনকারী দ্রব্যের যোগান সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে তাকে দুই বিক্রেতার বাজার বলে। এ ধরনের বাজারে দু'জন বিক্রেতাকে পরস্পরের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হয়।
(আ) কমসংখ্যক বিক্রেতার বাজার: যে বাজারে কমসংখ্যক উৎপাদনকারী বা বিক্রেতা থাকে, তাকে কমসংখ্যক বিক্রেতার বাজার বলা হয়। এ ধরনের বাজারে বিক্রেতার সংখ্যা দু'জন থেকে দশ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনা ও সংজ্ঞার আলোকে বলা যায় যে, বাজার হলো একটি নির্দিষ্ট স্থান যেখানে ক্রেতা ও বিক্রেতার মাধমে বিভিন্ন প্রকার দ্রব্যসামগ্রীর ক্রয়-বিক্রয় ঘটে। আর বাজারের এ প্রকারভেদ সময়, প্রতিযোগিতা এবং আয়তনের ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রকার হতে পারে।
আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। বাজারের সংজ্ঞা দাও | সময় ও প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বাজারের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url