বাংলাদেশের অতীত পরিচয়
আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে বাংলাদেশের অতীত পরিচয় নিয়ে আলোচনা করব।
বাংলাদেশের অতীত পরিচয়, বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশের ইতিহাস বৈচিত্র্যময়। এ ইতিহাস অন্যায়, শোষণ, বঞ্চনা ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রামের ইতিহাস। এ ইতিহাস বাঙালির হাসি-কান্না ও দুঃখ-বেদনার ইতিহাস। বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার পূজারী। স্বাধীনতার জন্য তাদেরকে দিতে হয়েছে অনেক রক্ত; সহ্য করতে হয়েছে জুলুম ও নির্যাতন।
প্রাচীন যুগে বাঙালি বা বাংলা নামে কোনো অখণ্ড রাষ্ট্র বা জনপদ ছিল না। প্রাচীন বাংলাদেশের বিভিন্ন অংশে তখন রাঢ়, গৌড়, বরেন্দ্র, লক্ষণাবর্তী, পুণ্ড্রবর্ধন, বঙ্গ, সমতট, হরিকেল প্রভৃতি বিভিন্ন নামের জনপদ বা রাষ্ট্র গড়ে উঠেছিল। এর মধ্যে 'বঙ্গ' একটি অতি প্রাচীন জনপদ।
পণ্ডিত ও গবেষকদের মতে, 'বঙ্গ' থেকে 'বাংলা' নামের উৎপত্তি হয়েছে। সম্রাট আকবরের নবরত্ন সভার অমূল্য রত্ন ও। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আবুল ফজলের মতে, বাংলার প্রাচীন নাম ছিল 'বঙ্গ'। প্রাচীনকালে নদীমাতৃক বঙ্গদেশের রাজারা দশ গজ উঁচু ও চওড়া প্রকাণ্ড 'আল' বা বাঁধ তৈরি করতেন। বিঙ্গা শব্দের সাথে এই 'আল' শব্দ যুক্ত হয়ে এদেশের নাম হয়েছে। 'বাঙ্গালা' এবং এ জাতির নাম হয়েছে 'বাঙ্গাল'।
১২০৩ সালে দিল্লির সুলতান কুতুব উদ্দিন আইবেকের একজন ক্ষুদ্র সেনানায়ক ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি এক অতর্কিত আক্রমণে সেন বংশের রাজা লক্ষ্মণসেনকে পরাজিত করে রাজধানী নদীয়া দখল করেন।
এরপর ধীরে ধীরে বাংলাদেশ দিল্লির সুলতানদের অধীনে একটি 'সুবা' বা প্রদেশে পরিণত হয়। তবে পরবর্তীতে দিল্লির সুলতানদের অযোগ্যতা এবং দিল্লি সাম্রাজ্যের বিশৃঙ্খলতার সুযোগে ১৩৩৮-৪০ সালে ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ্ সোনারগাঁয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তাঁর শাসনামলে ১৩৪৫-৪৬ সালে বিখ্যাত পরিব্রাজক ইবনে বতুতা বাংলাদেশে এসেছিলেন।
ইবনে বতুতার মতে, সে সময়ে এদেশে সাত টাকায় ৮০ মণ চাল এবং সাড়ে তিন টাকায় ১৪ সের ঘি পাওয়া যেত। এ সময়ে বাংলাদেশে দ্রব্যসামগ্রীর প্রাচুর্যের ফলে জনজীবনে আর্থিক সচ্ছলতা এবং সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করছিল। হযরত শাহজালাল (রহ.) এ সময়েই সিলেটে ধর্ম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেছিলেন।
১৩৫২ সালে লক্ষণাবর্তী এবং পান্ডুয়ার স্বাধীন শাসক শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ্ সোনারগাঁ এবং পরে সমগ্র বাংলাদেশ দখল করে 'শাহ-ই-বাঙ্গালা' উপাধি ধারণ করেন। ইলিয়াস শাহী বংশ ১৪৮৭ সাল পর্যন্ত স্বাধীনভাবে বাংলাদেশ শাসন করেছিল।
এ বংশের শাসনামলে বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল এবং এ সময়ে বাংলা ভাষার উন্নতি সাধিত হয়। সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্ (১৪৯৩-১৫১৯) 'হোসেন শাহী' বংশের এবং বাংলার মুসলিম শাসকদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন। এ সময়ে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি আরো বিকশিত ও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে।
১৫৭৬ সালের ১২ জুলাই রাজমহলের যুদ্ধে দিল্লির পরাক্রমশালী মুঘল সম্রাট আকবরের নিকট বাংলাদেশের স্বাধীন কররানী আফগান বংশীয় সুলতান দাউদ খান কররানী পরাজিত হন। এর ফলে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে প্রত্যক্ষ মুঘল শাসনাধীনে চলে যায়।
তবে বাংলার বড় বড় জমিদাররা মুঘল শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যুদ্ধ করেছেন এবং নিজেদের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। এসব জমিদার 'বার ভুইয়া' নামে পরিচিত। বার ভূঁইয়ারা চূড়ান্তভাবে পরাজিত হন মুঘল সুবেদার ইসলাম খানের শাসনামলে (১৬০৮-১৬১৩ খ্রি.)। তিনি বার ভূঁইয়াদেরকে দমন করার উদ্দেশ্যে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে ১৬০৮ সালে বাংলার রাজধানী রাজমহল থেকে ঢাকায় স্থানান্তরিত করেন।
সম্রাট জাহাঙ্গীরের নামে ঢাকার নামকরণ করা হয় 'জাহাঙ্গীরনগর'। মুর্শিদ কুলী খান (প্রকৃত নাম মুহাম্মদ হাদী করতলব খান) ১৭০০ সালে বাংলার দেওয়ান নিযুক্ত হন। তিনি ১৭০২ সালে ঢাকা থেকে মকসুদাবাদে তাঁর বাসস্থান ও দেওয়ানি কার্যালয় স্থানান্তর করেন। মকসুদাবাদের পরবর্তীতে নামকরণ করা হয় মুর্শিদ কুলী খানের নামানুসারে 'মুর্শিদাবাদ'।
তিনি পরবর্তীতে ১৭১৭ সালে বাংলার সুবাদার নিযুক্ত হলে মুর্শিদাবাদ বাংলার রাজধানীর মর্যাদা লাভ করে। ধীরে ধীরে তিনি এবং তাঁর বংশধরগণ স্বাধীন শাসক বা নবাবের মতোই বাংলাদেশ শাসন করতে থাকেন। বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার সুবাদার তথা নবাব আলীবর্দী খানের মৃত্যুর পর বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার সুবাদার তথা নবাব হন সিরাজউদ্দৌলা। মুর্শিদ কুলী খান থেকে সিরাজউদ্দৌলা পর্যন্ত সকলেই মুঘল সম্রাটের অধীন বাংলার সুবাদার হলেও মূলত তাঁরা ছিলেন অনেকটা স্বাধীন।
আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। বাংলাদেশের অতীত পরিচয় এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url