পৌরনীতি ও সুশাসনের সম্পর্ক
আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে পৌরনীতি ও সুশাসনের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করব।
পৌরনীতি ও সুশাসনের সম্পর্ক (Relation between Civics and Good Governance) সামাজিক বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো পৌরনীতি। বর্তমানে সুশাসন প্রত্যয়টি এর সাথে যুক্ত হয়েছে। পৌরনীতি রাষ্ট্রের সাথে নাগরিকের সম্পর্ক-সংক্রান্ত বিজ্ঞান; অর্থাৎ পৌরনীতি নাগরিক জীবনের সাথে জড়িত সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। নাগরিকদের উত্তম জীবনের দিকনির্দেশনা দেয় পৌরনীতি।
অন্যদিকে সুশাসন একটি নতুন ধারণা। এটি নাগরিককে কল্যাণকর, গণতান্ত্রিক, ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থাসহ উত্তম জীবনের নিশ্চয়তাদানের একটি পন্থা। সুশাসন বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যা দায়িত্বশীলতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, আইনি কাঠামো এবং অংশগ্রহণের ওপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ সুশাসন পৌরনীতির একটি প্রায়োগিক অংশ। পৌরনীতির জ্ঞান সুশাসন নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।
সম্পর্ক: পৌরনীতি ও সুশাসনের মধ্যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। নিচে পৌরনীতি ও সুশাসনের মধ্যকার সম্পত্ত উপস্থাপন করা হলা-
- পৌরনীতিতে নাগরিক জীবনের সামগ্রিক দিক ফুটে ওঠে। আর সুশাসন পৌরনীতির একটি অংশ, যাতে নাগরিক শাসন সম্পর্কিত দিক তুলে ধরা হয়। এদিক থেকে পৌরনীতি ও সুশাসন একই সূত্রে গাঁথা বলা যায়।
- পৌরনীতির উদ্দেশ্য হলো নাগরিককে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা এবং উত্তম নাগরিক জীবনের দিকনির্দেশনা দেওয়া। আর সুশাসনের উদ্দেশ্য হলো শাসনপ্রক্রিয়াকে উন্নত ও কল্যাণমুখী করে গড়ে তোলা এবং নাগরিকদের উত্তম জীবন নিশ্চিত করা। সুতরাং বলা যায়, পৌরনীতি ও সুশাসনের উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন।
- পৌরনীতি ও সুশাসন একে অপরের সহযোগী। উভয়ে একই লক্ষ্যার্জনের জন্য পরিচালিত হয়। পৌরনীতি ও সুশাসন উভয়ের প্রধান লক্ষ্য হলো নাগরিক জীবন ও রাষ্ট্রের সর্বাধিক কল্যাণ ও উন্নয়ন।
- পৌরনীতি ও সুশাসন কতকগুলো অভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। নাগরিকের অধিকার, দায়িত্ব, কর্তব্য, রাষ্ট্র, সরকার, সংবিধান, আইন, আইনের শাসন, সাম্য, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, আমলাতন্ত্র ইত্যাদি পৌরনীতি ও সুশাসন উভয়েরই আলোচ্য বিষয়।
- পৌরনীতি ও সুশাসন একে অপরের উপর নির্ভরশীল। বলা যায়, একটি ছাড়া অন্যটি অপূর্ণ। কেননা সুশাসনের জন্য যেমন শৌরনীতির জ্ঞান অপরিহার্য, তেমনি পৌরনীতির অগাধ জ্ঞান নিয়েও সুশাসন নিশ্চিত করতে না পারলেও সেটি পূর্ণতা পায় না।
- সুশাসন ও পৌরনীতি একে অপরের দ্বারা প্রভাবিত হয়। কারণ পৌরনীতির জ্ঞান সুনাগরিক তৈরি করে। আর এ সুনাগরিক ব্যতীত সুশাসন সম্ভব নয়।
সুতারং পৌরনীতি ও সুশাসনের মধ্যে যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে, তা অস্বীকার করার কোনো অবকাশ নেই পার্থক্য: পৌরনীতি ও সুশাসনের মধ্যে অনেক সম্পর্ক থাকলেও কিছু বিষয়ে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। পার্থক্যগুলো নিম্নরূপ-
- পৌরনীতি নাগরিকতার সাথে সংশ্লিষ্ট সব বিষয়কে তার আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করে। অন্যদিকে সুশাসন শুধু নাগরিকের শাসনসংক্রান্ত বিষয়ে আলোকপাত করে। অর্থাৎ পৌরনীতির পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক ও বিস্তৃত। কিন্তু সে তুলনায় সুশাসনের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত সংকীর্ণ।
- পৌরনীতি একটি প্রাচীন বিষয়। কিন্তু সুশাসন প্রত্যয়টি খুব বেশি পুরাতন নয়। রাষ্ট্রীয় শাসনপ্রক্রিয়ার নিয়মনীতি অপপ্রয়োগের ফলে সাম্প্রতিককালে একটি নতুন সংযোজন হিসেবে সুশাসন প্রত্যয়টি পৌরনীতির সাথে যুক্ত হয়। অর্থাৎ বয়সের দিক থেকে পৌরনীতি প্রবীণ আর সুশাসন নবীন।
- পৌরনীতির আলোচনায় নাগরিকের রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন দিককে গুরুত্ব দেওয়া হয়। অপরদিকে, সুশাসনে নাগরিকের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উভয় দিকই গুরুত্ব দেওয়া হয়।
- পৌরনীতির তুলনায় সুশাসন অধিক আদর্শমূলক, কেননা সুশাসনে আদর্শ শাসনব্যবস্থার দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়।
- পৌরনীতি একটি বর্ণনামূলক বিষয়। এটি শিক্ষার্থীদের কেবল তাত্ত্বিক শিক্ষাদান করে। কিন্তু সুশাসন পৌরনীতির জানের বাস্তব প্রকাশ। কাজেই পৌরনীতিকে তাত্ত্বিক আর সুশাসনকে এর ব্যবহারিক বা প্রায়োগিক দিক হিসেবে উল্লেখ করা যায়।
উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, পৌরনীতি ও সুশাসনের মধ্যে কিছু পার্থক্যা থাকলেও এদের মধ্যকার পারস্পারিক সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও নিবিড়। পৌরনীতি ও সুশাসন একে অপরের পরিপূরক ও সহযোগী। তাই পৌরনীতি ও সুশাসনকে আলাদা করে চিন্তা করার কোনো উপায় নেই।
আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। পৌরনীতি ও সুশাসনের সম্পর্ক এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url